নারায়ণগঞ্জে অপহৃত সাতজনের লাশ উদ্ধারের আগের দিন ২৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে এয়ারটেল নম্বর থেকে শামীম ওসমানের গ্রামীণফোনের নম্বরে ফোন করেন নূর হোসেন।
গত বছর ২৩ মে প্রকাশিত সেই মোবাইল ফোনের কথোপকথন থেকে ধারণা করা হয়, নূর হোসেনকে ভারতে যাওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করেছেন নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
ফোন রেকর্ড থেকে জানা যায়, ফোনালাপের সময় নূর হোসেনের অবস্থান ছিল ধানমণ্ডির ৪ নম্বর সড়কের আশপাশে।
নূর হোসেনের সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়টি স্বীকার করেন শামীম ওসমান নিজেই। তবে তিনি দাবি করেন, নূর হোসেনকে পালিয়ে যেতে নয়, বরং আত্মসমর্পণের পরামর্শ দিয়েছিলেন।
অডিওটি প্রকাশের পরই সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে শামীম ওসমান দাবি করেন, টেলিফোনের আংশিক কথোপকথন প্রকাশ করে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকার, সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজন। এর পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে ছয়জন ও পরের দিন আরো একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
সাতজনকে হত্যার ঘটনায় অভিযোগ ওঠে নূর হোসেনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর ৪ মে নজরুলের শ্বশুর অভিযোগ করেন, র্যাবকে টাকা দিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছেন শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ নূর হোসেন।
এ ঘটনায় আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা ডা. বিজয় কুমার অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে এবং নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে ফতুল্লা থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন।
ওই মামলায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক তিন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, কমান্ডার এম এম রানা, মেজর আরিফসহ ১৮ র্যাব সদস্য এবং নূর হোসেনের সাত সহযোগী এখন কারাগারে আছেন। পলাতক আছেন আরো নয় আসামি।
নূর হোসেন ও শামীম ওসমানের কথোপকথন :
শামীম : হ্যালো।
নূর হোসেন : ভাই, স্লামালাইকুম ভাই।
শামীম : কে?
নূর হোসেন : ভাই ভাই ভাই, আমার বহুত প্রবলেম ভাই। ভাই আমি লেখাপড়া করি নাই, আমার অনেক ভুল আছে ভাই। ভাই, আমি লেখাপড়া করি নাই, আমার অনেক ভুল আছে ভাই। আপনে আমার বাপ লাগেন ভাই। আপনেরে আমি অনেক ভালোবাসি ভাই।
শামীম : খবরটা পৌঁছে দিলাম না, পাইছিলা?
নূর হোসেন : হ, আপনেরে আমি অনেক ভালোবাসি ভাই। আমার পোলাডা ছোট, মইরা যাইব ভাই। আমার কান্দে বন্দুক ভাই।
শামীম : সময় দাও একটু…
নূর হোসেন : ভাই, আপনি আমার বাপ লাগেন ভাই। ভাই, জীবনটা আপনেরে আমি দিয়া দিমু ভাই। আপনারে আমি অনেক ভালোবাসি ভাই।
শামীম : আরে তুমি এত চিন্তা করো না, সময় দাও।
নূর হোসেন : ভাই, আমি লেহাপড়া করি নাই, আমার অনেক ভুল আছে ভাই। আমারে মাফ করেন ভাই।
শামীম : তুমি এত চিন্তা করো না, সময় দাও। আর তুমি একটু গৌরদা’র লগে দেখা করে আসো না…
নূর হোসেন : ভাই, আমারে দিল্লি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন?
শামীম : এখনো কোনো সমস্যা হবে না। কোনো জায়গার ইয়া নাই? সিল নাই?
নূর হোসেন : না না, আছে আছে ই আছে। সিল আছে, কিন্তু যামু ক্যামনে সব জায়গায় বলে অ্যালার্ট?
শামীম : না, কিচ্ছু নেই। হ্যাঁ? মনে হয় না।
নূর হোসেন : ভাই, তাইলে একটু খবর নেন না, আমি কালকে ফোন দিই।
শামীম : আগাইতে থাকো।
নূর হোসেন : ভাই, আমি লেখাপড়া করি নাই। ভাই, আমার অনেক ভুল আছে।
শামীম : তুমি যদি ওই জায়গাটাতে যাও…
নূর হোসেন : ভাই, আমি বাসে…মাইক্রোবাসে উঠব।
শামীম : কিচ্ছু হবে না, চিন্তা করো না, তুমি অপরাধ করো নাই…
নূর হোসেন : ভাই…
শামীম : তুমি চিন্তা করো না।
নূর হোসেন : আমার জীবনের কোনো গতি হইব না ভাই? আমার মনে অনেক জোর ভাই।
শামীম : আমি জানি, আমি জানি। ঘটনাটা অন্য ঘটাইয়া এক ঢিলে দুই পাখি মারছে।
নূর হোসেন : ভাই, আমার অনেক ভুল আছে, আপনে আমারে মাফ করেন ভাই।
শামীম : ঠিক আছে, তুমি ইয়ে করো। ও ও ও…আমার একটা ফোন নম্বর দিমু যোগাযোগ করুম, ঠিক আছে? এই নম্বরটা নতুন?
নূর হোসেন : জি ভাই।
শামীম : আচ্ছা। রাখলাম।
নূর হোসেন : জি ভাই, স্লামাইকুম ভাই।
এই ফোনালাপের আধা ঘণ্টা পর থেকে বন্ধ পাওয়া যায় নূর হোসেনের ফোন নম্বরটি।
(ফোন রেকর্ডটি শুনুন)
নিউজ ডেস্ক ||আপডেট: ০৩:০৯ পিএম, ১৩ নভেম্বর ২০১৫, শুক্রবার
ডিএইচ/ এমআরআর