চাঁপাইনবাবগঞ্জ করেসপন্ডেন্ট, রাজশাহী :
মাত্র ৬ মাস বয়সী নিয়তি বেঁকে বসে জেলার দলদলী ইউনিয়নের পঞ্চানন্দপুর গ্রামের লাল চাঁনের ছেলে সেলিমের ওপর । তখন বাবা-মায়ের বিয়ে বিচ্ছেদের পর তার ঠাঁই হয় বজরাটেক সবজার স্কুলপাড়া গ্রামের দরিদ্র নানার বাড়িতে। এখানে অযতœ আর অবহেলায় বেড়ে ওঠার শুরু তার। এমনকি প্রয়োজনীয় খাবারও সেলিমের ভাগ্যে জুটেনি।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সেলিম ধীরে ধীরে বাড়ির গন্ডি পেরিয়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ও হাট-বাজারে ঠিকানা খুঁজে নেয়। সে ক্ষুধা মিটাতে হাট-বাজারের কুকুরের স্তনে মুখ দিয়ে দুধ খেয়েছে। বেশ কয়েকটি কুকুর কোন ঝামেলা না করায় সে প্রতিনিয়ত দুধ খেতে থাকে। কুকুরও তার অন্য সন্তানের মত দুধ খাওয়াতে থাকে তাকে। এতে কেউ খুব মজা পায় কেউ বা অদ্ভূত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রহস্য খুঁজে কিন্তু দু’মুঠো খাবার দিতে কেউ এগিয়ে আসে না।
শনিবার সকালে উপজেলার মেডিকেল মোড়ে এ প্রতিবেদক দোকানে চা খেতে বসলে সেলিম দৌড়ে এসে ২টাকার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়। এ সময় উপস্থিত লোকজন জানায়, সেলিম কুকুরের দুধ খেয়ে বড় হয়েছে। বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলে সেলিম অকোপটে সত্যতা স্বীকার করে।
জানা গেছে, দরিদ্র নানা নিজ সংসার চালাতে গিয়ে হিমসিম খাওয়ায় সেলিমের খোঁজ রাখার সাধ্য হয়নি। আর আধা পাগল বাবা লালচাঁন ছেলে কোথায় কি করে সেটাও ভাবেনি কোনোদিন। মায়ের ভালোবাসাহীনতা, বাবার অনাদর আর নানার সংসারের অভাব অনটন বর্তমান ৮ বছর বয়সী সেলিমকে কঠিন পরীক্ষায় ঠেলে দেয়। এখন সেলিমের অবলম্বন এলাকার মা কুকুরগুলো।
সেলিম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, মানুষের কাছে হাত পেতে টাকা চাইলে কুকুরের দুধ খাই বলে অনেকেই তিরস্কার করে তাড়িয়ে দেয়। আমার কি কোথায়ও জায়গা হবে না?
দরিদ্র সেলিমের পাশে অবলম্বন হয়ে যদি কুকুর দাঁড়াতে পারে তবে বিশ্বের কোথাও কি সহৃদয় ব্যক্তি নেই তার পাশে দাঁড়ানোর?
কুকুরের দুধ খাওয়া শিশুটির কোনো শারীরিক বা মানুষিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে কি-না ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, পাগলা কুকুর জলাতংক জীবাণু বহন করে। সেসব কুকুরের দুধ খেলে সমস্যা হওয়ার কথা কিন্তু শিশুটি যেহেতু দীর্ঘদিন যাবত কুকুরের দুধ খেয়েও কোন ক্ষতি হয়নি ফলে ওইসব কুকুর জলাতংক বহনকারী ছিল না। তাই তার কোনো শারিরিক সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা নেই।
চাঁদপুর টাইমস/প্রতিনিধি/এএস/এমআরআর/২০১৫।