মৎস্য ও প্রাণী-সম্পদ মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রহমান বলেছন, কারেন্ট জাল উৎপাদন হয় বলেই জেলেরা তা ব্যবহারের সুযোগ পায়। তাই কারেন্ট জালের উৎসমূল নির্মুল করতে হবে। কারেন্ট জাল উৎপাদনের খোয়ারগুলোকে ভেঙ্গে চুড়ে চুরমার করে দিতে হবে।
১১মার্চ সোমবার দুপুরে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২৪ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী আরো বলেন, চাঁদপুরে আজ জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের এই অনুষ্ঠানে কারেন্ট জাল উৎপাদন বন্ধের দাবী উঠেছে। কোন না কোন ছিদ্রকে কাজে লাগিয়ে আমাদের দেশে ইলিশ সম্পদ বিনষ্টকারী কারেন্ট জাল উৎপাদন হচ্ছে। তাই ইলিশ সম্পদ রক্ষায় সবার আগে কারেন্ট জালের খোয়ারগুলোকে ভেঙ্গে চুড়ে চুরমার করে দিতে হবে। আর প্রশাসনকে উদযোগ নিতে হবে। আমরা যদি কারেন্ট জালের উৎসমূল যদি বন্ধ করতে পারি, তবে জেলেদের আর এই জাল ব্যবহারের কোন ছিদ্র থাকবে না। যেই ছিদ্র দিয়ে জেলেরা কানেন্ট জাল ব্যবহার করে জাটকা ইলি নিধন করছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রহমান এমপি বলেন, জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের এই অনুষ্ঠান মুলত একটি সচেতনতামূলক সামাজিক কেম্পেই। যার মূল লক্ষ্যই হলে মানুষকে জাগ্রত করা। শুধুমাত্র প্রশাসন দিয়ে জাটকা নিধন বন্ধ করা যাবে না। মানুষকে জাগ্রত করতে হবে। এটি যদি আমরা করতে পারি, তাহলে এই ভরাযৌবনের চাঁদপুর আবারো ইলিশের যৌবনে ভরে যাবে। যা স্মার্ট- বাংলাদেশ গড়বার বড় ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
মন্ত্রী বলেন, জাটকা ইলিশ সংরক্ষণ এবং ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিগত বছরের ন্যায় এ বছরও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে মৎস্য অধিদপ্তর ১১ মার্চ হতে ১৭ মার্চ পর্যন্ত “জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২৪” উদ্যাপনের লক্ষ্যে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ইলিশ হলো মাছের রাজা, জাটকা ধরলে হবে সাজা’।
ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে জাটকা রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সর্বসাধারণকে বিশেষ করে জেলে, মৎস্যজীবী সম্প্রদায় ও ইলিশের সাথে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী, আড়তদারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করা এবং ব্যাপক প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টিকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে বলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন।
মন্ত্রী আরো বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর ইলিশসহ সকল মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও মৎস্য সম্পদের সাথে জড়িত মৎস্য চাষী, জেলে/মৎস্যজীবী জীবনমান উন্নয়নে বাস্তবভিত্তিক ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যার ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৭১ লক্ষ মেট্রিকটনে যা ২০০২-০৩ অর্থবছরে ছিল মাত্র ১.৯৯ লক্ষ মে.টন।
দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের ১২ ভাগ ইলিশ থেকে আসে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ মৎস্য প্রজাতির উৎপাদন বৃদ্ধি ও এ সম্পদের টেকসই উন্নয়নে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিই নয়, জনবান্ধব এ সরকার জেলে ও মৎস্যজীবীদের উন্নয়নেও বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে মৎস্য অধিদপ্তরসহ মাঠ প্রশাসন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, নৌপুলিশ, র্যাব এবং বিজিবি ‘ জাটকা সংরক্ষণ অভিযান’ সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। প্রয়োজনীয় লোকবল, নৌযানসহ প্রয়োজনীয় রশদের স্বল্পতা এবং অভিযানে নানাবিধ প্রতিকূলতা সত্ত্বেও প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়ন করছেন।
মন্ত্রী বলেন, জাটকা ও মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালে জেলেদের জীবিকা নির্বাহের জন্য ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের মাধ্যমে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য উপকরণ হিসেবে বকনা বাছুর(গরু), ছাগল, ভ্যান বিতরণসহ ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। প্রকল্প মেয়াদে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও উপকূল-মোহনা তীরবর্তী ৩১৭০০টি সুফলভোগী জেলে পরিবারকে বিকল্প কর্মসংস্থানে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণসহ উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে।
ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হলে জাটকা নিবিড়ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। জাটকা আহরণ বন্ধে অভিযান জোরদারকরণের পাশাপাশি দেশের সকলকে জাটকা রক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে প্রচার প্রচারণা অব্যাহত রাখতে হবে। মা ইলিশ সংরক্ষণ ও জাটকা রক্ষার মাধ্যমে ইলিশের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে এবং ইলিশ সাধারণ মানুষের জন্য আরো সহজলভ্য হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী বলেন, ইলিশ আমাদের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, আর এই সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের। দেশের সকল মানুষের হাতের নাগালে ইলিশ মাছ যেমন পৌছে দিতে চাই তেমনি দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদাশিক মুদ্রা অর্জন করতে চাই।
এ লক্ষ্যে মা ইলিশ রক্ষা ও জাটকা সংরক্ষণে আপামর জনগণকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধকরণের জন্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া যে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করছেন তার জন্য তিনি গণমাধ্যমকর্মী দের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
মৎস্য ও প্রাণী-সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব মোহাৎ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, মৎস্য ও প্রাণী-সম্পদ মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শ.ম রেজাউল করিম এমপি, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, চাঁদপুরের পুলিশ সুপা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, মৎস্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক সৈয়দ মো. আলমগীর প্রমুখ।
প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ১১ মার্চ ২০২৪