৪ দশকের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করল কলেজ শিক্ষার্থীরা

চাঁদপুর সরকারি কলেজের অভ্যন্তরে চার দশক ধরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে কলেজের বিভিন্ন বিভাগ থেকে শত শত শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে বাউন্ডারির ভিতরে থাকা দীর্ঘদিনের বেআইনি ২টি দোকান ভেঙে ফেলে। এতে করে কলেজের দখল হওয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমি পুনরুদ্ধার হয়। খান স্টোর ও বন্ধু কম্পিউটার নামে ভেঙে ফেলা ওই দোকান দুটির মালিক চাঁদপুর পৌরসভার কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান খান।

কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, এর আগে দোকান মালিকে তার অবৈধ স্থাপনাগুলো অপসারণের জন্য একাধিক নোটিশ প্রদান করা হয়। সর্বশেষ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে স্থাপনা সরিয়ে নিতে চূড়ান্ত নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, চাঁদপুর সরকারি কলেজের গভর্নিং বোর্ডের মেম্বারগণ কলেজ সরকারি করনের প্রাক্কালে যে সকল স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি ডিড অফ গিফট এর মাধ্যমে প্রদান করেছে তার মধ্যে জেএল নং ৯১ এর ৪৮৫ নং সিএস খতিয়ানে ৫০১, ৫০২, ৫০৪, ও ৫০৬ দাগ এবং জেএল নং ৯১ এর ৫৮১ নং খতিয়ানে ৫০৩ নং দাগের সম্পত্তি অত্র কলেজকে প্রদান করেছে। এসব খতিয়ানের নকশা অনুযায়ী দোকান ২টি ৫০২ দাগে অবস্থিত।

দোকানের মালিক মোহাম্মদ শাহজাহান খান জানিয়েছিলেন তার দোকান‌ ৫০৩ লাগে খরিদকৃত। অথচ ৫০৩ দাগটিও তৎকালীন গভর্নিং বডি চাঁদপুর কলেজকে বুঝিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে কলেজ কর্তৃপক্ষ উক্ত দুই দাগে দুটি ভবন নির্মাণ করতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কলেজের সম্পত্তির মধ্যে থাকা দোকানগুলো অপসারণের জন্য অনুরোধ করা হলো।

এদিকে ওই নোটিশের সময়সীমা অতিক্রমের পরও স্থাপনা না সরানোয় বিষয়টি শিক্ষার্থীরা জেনে যায়। এতে তারা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। সেই ক্ষোভ থেকে কলেজের বাউন্ডারির মধ্যে থাকা অবৈধ দোকান দুটির উচ্ছেদে শিক্ষার্থীরাই নিজেরাই ব্যবস্থা নেয়। পরে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে স্থাপনাগুলো ভাঙা হলে জমিটি কলেজের নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসে।

জানা যায়, বহু বছর আগে কলেজের উত্তর পশ্চিম কর্নারে একজন নরসুন্দর পিঁড়িতে বসে চুল কাটার কাজ করতে। তৎকালীন অধ্যক্ষ নিয়মিত তার কাছে চুল-দাড়ি-গোঁফ কাটতেন। একপর্যায়ে তিনি ওই নরসুন্দরকে সেখানে দোকান করে কাজ করতে মৌখিক অনুমতি দেন। ধীরে ধীরে সেই দোকানটি বড় হয়ে বাংলাদেশ সেলুন নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠে। এরপর দোকানটি অবৈধ দখলদারদের হাতে চলে যায়। দোকানের বর্তমান মালিকও হাত বদলে এটি ক্রয় করেছেন।

এ বিষয়ে সরজমিনে সেখানে গেলে কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, দীর্ঘদিন কলেজে সম্পত্তি দখল করে সেখানে দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে আসছিল। এই স্থাপনার কারণে সেখানে কলেজের একটি প্রয়োজনীয় ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। আমাদের শিক্ষকরা ওই দোকানের মালিককে একাধিকবার নোটিশ করেছে। কিন্তু তারা কোন কর্ণপাত করেনি। এজন্য আজকে আমরা শিক্ষার্থীরা এক হয়ে আমাদের কলেজের সম্পত্তি উদ্ধার করেছি।

চাঁদপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ সাইদুজ্জামান বলেন, বহু বছর ধরে আমাদের কলেজের বাউন্ডারির ভিতরে এই দুটি দোকান করে উঠেছে। ‌ কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয় দোকান মালিককে তার অবৈধ স্থাপনা অপসারণের জন্য একাধিকবার নোটিশ করেছেন। তাতে কোন কাজ হয়নি। বিষয়টি জানতে পেরে আজকে শিক্ষার্থীরা সপ্রণোদিত হয়ে অবৈধ স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলে।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এ.কে.এম আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমরা আইনগত নিয়ম মেনে অবৈধ দুটি দোকানে মালিককে একাধিক নোটিশ করেছি। তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে নোটিশের জবাব দিয়েছেন। সবশেষ নোটিশে ৩০ তারিখের মধ্যে স্থাপনা গুলো প্রসারণ করার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু ৮দিন পেরিয়ে গেলেও স্থাপনাগুলো অপসারণ করেনি। এই স্থাপনার জন্য কলেজের একটি ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। আজকে শিক্ষার্থীরা এক হয়ে নিজেরাই কলেজের সম্পত্তির উদ্ধার করেছে।’

অধ্যক্ষ প্রফেসর এ.কে.এম আব্দুল মান্নান আরো বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি চাঁদপুরবাসীর সম্পদ। আমাদের কারোরই এখানে স্থায়ী ভাবে থাকার সুযোগ নেই। কিন্তু কলেজের অবৈধ সম্পত্তি উদ্ধার হলে এবং নতুন ভবনসহ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পেলে এর সুফল চাঁদপুরের মানুষরাই পাবেন। তিনি কলেজের দখল হওয়া সম্পত্তি উদ্ধারে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

এদিকে কলেজের সম্পত্তি উদ্ধারে শিক্ষার্থীদের এই স্বতঃস্ফূর্ত ভূমিকা চাঁদপুরবাসীর কাছে ব্যপক প্রশংসিত হয়েছে।

প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম/
৮ ডিসেম্বর ২০২৫