বলিউডের শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রী কারিনা কাপুর ও সাইফ দম্পতির সদ্য জন্ম নেয়া সন্তানের নাম রেখেছেন তৈমুর।
তৈমুর লং, পৃথিবীর ইতিহাস যারা জানেন তাদের কাছে এই নামটি শোনা মাত্রই মনে হতে থাকে পৃথিবীকে ভয়ঙ্কর করে তোলা এক স্বৈর শাসকের অবয়ব। যে কিনা রাজত্বের জন্য অবর্ণনীয় ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠেছিল। হ্যাঁ, তুরস্কের সেই মুঘল শাসক তৈমুর লংয়ের কথাই এখানে বলা হচ্ছে।
যিনি ছিলেন একজন মিলিটারি জিনিয়াস। বুক ভরা সাহস আর পেশী শক্তিই তাকে বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালী শাসকে পরিণত করেছিল। তৈমুরের সৈন্যবাহিনীও ছিল বিশ্বের ত্রাস। যে স্থানই জয় করত সেখানেই ধ্বংসযজ্ঞের প্রলয় তুলত। এই সৈন্যদলের হাতে ১৭ মিলিয়ন মানুষ নিহত হয়।
যা ছিল সেই সময়ের পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকরা পাঁচ ভাগ। হিটলারের আগমনের পূর্বে তৈমুরই ছিল বিশ্বের সবচাইতে বড় ত্রাস। ১৪ শতকের সেই কুখ্যাত নামটি ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার হঠাৎ করেই ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠলো। আলোচনার বিষয় বস্তু হয়ে উঠলো। কিন্তু কেনো?
মূল ঘটনার সাথে নির্মম ইতিহাসের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্মম অংশটাই ভারতীয়দের কাছে ভেসে উঠলো মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) সকাল থেকে।
কারণ, এদিন সকালে ছেলে সন্তানের জন্ম দিলেন বলিউডের শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রী কারিনা কাপুর। তৈমুর লংয়ের সাথে কারিনা-সাইফের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও বিপত্তি ঘটে ছেলের নামটি জনসম্মুখে ঘোষণার পর। কারণ, স্বামী সাইফ আলী খান ও কারিনা কাপুর ছেলের নাম রাখেন ‘তৈমুর আলী খান’। যা মেনে নিতে পারছে না ভারতীয়দের একটা অংশ।
ভোরে ছেলের জন্মের পরেই গণমাধ্যমে নিজের ছেলের নাম ঘোষণা দেন সাইফ-কারিনা। আর এরপরই সোশাল সাইট ফেসবুক ও টুইটারে তাদের ছেলের নাম নিয়ে উঠে নিন্দার ঝড়। বেশিরভাগ নিন্দুকেরা তৈমুর নামটির সমালোচনায় মুখর। তাদের দাবী, সাইফ-কারিনার কোনোভাবেই ছেলের নাম তৈমুর রাখা ঠিক হয়নি।
কারণ তৈমুর ছিলেন চৌদ্দ শতকে ভারতীয়দের জন্য ত্রাস। সেসময় সাম্রাজ্যবাদের কড়াল থাবায় ভারতীয়রাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নির্মমভাবে ভারত দখল করে তৈমুর ও তার সৈন্যরা। অসংখ্য ভারতীয়দের হত্যা, নারী ধর্ষণও করে। আর যে লোকটি এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে সেই লোকটির নামে কোনো ভারতীয় নাম রাখতে পারে তাকে বিস্ময় বলছেন অনেকে।
কারিনা-সাইফ তাদের ছেলের নাম ‘তৈমুর’ রাখার ঘোষণার পর পরই তাই ফেসবুক ও টুইটারে শুরু হয় নাম নিয়ে তর্ক বিতর্ক। এরইমধ্যে ভারতীয় কলামিস্ট তারেক ফাতাহ তার ফেসবুকে লিখেন, আমি স্তম্ভিত। তৈমুরের অতীত ইতিহাস এমন নোংরা থাকার পরও কোনো ভারতীয় তার নামে নাম রাখতে পারে এটা বিশ্বাস হচ্ছে না।
ভারত দখলের সময় যে তৈমুর হিন্দু মুসলমান হত্যা করে পুরো দেশকে শ্মশান বানিয়ে ছিল সেই তৈমুরের নামে কিভাবে নাম রাখা সম্ভব?
সাইফ আলী তার ছেলে নাম রাখলো তৈমুর আলী খান, যে কিনা একজন নিষ্ঠুর শাসক ছিলেন। তাহলে তারা কেনো ‘আল্লাহু আকবর’ রাখলো না, যা শুনলে মানুষ আরো বেশি আতঙ্ক বোধ করতো?-এভাবে স্যাটায়ার করেও মন্তব্য করেছেন এক টুইটকারী।
সোনম মহাজন নামের একজন লিখেন, সাইফ আলীর ছেলে আর একটি পাকিস্তানি মিসাইলের একই নাম। তৈমুর। দুটোই একজন গণহত্যাকারীর নামে অনুপ্রাণিত। যা হিন্দুদের হত্যা করতে উদ্ধুত!
সাইফ-কারিনার ছেলের নাম তৈমুর বলে মেনে নিতে নারাজ সৈয়দ তরিক পিরজাদা নামের একজন সাধারণ ব্যক্তি। তিনি টুইটে সাইফ-কারিনার ছেলের নাম তৈমুর রাখাকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেন।
ঋষি ব্যানার্জি নামের একজন অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে বলেন, সত্যিই কি নিজের ছেলের নাম ‘তৈমুর’ রেখেছেন সাইফ-কারিনা? যে কিনা শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে পুরো এশিয়াতে ১৭ মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করেছে?
অন্যদিকে মঙ্গলবার ভোরে হাসপাতালে ছেলে সন্তান জন্মের পর একটি বিবৃতিতে সাইফ আলী ও কারিনা কাপুর তাদের ছেলে সন্তানটির নাম তৈমুর আলী খান পতৌদি বলে জানিয়েছিলেন। তৈমুর আলী খান কারিনা কাপুরের প্রথম সন্তান হলেও সাইফ আলীর এটা তৃতীয় সন্তান। এর আগে প্রাক্তন স্ত্রী অমৃতা সিংয়ের গর্ভে জন্ম নেয় ইব্রাহিম ও সারাহ নামের দুই পুত্র কন্যা।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সম ০৫: ০০ এএম, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ