চাঁদপুর আড়াই শ’ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি জেনারেল হাসপাতালের দু’ অফিস সহকারির বিরুদ্ধে সরকারিভাবে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ৪৭ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সদের কাছ থেকে বিপুল অংকের টাকা আত্মসাতের খবর পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন কাগজ পত্র তৈরি করে দেয়াসহ অফিসিয়াল কাজের বরাত দিয়ে তাদের কাছ থেকে এই বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়।
এ ক্ষেত্রে তাদের কোনো রশিদ দেয়া হয়নি। তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত হাসপাতালের প্রধান অফিস সহকারি সফিউল ইসলাম ও ফারুক হোসেন বিষয়টি সত্য নয় বলে এড়িয়ে গেছেন। তবে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জানিয়েছেন বিষয়টি তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেখবেন।
জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শুরুতে স্বাস্থ্যসেবা মান উন্নয়নের সরকার সারা দেশে ১০ হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ দিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ৪৭ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সকে নিয়োগ দেয়া হয়।
গত ১৫ জানুয়ারী নিয়োগ প্রাপ্তির পর তারা এ হাসপাতালে যোগদান করে। হাসপালের অফিস সহকারি ফারুকুল ইসলাম সহ একটি চক্র যোগদানকৃত নার্সদের বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরী করে দেয়া সহ অফিসিয়াল কাজের কথা বলে জনপ্রতি ৩৬শ’ টাকা করে দাবি করে।
পরে প্রধান অফিস সহকারী সেটা কমিয়ে ২১শ’ টাকায় মিমাংসা করে দেয়। একপর্যালেয় গত ১ মাস পুর্বে সকল নার্স নিশ্চুপে ২১শ’ টাকা করে প্রায় লক্ষ টাকা ফারুকের হাতে তুলে দেয়। বর্তমানে ফারুক হোসেন উল্লেখিত নার্সদের কাছ থেকে ২১শ’ টাকা হানিয়ে নিয়ে আবারো পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে আরো ৫শ’ টাকা দাবি করছে। এতে করে এক পর্যায়ে বিষয়টি প্রকাশ পেয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ ক’জন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সিনিয়র স্টাফ নার্স জানান, ‘জনপ্রতি তারা ২১শ’ টাকা একত্র করে অফিস সহকারী ফারুকের কাছে জমা দিয়েছে। এ টাকা তিনি আইডি কার্ড প্রদান ও অনলাইনে আমাদের কাগজপত্র পাঠাবেন বলে জানিয়ে নিয়েছেন।’
অভিযোগ সর্ম্পকে অভিযুক্ত অফিস সহকারী ফারুকুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আইডি কার্ড প্রদান ও বিভিন্ন কাগজ পত্র ঠিক করে দিতে হবে তাই এ টাকা নিয়েছে। তিনি এ বিষয়ে এর বেশি কিছু জানেনা। যা কিছু হেডক্লার্ক জানে।’
অফিস সহকারী ফারুকুলের সাথে আলাপকালে ওই মুহূর্তে তার কক্ষে প্রবেশ করা সিনিয়র স্টাফ নার্স নিপা রাণি ও আরেকজনকে তাৎক্ষনাৎ বিষয়টি জানতে চাইলে ২১শ’ টাকার কথা তারা স্বিকার করেন। এবং তাদেরকে এ টাকার জন্য কোন প্রকার মানি রিসিট দেওয়া হয়না বলেও তারা জানায়।
তারাও আইডি কার্ড প্রদান ও অনলাইনে আমাদের কাগজপত্র পাঠাবেন বলে টাকা নিয়েছে বলে জানায়। এদিকে নিপা রাণি ও তার সহকর্মীর সাথে আলাপের একপর্যায়ে অফিসসহকারি ফারুকুল উঠে হেডক্লার্কের কক্ষে চলে যায়।
প্রধান করনিক (হেডক্লার্ক) সফিউল ইসলাম জানান, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা’। আর এরকম টাকা নেওয়ার বিধান নেই।’
হাসপাতালের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক প্রদীপ কুমার দত্ত এ প্রতিবেদককে জানায়, এ বিষয়ে আমার জানা নেই, ঘটনা সত্য কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত দুই প্রধান অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে এর আগেও হাসপাতালে মূল্যবান আসবাবপত্র ও ওষুধ অন্যত্র বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে।
গত কয়েক মাস পূর্বে ফারুক হোসেন হাসপাতালের একটি মেশিন বিক্রি করতে গিয়ে হাতে নাতে আটক হয়। ওই সময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে প্রধান অফিস সহকারী সফিকুল ইসলামের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করা হয়।
প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় 6: ৩০ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur