দেলোয়ার হোসাইন :
চাঁদপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েল একাধিক রাজনৈতিক মামলার আসামী হয়ে চাঁদপুর জেলা কারাগারে বন্দী রয়েছেন। কারাগারে বসেই একের পর এক নতুন মামলার আসামী হচ্ছেন। একের পর এক নতুন এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী না হয়েও বার বার শুনানির পরও জামিন মিলছে না তার।
গত ২৮ জানুয়ারি গভীর রাতে তিনি চাঁদপুর ডিবি পুলিশের হাতে নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার হন। পরে তিনি অসুস্থ অবস্থায় দীর্ঘদিন চাঁদপুর সদর হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ঘোষেরহাট এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোল বোমা আতংকে হেলাপারের মৃত্যুর ঘটনায় চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ জিআর ৫৬/১৫ নং মামলায় আসামী করে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করেন। আদালত অসুস্থ অবস্থায় জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। রিমান্ড শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত জামিন নামঞ্জুর করে আদালতে প্রেরণ করেন।
পরবর্তীতে জিআর ৫৬/১৫ মামলাটিতে গত ৩ ফেব্রুয়ারি শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার বিবেচনায় বিজ্ঞ আদালত জামিন দিলেও ওইদিনই কাজী জুয়েলকে ৫ জানুয়ারির ঘটনায় জিআর ১৩/১৫ নং মামলায় অজ্ঞাত আসামী উল্লেখ করে পুনরায় গ্রেফতার দেখানো হয়। ৫ তারিখে আবারও একই পদ্ধতিতে চাঁদপুর মডেল থানার জিআর৪১/১৫ নং এর আরেকটি মামলায় আসামী দেখিয়ে সাবেক এই ছাত্রনেতার মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়।
এ ব্যাপারে কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম জুয়েলের আইনজীবীরা জানান, ‘‘আগের সব মামলার শুনানি অবস্থায় আবার গত ২৪ মার্চ চাঁদপুর মডেল থানা জিআর ১৪/১৫নং আরেকটি মামলায় আসামী করা হয়েছে। এ নিয়ে কাজী জুয়েলের জামিন না পাওয়া মামলার সংখ্যা ৩টি হলো।’’
ওই আইনজীবীরা আরো জানান, ‘‘আগের মামলাগুলোতে কাজী জুয়েলের নাম এজাহারে না থাকলেও বিজ্ঞ নি¤œ আদালত ও জজ আদালতে আলাদা আলাদা শুনানি শেষেও জামিন মিলছে না। অথচ এসকল মামলার এজাহারভুক্ত আসামীরা জামিনে রয়েছেন আর কাজী জুয়েল এজাহারে না থেকেও জামিন পাচ্ছেন না।’’
অপরদিকে ১মাসে কাজী জুয়েলের মামলার সংখ্যা হলো ৪টি। মামলার আইনজীবী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীলসমাজ, নিকটাত্মীয় ও পরিবারবর্গ বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারাবন্দী অসুস্থ কাজী জুয়েলের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়েরের ফলে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কাছেও বিষয়টি নিয়ে নতুন করে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানেও কাজী জুয়েল শারীরিকভাবে প্রচ- অসুস্থ, তার পিঠে এবং কোমরে ব্যথা থাকার কারণে বর্তমানে তাকে বেল্ট পরে হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হচ্ছে। লিখিতভাবে চিকিৎসক তাকে দেশে বা দেশের বাইরে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। চিকিৎসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আদালতে প্রদর্শন করেও বিজ্ঞ আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করছেন।
এদিকে সাবেক এই ছাত্রনেতার পরিবারের সদস্যদের সাথে কাজী জুয়েলের বর্তমান অবস্থা ও সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানান, ‘অসুস্থ অবস্থায় কারাগারে থাকার পরও কাজী জুয়েলের বিরুদ্ধে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত অমানবিক।’
এই প্রতিবেদকের কাছে পরিবারের সদস্যরা আরো জানিয়েছেন, ‘‘কাজী জুয়েল অসুস্থ। তাই রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে তার বিরুদ্ধে যাতে আর কোনো ‘মিথ্যা মামলা’ না দেয়া হয়। এছাড়া উন্নত চিকিৎসার সুবিধার্থে এবং অসুস্থতার কারণে মানবিক দিক বিবেচনা করে বর্তমানে চলমান মামলাসমূহে তাকে জামিনের ব্যবস্থা করা হলে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবেন।’’
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/দেহো/৩১ মার্চ ২০১৫