‘কারাগারে প্রথম ঢোকার পর মনে হয়েছে, মা-বাবা হারিয়ে গেছেন, কোনো ছেলে অনাথ আশ্রমে ঢুকছে। ব্যাগ নিয়ে যখন ঢুকি, তখন তো সাড়ে চারটা বাজে, তালা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমাকে তালা খুলে ঢোকানো হয়েছে।’ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোর সঙ্গে কারাগারে থাকার অভিজ্ঞতার এভাবেই বর্ণনা দিলেন জনপ্রিয় গায়ক আসিফ আকবর।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে করা মামলায় গত সোমবার জামিন পেয়েছেন আসিফ আকবর। গীতিকার ও সুরকার শফিক তুহিনের করা মামলায় তাঁকে ৫ জুন মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টায় গ্রেপ্তার করা হয়। পাঁচ দিন কারাবাস শেষে আসিফ এখন আবার মনোযোগী হয়েছেন গানে।
কারাগারের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে আসিফ বলেন, ‘আমি যেখানে ছিলাম, সেখানে আরও ১৭ জন কয়েদি ছিলেন। ঢুকেই দেখি সবাই নামাজ পড়ছেন। চারদিকে তাকাই, কিছুক্ষণ পর সবার সঙ্গে মিশে যাই। সারা দিন না-খাওয়া ছিলাম, এরপর খাইলাম। আস্তে আস্তে সবার সঙ্গে সম্পর্ক হয়ে গেল। আড্ডা দেওয়া শুরু করলাম। লুডু খেলা, দাবা খেলা, আরও কত কী! সবার পারিবারিক কাহিনি শুনলাম। কেস ফাইল দেখে সব কয়েদির নামও মুখস্থ করলাম।’
আসিফ আকবর জেল হাসপাতালে ছিলেন। জেল হাসপাতাল ১১-তে আরও ১৭ জন কয়েদি ছিলেন। প্রথমবারের মতো কারাগারে ঢোকার পর শুরুতে একটু মন খারাপ হয়েছে বলে জানান আসিফ। বললেন, ‘আমি তো নির্দোষ, এটা ভেবেই প্রথমে আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম। কারাগারে যাওয়ার পর জীবনে প্রথম সরকারি খাবার খেলাম। তবে কারা কর্তৃপক্ষ থেকে সবাই নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা দিয়েছেন। আর আমার আসার সময় তো সবাই কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিলেন। সবাইকে ফোন নম্বর দিয়ে এসেছি।’
আসিফ জানান, তিনি যেখানে ছিলেন, সেখানে কয়েদিদের কেউ কেউ বরিশাল, মাদারীপুর ও মেহেরপুরের। তবে সবার সঙ্গে সম্পর্কটা পারিবারিক হয়ে গেছে। একসঙ্গে শেয়ার করে ইফতারি খেয়েছেন, সাহ্রিও খেয়েছেন। সব মিলিয়ে পরিবার মনে হয়েছে।
কারাগারে তৃতীয় দিন আসিফ অন্য কয়েদিদের কাচ্চি বিরিয়ানি খাইয়েছেন বলেও জানান। বললেন, ‘আমরা পার্টি করেছি। সবাই মিলে কাচ্চি বিরিয়ানি খেয়েছি। কারাগারে তো কাচ্চি বিরিয়ানি পাওয়া যায় না, বহু কষ্ট করে বানানো হয়। সবাই খুব সহযোগিতাও করেছেন।’
আসিফ জানান, তিনি কাপড় ধুতে পারতেন না, এ কথা জানার পর অন্য কয়েদিরা তাঁর কাপড় ধুয়ে দিতেন। ব্রাশে টুথপেস্টও লাগিয়ে দিতেন। শেভ করার রেজার পর্যন্ত এনে দিতেন। কয়েদিরা যে ভালোবাসা দিয়েছেন, তা ভোলার নয়। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে শিল্পী হিসেবে এ এক অন্য রকম প্রাপ্তি।’