চাঁদপুর

চাঁদপুর প্রেসক্লাব কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক ও গুণিজন সংবর্ধনা

অত্যন্ত উৎসবমূখর এবং আনন্দঘন আয়োজনের মধ্যদিয়ে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ২০১৮ সনের কার্যক নির্বাহী কমিটির অভিষেক ও গুণিজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এ উপলক্ষে শনিবার (২৮ এপ্রিল) চাঁদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সন্ধ্যা ৬টায় থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অভিষেক, গুণিজন সংবর্ধনা, আলোচনা এবং মনমুগ্ধকর জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।

এতে জেলার বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনীতিক, শিক্ষক, সুশিল সমাজ, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামজিক পেশা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং প্রেসক্লাবের সদস্যদের অংশ গ্রহনে অনুষ্ঠানটি মনোরম ও আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

এছাড়া আয়োজনকে ঘিরে প্রেসক্লাব মিলনায়তন সাংবাদিকদের মিলন মেলায় পরিনত হয়। পবিত্র কোরান থেকে তেলওয়াত ও গীতা পাঠের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধান অতিথি, সংবর্ধিত অতিথি, বিশেষ অতিথিসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেয়া হয়।

এরপরে প্রথম পর্বে ২০১৮ সনের কার্যক নির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দকে ক্রেস্ট ও ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিষিক্ত করা হয়। দ্বিতীয় পর্বে গুণিজনদের সংবর্ধনা, তৃতীয় পর্বে আলোচনা এবং সব শেষে জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।

আয়েজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাকের সভাপতি ও চাঁদপুরের কৃতিজন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান। সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম, পাওয়ার সেলের ডিজি মোহাম্মদ সোসেন, বিশিষ্ট শিল্পপতি মো. জয়নাল আবেদিন মজুমদার (সিআইপি)।

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রেসক্লাবের উন্নয়ন কমিটির আহŸায়ক আলহাজ্ব ওচমান গণি পাটওয়ারী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মাসুদ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।

চাঁদপুর প্রেসক্লবের সাবেক সভাপতি শাহমোহাম্মদ মাকসুদুল আলম ও বিএম হান্নানের পরিচালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন খান, এনএসাই এর ডিজি ফারুক হোসেন, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. জহিরুল ইসলাম, চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মনোহর আলী, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসানুজ্জামান মন্টু, অধ্যাপক জালাল চৌধুরী, অধ্যাপক মো. দেলোয়ার হোসেন। এছাড়াও অভিষিক্ত নতুন পরিষদের নেতৃবৃন্দের অনুভূতি প্রকাশের সংক্ষিপ্ত পর্বে সভাপতিত্ব করেন সদ্য বিদায় সাবেক সভাপতি শরীফ চৌধুরী। অনুভূতি প্রকাশ করেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন মিলন, সোহেল রুশদী, জিএম শাহীন, বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ল²ণ চন্দ্র সূত্রধর, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল রুবেল। সবশেষে প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী আমিন্ত্রত সকল অতিথি এবং উপস্থিত সকল পর্যায়ের সাংবাদিকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, আজ আমার জন্য এবটি বিশেষ সৌভাগ্যের দিন। কারণ এ নিয়ে আমি চাঁদপুর প্রেসক্লাবে পক্ষ থেকে তৃতীয়বারের মনো সম্মানিত হলাম। দুই বার আমাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে আর এবছর আমি প্রধান অতিথি হয়ে এসেছি। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের কল্যানে অনেক কাজ করছেন। তিনি চাঁদপুর প্রেসক্লাবের জন্যই শুধু নয় আমাদের জাতীয় প্রেসক্লাবকে ৩১ তলা বিশিষ্ট ভবন করে দিচ্ছেন। ইতিমধ্যেই তার কাজ শুরু হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, গোটা বাংলাদেশের মধ্যে চাঁদপুর হচ্ছে একটি সুনামধন্য জেলা। এই জেলার বহু কৃতিসন্তান দেশের উচ্চতর স্থানে কর্মরত রয়েছেন। তাই আমি মনে করি এই জেলায় কোনো ভূমিদস্যু বা অন্যায়কারি থাকতে পারে না। এখান থেকে নিয়মিত অনেকগুলো দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এটা আনন্দের বিষয়। তবে সাংবাদিক ভাইদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে আপনরা আরো বেশী সচেতন হয়ে সংবাদ পরিবেশন কবেন। ইদানিং প্রযুক্তির অপব্যবহার করে কিছু অনলাইন মিডিয়া সৃষ্টি হয়েছে। যারা ভূল তথ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে।

সংবর্ধিত অতিরি বক্তব্যে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম বলেন, চাঁদপুর প্রেসক্লাব আজকে আমাদের যে সম্মান দিয়ে তাতে আমি চাঁদপুরের সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞ। চাঁদপুর আমার গর্ব। এখানে এসে আমার অনেক ভালো লাগছে কারণ অনেক পুরোণো বন্ধুদের দেখতে পেয়েছি। তিনি আরো বলেন, প্রাকৃতিক সোন্দর্যে ভরা চাঁদপুর একটি সুন্দর জেলা। অথচ চাঁদপুর দখল হয়ে যাচ্ছে। এখানকার শহরের বুক চিরে বয়ে চলা লেখটি দখল হয়ে গেছে যা সত্যিই কষ্টের বিষয়। আমি মনে করি এখন সময় আছে চাঁদপুরকে দখল থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

পাওয়ার সেলের ডিজি মোহাম্মদ সোসেন বলেন, চাঁদপুর প্রেসক্লাবকে আমার নিজের ঘর মনে করি। তাই এখানে আসতে পারলে আমার নিজের কাছে খুব ভালো লাগে। তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের দর্পন। এই দর্পনে সমাজের সকল অসঙ্গতি এবং সুন্দরগুলো মানুষ দেখতে পায়। তাদের লেখনির মাধ্যমে সমাজ রাষ্ট্র উপকৃত হয়।

বিশিষ্ট শিল্পপতি মো. জয়নাল আবেদিন মজুমদার (সিআইপি) বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ী। আমি রাজনীতি করি না, তবে সমাজনীতি করি। ব্যবসায়র পাশাপাশি সমাজিক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখার চেষ্ট করছি। চাঁদপুর প্রেসক্লাব এর আগেও আমাকে সংবর্ধিত করেছে। এজন্য আমি চাঁদপুর প্রেসক্লাবের প্রতি আমৃত্যু চিরকৃতজ্ঞ।

তিনি আরো বলেন, চাঁদপুরকে নিয়ে আমি গর্ব করি। আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদপুরের বেশী সংখ্যক লোক কাজ করে। প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুরে দুটি শিল্পনগরী করার আস্বাস দিয়েছেন। এটি হলে আমিও এখানে ইন্ড্রাষ্টি গড়ে তুলবো। আমাদের নতুন প্রজন্মকে শিক্ষিত করে তুলার পাশাপাশি তাদের সু-শিক্ষায় গড়ে তুলতে হবে।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রেসক্লাবের উন্নয়ন কমিটির আহŸায়ক আলহাজ্ব ওচমান গণি পাটওয়ারী, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সকল অর্জিত আন্দোলন সংগ্রামে সাংবাদিকদের ভূমিকা রয়েছে। এজন্য আমি সাংবাদিকদের সম্মানের সাথে দেখি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের একটি স্বাধীন মানচিত্র উপহার দিয়েছেন। বাঙালী জাতি নির্যাতিত নিপিড়িত ছিলো। জাতির পিতা আমাদের বিশ্ব দরবারে সন্মান দিয়েছে। তাই জাতির পিতা এবং সকল শহীদদের প্রতি আমাদের অনেক ঋণ রয়েছে। এই ঋন আমাদের শোধ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুর প্রেসক্লাবের উন্নয়নে এককোটি ১৯ লক্ষ টাকা সহযোগিতা করেছেন। এজন্য চাঁদপুরের সংবাদিক মহল প্রধানমন্ত্রীর কাঝে আমৃত্যু চির কৃতজ্ঞ। জননেত্রী শেখ হাসিসনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের ব্যপক উন্নয়ন হয়েছে। এখন শুধুমাত্র আমাদের প্রয়োজন দেশপ্রেম। আমাদের মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রত হলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা হবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মাসুদ হোসেন, চাঁদপুরে সাংবাদিকদের মাঝে যে ভাতৃত্বপূর্ণ সংপর্ক রয়েছে তার দেশের অন্য জেলায় বিরল। এখানকার সাংবাদিকরা অনেক সৎ এব পরিশ্রমি। আমি বিশ্বাস করি আগামীতে এই সম্পর্ক অটুট থাকবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, সাংবাদিকরা হলো জাতির বিবেক। তাদের লেখনির মাধ্যমে সমাজের সকল সুন্দর ফুটে উঠে। চাঁদপুরের সাংবাদিকরা সততার ও দায়িত্বশীল। এখানের একে অপরের সাথে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। চাঁদপুর প্রেসক্লাকের এই আয়োজন দেখে আমি অনেক আন্দদিত হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী বলেন, আজকের এই আয়োজনে যারা উপস্থিত হয়েছে আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমাদের সাধারণ সম্পাদক অসুস্থ থাকায় অনেক দেরী করে এই আয়োজনটি করতে হয়েছে এজন্য আমি সকলের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।

এ সময় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর বিএমএর সাবেক সভাপতি ডাঃ হারুনুর রশিদ সাগর, জেলা তথ্য অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. বেলায়েত হোসেন, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা কাউছার আহমেদ, জেলা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তাক হায়দার চৌধুরী, চাঁদপুর পৌরসভার সচিব আবুল কালাম ভূইয়া, ড্যাফোডিল স্কুলের অধ্যক্ষ নূর হোসেন, মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, মোশারফ হোসেন,

প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ ও সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সভাপতি শহীদ পাটওয়ারী, বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, রহিম বাদশা, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন লিটন, মোরশেদ আলম রোকন ও আলম পলাশ, লাইব্রেরী সম্পাদক হাসান মাহমুদ, আপ্যায়ন ও বিনোদন সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, কার্যকরি কমিটির সদস্য এড. মো. শাহজাহান মিয়া ও ফারুক আহম্মদ।

সাধারণ সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুনাওয়ার কানন, নেয়ামত হোসেন, কে এম সালাউদ্দিন, শাহ্ আলম মল্লিক, মো. মাসুদ আলম, আব্দুস সালাম আজাদ জুয়েল। এছাড়ও চাঁদপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আল-ইমরান শোভ, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌসসক অন্যান্য নেতৃবৃন্দ-সদস্য এবং নব-নির্বাচিত চাঁদপুর ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েসনের নেতৃবৃন্দ-সদসরা এবং প্রেসক্লাব নেতাদের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম

Share