Home / জাতীয় / রাজনীতি / কাকে বা দিয়ে কাকে আনবেন, চ্যালেঞ্জের মুখে খালেদা জিয়া
Khaleda-H

কাকে বা দিয়ে কাকে আনবেন, চ্যালেঞ্জের মুখে খালেদা জিয়া

কাউন্সিলের পর কমিটি গঠন নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন বিএনপি-প্রধান খালেদা জিয়া। গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে ত্যাগী, পরীক্ষিত নেতাদের নেতৃত্বে নিয়ে আসা, তার নিজের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন, বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে সত্যিকারের নেতাদের মূল্যায়নসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অপেক্ষমাণ সাবেক নেতাদের দলে জায়গা দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কাউন্সিল অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে কাউন্সিলদের বিভিন্ন দাবি ও ক্ষোভের কথা উপস্থিত থেকে শুনেছেন খালেদা জিয়া। তখন খালেদা জিয়ার আশপাশে থাকা দলের সিনিয়র নেতাদের দিকে ইঙ্গিত করে ক্ষোভ-আক্রোশের কথা তুলে ধরেন। তাদের দাবি, বিগত দিনে আন্দোলনের সময় যারা বিএনপি-প্রধানের আশপাশে ছিলেন তারা বেঈমান। আন্দোলনে ছুরিকাঘাত তারাই করেছিলেন।

খালেদা জিয়া কাউন্সিল অধিবেশেনের সমাপনী বক্তব্যে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের দলে কিছু বেঈমান ও মীরজাফর আছে, যারা আন্দোলনকে সফল হতে দিচ্ছে না। কাজেই এদের দল থেকে বাদ দিতে হবে। বিএনপিতে লোকের অভাব হবে না। অনেক ভালো ভালো লোক বিএনপিতে যোগ দিতে চাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ভুল হতেই পারে। আপনারা দোষারোপ করছেন। কিন্তু আপনারাও তো ঠিকমতো কাজ করতে পারেননি। আপনাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল কমিটি করার জন্য, তখন আপনারও তো অমুক ভাই তমুক ভাইয়ের অজুহাতে, টাকার বিনিময়ে কমিটি গঠন করেছেন বলে প্রমাণ রয়েছে। কাজেই একে অপরের দোষ না খুঁজে ঐক্যবদ্ধ হই, তাহলেই জাতীয় ঐক্য সম্ভব হবে।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কমিটি গঠনে খালেদা জিয়াকে হিমশিম খেতে হবে। কারণ প্রায় ৭ বছর ধরে কমিটি হয়নি। দলীয় কাউন্সিল না হওয়ার ফলে বিএনপিতে ঢোকার জন্য নেতাদের জট লেগে আছে। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের মূল গন্তব্য বিএনপি। এছাড়া ছাত্রদলের অনেক সাবেক ছাত্রনেতা অপেক্ষায় আছেন মূল দলে ঢোকার জন্য। তারেক রহমান চান ক্ষতিগ্রস্তদের মূল্যায়ন। বিগত আন্দোলনে ত্যাগী মূল্যায়নসহ তরুণদের নেতৃত্বে নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছেন খালেদা জিয়া নিজেই। এখানেও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। কাকে বাদ দিয়ে কাকে নেতৃত্বে নিয়ে আসবেন তিনি। তা ছাড়া খালেদা জিয়ার আশপাশে যারা, তারাই প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবেন। সব কিছু ছাপিয়ে সঠিক নেতৃত্ব নিয়ে আসবে এমন প্রত্যাশার কথাও শুনিয়েছেন কেউ কেউ।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে কেউ পদের জন্য হুমকিও দিয়েছেন। পদ না পলে বিএনপির রাজনীতি ছেড়ে দিবেন।

এ প্রসঙ্গে দলের মধ্যম সারির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তরুণদের বাদ দিলে ম্যাডাম প্রতিবাদের মুখে পড়বেন। যেহেতু তিনি নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন তরুণ নেতৃত্ব নিয়ে আসা হবে। থাকবে তদবিরও।’

তিনি মনে করেন এমন পরিস্থিতিতে কমিটিতে কাকে রেখে কাকে বাদ দিবেন। এসব কিছুর বিবেচনায় বেশ চাপে থাকবেন খালেদা জিয়া।

কাউন্সিলে বিএনপির স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটি গঠনের পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয় খালেদা জিয়ার হাতে। শনিবার বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। পরে তা সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।

কাউন্সিল অধিবেশনে ক্ষোভ প্রকাশ করে দলের স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক ও নাটোর জেলার সভাপতি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, ‘ম্যাডাম যারা বিগত দিনে বেঈমানি করেছে, আপনি নির্দেশ দিলে ১৫ দিনের মধ্যে সরকার পতন ঘটাবে বলে আশ্বাস দিয়ে মোবাইল বন্ধ করে রেখেছিল তাদের চিহ্নিত করতে হবে। আপনার নির্দেশে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা রাজপথে নেমে এসেছিল।’

তিনি বলেন, ‘আপনি টিম লিডার। কারা নতুন টিমে থাকলে, কাদের হাতে দিলে আওয়ামী লীগের পতন হবে তা ভেবেচিন্তে দায়িত্ব দিবেন। প্রয়োজনে সময় নিবেন। তবে আমাদের দাবি, নতুন কমিটি নিয়ে যেন কেউ যাতে ব্যবসা করার সুযোগ না পায়।’

বরিশাল জেলা (উত্তর) সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘আমরা শুধু মহাসচিব চাই না। এমন অভিভাবক হবেন যিনি ডাক দিবেন তাতে সাড়া দিয়ে ইউনিয়ন থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত লাখ লাখ নেতাকর্মী রাজপথে নেমে আসে।’

তিনি বলেন, ‘বেঈমান, মীরজাফরকে নতুন কমিটিতে দেখতে চাই না। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বেঈমানি করেনি।’ খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যদি বেঈমানদের চিনতে চান তাহলে আশপাশ আর পেছনে তাকালে দেখতে পারবেন।’

তিনি বলেন, ‘নেত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবেন না। তিনি ঠিক যোগ্য নেতৃত্ব তুলে নিয়ে আসবেন।’

নরসিংদী জেলার সভাপতি খায়রুল কবির খোকন বলেন, ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসির কর্মসূচিতে রাজধানীতে নেতাকর্মীরা রাজপথে ছিলেন না। অনেক নেতা মোবাইল বন্ধ করে রেখেছিলেন। তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী ঢাকায় এসে নেতাদের পায়নি। ওইদিন রাজপথে নামলে সরকারের পতন হতো।’

তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে কমিটি চাপিয়ে দিলে হবে না। পকেট কমিটি করা যাবে না। কাউন্সিলের মাধ্যমে তৃণমূলে সম্মেলনের ব্যবস্থা করতে হবে।’

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি থানা বিএনপির সভাপতি খান মনিরুল মনি নির্বাহী কমিটিতে মুখোশধারীদের চিহ্নিত করার দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘কেন ২০১৪ সালের আন্দোলন বন্ধ করা হয়েছিল তা আমরা জানতে চাই।’

এই নেতার দাবি, ‘দলে তিন শ্রেণির নেতা রয়েছে। এক গ্রুপ আছে যারা টিভিতে ছবি উঠানোর জন্য ব্যস্ত থাকেন। অন্য গ্রুপে আছে মুখোশধারীরা। তারা বড় বড় পদ নিয়ে বসে আছেন। ফোন করলে তাদের পাওয়া যায় না। এমনকি বাসাও পাল্টে ফেলেন যাতে না পাওয়া যায়।’

আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণগুলো সাংগঠনিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা উচিত ছিল বলে দাবি করেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোহাম্মদ। জাতীয় নির্বাহী কমিটির আকার কমানোরও দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক বড় কমিটি, কিন্তু কাজের নাম লবডঙ্কা।’

ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৈমুর রহমান আগামী কাউন্সিল তিন দিন ধরে করার দাবি জানান। তিনিও ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আন্দোলন বন্ধ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিন কারো অনুরোধে জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোনো পদ না দেওয়ার আহ্বান জানান।

খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বরিশালসহ সারাদেশের চিত্র আপনি চোখ বন্ধ করলে দেখতে পারবেন। কারা আন্দোলনে ছিল। ইতিহাস বলে আপনি একা যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা কার্যকর হয়েছে।’

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা সভাপতি হুমায়ুন কবির খান বলেন, ‘আন্দোলনের সময় কিছু কিছু নেতা বড় বড় কথা বলতেন, সেসব নেতাদের পাসপোর্ট দেখা দরকার। এদের কেউ আবার ভারত ঘুরে এসে বলেছেন, তারেক সাহেবের সঙ্গে দেখা করে এসেছি। এতে নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত করা হয়।’

নিজ জেলায় ১৭ বছর ধরে ছাত্রদলের কমিটি নেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমার জানা মতে, অনেক নেতা কয়েক বিঘা জমি বিক্রি করে নেতাদের টাকা দিয়েছে। কিন্তু নেতা হতে পারেনি। তবে কমিটি করার ক্ষেত্রে বাণিজ্য বন্ধ করতে না পারলে দলের জন্য ভালো হবে না।’

দীর্ঘদিনে নির্বাহী কমিটির সভা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘নেতাদের পরামর্শ যদি না নেন তাহলে নির্বাহী কমিটি নয়, লিমিডেট কমিটি করে দেন।’

হেফাজতের সমাবেশের দিনে নেতাকর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানালেও কাউকে পাওয়া যায়নি বলেও দাবি করেন তিনি।

নওগাঁ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোবাইল বন্ধ রাখা নেতাদের চিহ্নিত করার দাবি জানান। খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘উপঢৌকন, আম ও চালের বস্তার বিনিময়ে এবার যেন কমিটি না হয়।’

প্রসঙ্গত, শনিবার বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে ‘এক নেতার এক পদ’সহ গঠনতন্ত্রে প্রায় ৩০টি সংশোধনী প্রস্তাব গৃহীত হয়।

সূত্র : দ্য রিপোর্ট

 

||আপডেট: ১০:১৪ অপরাহ্ন, ২১ মার্চ ২০১৬, সোমবার

চাঁদপুর টাইমস /এমআরআর