জাতীয়

‘কারা সে সময় গ্রেপ্তার করিয়েছিল হিসাব নেওয়া হবে’

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যারা ব্যর্থ করতে চায়, তারা যেন আর কোনো দিন ক্ষমতায় আসতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যাঁরা তাঁকে গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন, তাঁদের হিসাব-নিকাশ পরে নেওয়া হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের আলোচনাসভায় দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই স্বাধীনতা লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে। এই স্বাধীনতা যেন কোনো দিন ব্যর্থ হতে না পারে। আর যারা এই স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করতে চায়, তারা যেন কোনো দিন এ দেশের ক্ষমতায় আসতে না পারে। তার জন্য দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে।’ তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, ‘এই দেশ জঙ্গিদের হবে না, এই দেশ স্বাধীনতাবিরোধীদের হবে না, এই দেশ যুদ্ধাপরাধীদের হবে না। এই দেশ হবে মুক্তিযোদ্ধাদের আদর্শের দেশ।’

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখলাম ২০০১ সালের নির্বাচনে বিরাট চক্রান্ত হলো, ষড়যন্ত্র হলো। আওয়ামী লীগ ভোট বেশি পেয়েও ক্ষমতায় আসতে পারে নাই। তারপর যে জুলুম-অত্যাচার, গ্রামের পর গ্রামে যে নির্যাতন, মা-বোনদের ওপর পাক হানাদার বাহিনী যেভাবে নির্যাতন করত, ঠিক ওইভাবে আওয়ামী লীগের ওপর এই বিএনপি-জামায়াত জোট নির্যাতন শুরু করে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হতো ওরা যেন পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই চলেছে। ভোট দেওয়ার অপরাধে ছয় বছরের শিশুকে পর্যন্ত গণধর্ষণ করিয়েছে তারা। কত মা-বোন আমার কাছে এসে কেঁদে গেছে। এইভাবে ছয়টা বছর বিএনপি-জামায়াত জোট এ দেশে মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে। এ ছাড়া পাঁচ-পাঁচবার দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছে। বাংলা ভাই সৃষ্টি। একসঙ্গে পাঁচ শ জায়গায় বোমা হামলা। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা। বাংলাদেশকে একটা সন্ত্রাসের দেশ বানিয়েছিল। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা, স্বাধীনতার চেতনা নস্যাৎ করা, ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা করেছে।’

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘটনা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরপর আসল ইমার্জেন্সি সরকার। সেখানেও সবার আগে আমাকে গ্রেপ্তার করা হলো। আমি তো ক্ষমতায়ও ছিলাম না। এবং কারা করিয়েছে, সেটা অন্তত এখন আমরা জানি। ওই হিসাব-নিকাশ পরে নেব আমরা।’

তিনি বলেন, ‘২০০৮-এর নির্বাচন, ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হলো। সেখানেও ঠেকানোর জন্য কম চেষ্টা করা হয়নি। এই সরকার গঠন করেই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলব। সারা বাংলাদেশে যেখানে গণকবর, সেগুলো খুঁজে খুঁজে বের করা, মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা দেওয়া, তাদের ছেলে-মেয়ে, নাতিপুতি পর্যন্ত যাতে চাকরি পায় সে জন্য কোটার ব্যবস্থা করে দেওয়া, তাদের সম্মান দেওয়ার ব্যবস্থা করি। কারণ এই মুক্তিযোদ্ধাদের কারণেই তো আমরা দেশ স্বাধীন করতে পেরেছি। তাদের যে আত্মত্যাগ তা আমরা ভুলে যাব কিভাবে?’

তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, সবার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ছড়িয়ে দেওয়ার। তরুণ প্রজন্ম ধীরে ধীরে উজ্জীবিত হচ্ছে, তারা সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে। অথচ ইতিহাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তারা (বিএনপি-জামায়াত) জানে না, ইতিহাসকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। স্বাধীনতার সুফল আমরা বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেব।’ জনগণের কল্যাণে রাজনীতিবিদদের কাজ করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘অর্থসম্পদ চিরদিন থাকে না। অর্থসম্পদ কেউ কবরে নিয়েও যেতে পারে না। মানুষ সম্পদের জন্য মারামারি-কাটাকাটি করে, মরে গেলে সবই পড়ে থাকে, ফেলে রেখেই কবরে যেতে হয়। মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া, একজন রাজনীতিবিদের সেটাই কর্তব্য।’

নিজেদের নয়, জনগণকে সম্পদশালী করাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণ সম্পদশালী হোক, জনগণের জীবন উন্নত হোক, জনগণ সুন্দর জীবন পাক, বাংলাদেশের একটা মানুষও গৃহহারা থাকবে না, একটা মানুষও না খেয়ে কষ্ট পাবে না, একটা মানুষও বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না, আমরা সেটাই করতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘রাজনীতিবিদ হিসেবে মানুষকে কতটুকু দিয়ে যেতে পারলাম, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, আমার অ্যাকাউন্টে সেটুকুই হচ্ছে জমা।’

কোনো ঘর অন্ধকারে থাকবে না, দেশের প্রতিটি ঘরকে তাঁর সরকার আলোকিত করবে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, সেই লক্ষ্য এবং নীতি নিয়েই তিনি দেশ পরিচালনা করছেন বলেই দেশে আজ এই উন্নতিটা হচ্ছে। আর পঁচাত্তর-পরবর্তী সরকারগুলো দেশের কোনো উন্নতি করতে বা দেশের মানুষকে কিছু দিতে পারেনি, তখন মুষ্টিমেয় কিছু লোকই সম্পদশালী হয়েছে আর বাকির খাতায় শূন্য বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা এখন স্যাটেলাইটও উেক্ষপণ করতে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উেক্ষপণের পর এর ১৫ বছর মেয়াদ থাকে। কাজেই পাঁচ বছরের মধ্যে আবার নতুন করে শুরু করতে হয়। এ জন্য আমরা বঙ্গবন্ধু-২ করব, তারপর ৩ করব; এভাবে পরিকল্পনা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য নেওয়া আছে।’

আলোচনাসভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন-অর-রশীদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

Share