চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে দুই কিশোরী নিখোঁজ। তারপর দুই দিনের মাথায় ফিরে আসা এবং হাসপাতালে ভর্তি। এসময় তারা কোথায় ছিল কিংবা ধর্ষণের শিকার কিনা। তা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। তবে এই নিয়ে সরাসরি মুখ খুলছেন না স্বজনরা। কিশোরীদেরও গণমাধ্যমের কাছে কথা বলতে দিচ্ছেন না তারা। চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এই দুই কিশোরীকে নিয়ে ভাবিয়ে তুলেছে পুলিশকেও। আরও পড়ুন…অপহরণের ২ দিন পর উদ্ধার ফরিদগঞ্জের দুই কিশোরী
এদিকে, বুধবার সন্ধ্যায় এই দুই কিশোরীর একজনের মা বাদী হয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় তিনজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেছেন।
এরপরই রাতে অভিযান চালিয়ে কিশোরীদের বান্ধবী রুমা বেগমের মা আনোয়ারা বেগম (৪০) এবং প্রতিবেশি আবুল বাশার (৪৫) কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে এই মামলায় অপর আসামি রুমা বেগম গাঢাকা দেওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি বলে জানান, থানার ওসি আবদুর রকিব।
জানা গেছে, গত ১৬ আগস্ট ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ভাটিয়ালপুর গ্রাম থেকে নিখোঁজ হয় দুই কিশোরী। পরের দিন তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় নিখোঁজ বিষয় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। তারপর হঠাৎ করে গত মঙ্গলবার রাতে বাড়িতে ফিরে আসে এই দুই কিশোরী। এসময় অচেতন বা অসুস্থ হওয়ায় দ্রুত তাদেরকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়।
স্বজনদের অভিযোগ, কিশোরীদের এক বান্ধবী এবং তাদের মা নিজের বাড়িতে ডেকে নেয় তাদের। পরে কিশোরীদেরকে রুবেল ও ফয়সাল নামে দুই যুবকের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তবে ঘটনার বিচার দাবি করা হলেও এসময় কিশোরীরা কোথাও কি অবস্থায় ছিল। তা জানাতে চান না স্বজনরা। এই নিয়ে কিশোরীদেরকে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতে দিচ্ছেন না তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিশোরীদের একজন এলাকার একটি হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে অন্যজন মাদরাসায় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।
এদিকে, নিখোঁজ হওয়ার বিষয় গত ১৭ আগস্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন স্বজনরা। তবে পুলিশকে জানানোর পরে কিভাবে কিশোরীরা এক দিনের মাথায় ফিরে আসে তা গোপন করেন স্বজনরা। গণমাধ্যমকর্মীরা বারবার প্রশ্ন করেও তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য জানতে পারেননি। তবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ওই দুই কিশোরীর মধ্যে উদ্বেগ আর দুঃশ্চিন্তার ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের সঙ্গে কাউকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া যাদের হাত ধরে নিখোঁজ এই দুই কিশোরী সেই রুবেল এবং ফয়সাল নামে দুই যুবকের খোঁজ মিলছে না।
এদিকে, ফরিদগঞ্জ থানার ওসি আবদুর রকিব জানান, ফিরে আসার পর পুলিশকে না জানিয়ে ওই দুই কিশোরীকে হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনরা। ফলে এই নিয়ে ঘটনাটি রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। তাই তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা দিয়ে দফায় দফায় কিশোরীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ওসি আরো জানান, এর মধ্যে বুধবার সন্ধ্যায় কিশোরীদের একজনের মা বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। পরে এই মামলায় নাম রয়েছে এমন দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অন্যদিকে, চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. সুজাউদৌলা রুবেল বলেন, অপহরণ এবং ধর্ষণ করা হয়েছে। এমন কথা জানিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে কিশোরীদের। বুধবার দুপুরে কিশোরীদের ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে পরীক্ষার প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত এই বিষয় বিস্তারিত কোনো তথ্য জানানো ঠিক হবে না। বলেও জানান এই চিকিৎসক।
করেসপন্ডেট,২০ আগস্ট ২০২০