চাঁদপুর

কলেজ শিক্ষকের নির্যাতনে আইনজীবী স্ত্রী হাসপাতালে

চাঁদপুর সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক মুসলিম সরদার মিশুর হাতে বর্বোরোচিত নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তার আইনজীবী স্ত্রী অ্যাড. কুলছুমা বেগম।

এ ঘটনায় শনিবার গভীর রাতে মুসলিম সরদার মিশুকে চাঁদপুর মডেল থানার পুলিশ আটক করে, রোববার আদালতে পাঠালে আদালত তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণ করে।

মিশু চাঁদপুর সরকারি কলেজে থাকাবস্থায় ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির অভিযোগে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সরকারি জসমুদ্দিন কাজী আব্দুল গণি কলেজে বদলী হন। সেখানে তিনি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করছেন।

মিশুর স্ত্রী চাঁদপুর জেলা জজ আদালতের আইনজীবী কুলসুমা বেগম (৪০) এখন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে শয্যাশায়ী অবস্থায় রয়েছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত আর কামড়ের চিহ্ন রয়েছে তার। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রথমে নির্যাতন চালানো হয় চাঁদপুর শহরের বিটি রোডস্থ ভাড়া বাসায় এবং পরে অচেতন অবস্থায় সেখান থেকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আরও কয়েকজন মিলে দ্বিতীয় দফা নির্যাতন চালানো হয় শনিবার রাতে। বর্তমানে নির্যাতিত কুলসুমা চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের ৩য় তলার ৬ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

কুলসুমার স্বজনরা জানান, গত ৮ বছর পূর্বে আইনজীবী কুলসুমার সাথে বিয়ে হয় মতলব দক্ষিণ উপজেলার নলুয়া গ্রামের মুসলিম সরদার মিশুর সঙ্গে।’

তাদের দাবি, বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সময় যৌতুক হিসেবে নগদ টাকা দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি শুরু করে। পরে তাকে ৫ লাখ টাকা দেয়া হয়। কিন্তু এরপরও সে থেমে থাকেনি। পরবর্তীতে আবারও টাকা চাইলে দিতে না পারায় শুরু হয় নির্যাতন। গত ছয় মাস আগেও ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয় এক সন্তানের জননী কুলসুমার ওপর। ওই ঘটনার পর এক বছরের কন্যা সন্তানকে নিয়ে আলাদা থাকতে শুরু করেন আইনজীবি কুলসুমা।

এর মধ্যে গত তিন মাস আগে চাঁদপুর সরকারি কলেজে কর্তব্যরত অবস্থায় তিন ছাত্রীকে নেশাযুক্ত দ্রব্য খাইয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে মিশুর বিরুদ্ধে। নির্যাতিত ছাত্রীদের অভিযোগ ও কলেজ ক্যাম্পাসে মিছিল মিটিং এর পর কর্তৃপক্ষ তাকে শাস্তিমূলক বদলি হিসেবে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সরকারি কলেজে পাঠানো হয়।

কিন্তু সে সেখানে যোগদান করলেও নিয়মিত থাকতো না। সর্বশেষ গত এক-দেড়মাস ধরে সে ওই কলেজেও অনুপস্থিত ছিল বলে জানান তারা।

নির্যাতনের কারণে হাসপাতালে বেডে চিকিৎসাধীন অ্যাড. কুলসুমা এখন ঠিকমতো কথাও বলতে পারছেন না।

কুলসুমা জানান, ‘লালমনিরহাট থেকে বদলি হয়ে আবার চাঁদপুর আসার জন্য আবারও ৫ লাখ টাকা দাবি করে মিশু। টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে শুক্রবার (১৬ জুন) বিকেলে ফোন করে বলে, আমি লালমনিরহাটে যাচ্ছি। যাওয়ার আগে আমার মেয়েকে একটু দেখতে চাই। তখন আমি তাকে বাসায় আসতে বলি। পরে সন্ধ্যার দিকে মিশু আমার বাসায় আসে তার ভাই আব্দুল হকসহ। এ সময় সে ঘরের ভেতর ঢুকেই আমাকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অচেতন অবস্থায় কুলসুমাকে সিএনজিতে উঠায় মিশু এবং তার ভাই। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় মতলবের বারঠালিয়া গ্রামের বাড়িতে।

কুলসুমার বড় ভাই হানিফ খন্দকার চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, কোন মানুষ কোন মানুষকে এভাবে নির্যাতন করতে পারে না দেখলে চিন্তাই করা যায় না। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তিনি জানান, মামলা করার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

প্রসঙ্গত, প্রায় ৩ মাস আগে চাঁদপুর সরকারি কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক থাকা অবস্থায় মুসলিম সরদার মিশু তার বিভাগের ৩ ছাত্রীকে বাসায় নিয়ে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে শ্লীলতাহানিরর চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ উঠে। পরে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ওই ছাত্রীরা কলেজ অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তের পর তাকে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম কলেজে বদলি করা হয়।

ছাত্রীদের শ্লীলতাহানীর বিষয়ে আগের প্রতিবেদন-

ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করতে চাঁদপুর কলেজ শিক্ষকের ফাঁদ

কবির হোসেন মিজি, চাঁদপুর প্রতিনিধি
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৯: ৫০ পিএম, ১৮ জুন ২০১৭, রোববার
ডিএইচ

Share