চাঁদপুর

‘কাম কাইজ নাই, বৌ-পোলাপাইন লইয়া খুব খারাপ সময় পার করতাছি’

আশিক বিন রহিম, চাঁদপুর :   আপডেট: ১০:০৮ অপরাহ্ণ, ২৬ জুলাই ২০১৫, রোববার

চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার বৌ-বাজার এলাকার রিক্সাচালক আবুল কাশেম। ৩ মেয়ে এক দুই ছেলে আর স্ত্রী নিয়ে ৭ জনের সংসার তার। সারাদিন ভাড়ায় রিক্সার প্যাডেল চেপে খরচ বাদে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা রুজি হতো। এতে মাস শেষে ১ হাজার ৫শ’ টাকার ঘর ভাড়া চুকিয়েও ভালোই চলতো প্রতিদিনের সংসার।

তিনি গত ৫দিন ধরে সর্দিজ্বরে ভুগছেন। জ্বর নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে রিক্সা চালাতে কষ্ট হয়। তাই দিনের বেশিরভাগ সময় এখন তার ঘরে বসেই কাটে। ভাতের টাকার জন্য যতটা না চিন্তা করেন, তার চেয়ে বেশি টেনশনে থাকেন কিস্তির টাকা কীভাবে যোগাড় করবেন।

আকাশের দিকে চেয়ে থেকে বৃষ্টি না হওয়ার দোয়া করেন। আর মনে মনে এক চিলতে রোদের প্রার্থনা করেন আবুল কাশেম। এভাবেই চলছে শহরের খেটে খাওয়া মানুষগুলোর সংসার।

শনিবার বৃষ্টি ভেজা বিকেলে তিনি জানান, ‘ভালো নাই ভাই। কয়দিনের মেঘে একেবারে শেষ। কাম কাইজ নাই বৌ-পোলাপাইন লইয়া খুবই খারাপ সময় পার করতাছি। এক ঘণ্টা কাম করলে ৪ ঘণ্টা বইয়া থাহি। আল্লায় কবে রইদ দিবো? কে জানে।’

রিক্সাচালক আবুল কাশেমের সাথে সুর মেলান ভ্যানে করে তরকারি বিক্রেতা আবুল খাঁন।

তিনিও জানান, প্রায় ১৫ দিন ধরে ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারছেন না। বৃষ্টির কারণে এবারের ঈদও ভালো কাটেনি তাদের। ক্ষোভের সাথে তিনি আরো জানান, ‘এইভাবে মেঘ (বৃষ্টি) অইতে থাকলে আমারা গরিব মানুষের মইরাই যামু’।

গত ক’দিনের থেমে থেমে বৃষ্টি হানা দেওয়া এভাবেই যেনো ম্লান হয়ে পড়ছে চাঁদপুর শহরের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সারাদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির প্রভাবে অনেকটাই কর্মহীন হয়ে পড়ছে দিনমজুর এসব মানুষগুলো। যাদের বেশিরভাগ রিক্সাচালানো, নদীতে মাছ ধরা, ভ্রাম্যমাণ হকার, কুলির কাজসহ নানাবিধ কাজ করে থাকেন।

বৈরী আবহাওয়ার ফলে বৃষ্টির কাছে অসহায়ত্ব বরণ করে কাজ-কর্মহীন এসব মানুষগুলো পরিবার-পরিজন নিয়ে বর্তমানে দুর্বিসহ জীবনজাপন করছে।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে ভালো নেই শহরের মাঝারি সারির ব্যবসায়ীরা। ক্ষুদ্র পুঁজির এসকল ব্যবসায়ীও বৃষ্টির হানায় অনেকটা ক্লান্ত। শনিবার বিকেলে চাঁদপুর শহরের বিপণি বিতানগুলো ঘুরে ক্রেতাশূন্য দেখা যায়। ক্রেতা না থাকার অনেক দোকানিই অলস সময় পার করছে।

এছাড়া ঈদের আগ থেকেই শুরু হওয়া থেমে থেমে বৃষ্টির ফলে চাঁদপুর শহর ও আশপাশের নি¤œাঞ্চল এখন অনেকটাই প্লাবিত। জলাবদ্ধতায় বন্দী এসব এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ এখন চরমে পৌঁছেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারের ঘোষপাড়া, মধ্যশ্রীরামদি, নিতাইগঞ্জ রোড, পূর্বশ্রীরামদি, প্রফেসরপাড়া, নাজিরপাড়া, আলিমপাড়া, ঘোষপাড়া, পালপাড়া, রহমতপুর কলোনিসহ শহরের কয়েকটি নিচু এলাকায় শত শত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

 

 চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫

চাঁদপুর টাইমস ডট কমপ্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি

Share