সারাদেশ

ছিলেন কলেজের নাইটগার্ড, ১৫ দিনের ছুটিতে হয়ে গেলেন মেয়র

রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আমির হোসেন আমিনকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইদুর রহমান। তিনি পাঁচ হাজার ৪৫৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আমির হোসেন আমিন পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৩৯৮ ভোট।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, সাইদুর রহমান পেশায় প্রথমে ছিলেন টোকাই, এরপর মুণ্ডুমালা বাজারের কুলি। পরে মাদক ব্যবসায় জড়িত হলে বেশ কয়েক বছর জেলও খাটেন তিনি। তিনি কলেজের নৈশপ্রহরী থাকা অবস্থায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দিতা করেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেয়র গোলাম রাব্বানীর ছায়ার তলে ঢুকে পড়েন সাইদুর রহমান। এ সুযোগে মুণ্ডুমালা পৌরসভায় তার স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি লাইন্সেস বের করে নেন। ওই লাইন্সেস দেখিয়ে পৌরসভার রাস্তাঘাট ও ড্রেন নির্মাণসহ বিভিন্ন টেন্ডার কাজ শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তার স্ত্রী তানোরের সর্বোচ্চ করদাতা। এভাবে বেড়ে উঠার সঙ্গে গাড়ি-বাড়ি ছাড়াও কোটি টাকার মালিক হয়েছেন সাইদুর।

সূত্র জানায়, রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মেয়র প্রার্থী আমির হোসেন আমীনের (নৌকা) বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন একই দলের পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান। দলীয় গঠনতন্ত্র ভঙ্গের কারণে মুণ্ডুমালা পৌর আওয়ামী লীগ তাকে বহিষ্কার করেছে। ১৮ জানুয়ারি সকালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মুণ্ডুমালা পৌর শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম হাবিবুল্লাহ স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ বহিষ্কারের তথ্য জানানো হয়।

স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি করোনাকালে লকডাউনে সাইদুর রহমান সুযোগ বোঝে চাল-ডালসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য ঘরবন্দি মানুষের বাড়িতে পৌঁছে দেন। এখান থেকেই তার শুরু হয় জনপ্রিয়তা। এ অবস্থায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেয়র গোলাম রাব্বানী এমপি প্রার্থীর প্রচারণায় নামেন। পরে সাইদুরের জনপ্রিয়তায় তাকে মেয়রপ্রার্থী ঘোষণা দেন রাব্বানী।

সাইদুর বর্তমানে মুণ্ডুমালা মহিলা কলেজের নৈশপ্রহরী। কলেজ থেকে নির্বাচন করার জন্য ছুটি নিয়েছিলেন ১৫ দিন। পৌর আওয়ামী লীগে ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক পদে। দল নিষেধ সত্ত্বেও নির্বাচনে অটল ছিলেন তিনি। এজন্য দল থেকে বহিষ্কারও হতে হয়েছে তাকে। তারপরও অদম্য ইচ্ছাশক্তির জেরে তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে মুণ্ডুমালা পৌরসভায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন সাইদুর রহমান।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি শরীফ খান বলেন, সাইদুর রহমান পেশায় প্রথমে ছিলেন টোকাই। এরপর তিনি মুণ্ডুমালা বাজারের কুলির কাজ করেন। পরে মাদক ব্যবসায় জড়িত হলে বেশ কয়েক বছর জেলও খাটেন তিনি। পরে বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেয়র গোলাম রাব্বানীর হাত ধরে মুণ্ডুমালা পৌরসভায় তার স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি লাইন্সেস বের করে নেন। বর্তমানে তার স্ত্রী তানোরের সর্বোচ্চ করদাতা। এভাবে বেড়ে উঠার সঙ্গে গাড়ি-বাড়ি ছাড়াও কোটি টাকার মালিক হয়েছেন সাইদুর।

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আমির হোসেন আমিনকে ৬১ ভোটে হারিয়ে হয়েছেন পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র সাইদুর রহমান। তিনি মোট ৫ হাজার ৪৫৯ ভোট পেয়েছেন। পেশায় নৈশপ্রহরী হলেও আওয়ামী লীগে সক্রিয় ছিলেন সাইদুর। মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়ন না পেয়ে দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। নির্বাচনে থাকায় পৌর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে বহিষ্কারের কথাও জানানো হয়।

নির্বাচনে সাইদুর রহমান জগ প্রতীকে পাঁচ হাজার ৪৫৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আমির হোসেন আমিন পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৩৯৮ ভোট। বিএনপির প্রার্থী ফিরোজ কবির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন তিন হাজার ৩৮১ ভোট।

গত শনিবার রাতে রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুশান্ত কুমার মাহাতো মুণ্ডুমালা পৌর নির্বাচনের এ ফলাফল ঘোষণা করেন।

মেয়র সাইদুর রহমান বলেন, আমার ইচ্ছা ছিল দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করা কিন্তু না পেলেও মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। এখন মানুষের সেবা করে যাব।

বার্তা কক্ষ,১ ফেব্রুয়ারি ২০২১

Share