Home / জাতীয় / কর্মক্ষেত্রে শ্রমজীবীদের বাড়তি বাড়ি ভাড়া তদারকির কেউ নেই
কর্মক্ষেত্রে শ্রমজীবীদের বাড়তি বাড়ি ভাড়া তদারকির কেউ নেই

কর্মক্ষেত্রে শ্রমজীবীদের বাড়তি বাড়ি ভাড়া তদারকির কেউ নেই

‎Friday, ‎01 ‎May, ‎2015 09:35:21 PM

সাইদুল হাসান সাদ্দাম, নগর সম্পাদক :

কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার পাশাপাশি বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের অন্যতম প্রধান সমস্যা হল অনিয়ন্ত্রিত বাড়ি ভাড়া। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের শ্রমজীবী মানুষের টানাটানির সংসারে বাড়তি এ ব্যয় বহন অত্যন্ত কষ্টকর। তদারকির কেউ না থাকায় শ্রমজীবীদের আয়ের অধিকাংশই চলে যায় বাড়ি ভাড়ায়।

জীবন ও জীবিকার তাগিদে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রাজধানীতে এসে বাস করেন লাখ লাখ কর্মজীবী মানুষ। এ সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু নগরীতে আবাসন চাহিদার তুলনায় বাসাবাড়ির সংখ্যা কম। ফলে বাড়িওয়ালারা ইচ্ছেমতো নির্ধারণ করেন তাদের বাড়ির ভাড়া।

বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণে আইন থাকলেও এর কার্যকারিতা নেই। এ সুযোগে বাড়িওয়ালারা প্রতিবছর লাগামহীনভাবে এ ভাড়া বৃদ্ধি করেন। বাড়িওয়ালাদের ৮০ শতাংশ বাড়ি ভাড়ার আয় দিয়ে চলেন। কোনো কিছুর দাম বাড়লেই ভাড়া বাড়ান বাড়ির মালিকেরা।

নগরবাসীর সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ তাদের বিষয় নয়।

জানা যায়, ঢাকার বাড়ি ভাড়ার ওপর কর আদায়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এলাকাভেদে ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ২০০৭ সালে করপোরেশনের ১০টি আঞ্চলে মোট ৭৭৫টি এলাকায় বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এলাকাভেদে ভাড়ার পরিমাণও ভিন্ন। পাকা বাড়ির জন্য আবাসিক বাড়ি ভাড়া প্রতি বর্গফুট চার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২ টাকা। কাঁচাবাড়ি ও আধাপাকার বাড়ির জন্যও ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এ ছাড়া সড়ক থেকে বাড়ির দূরত্ব বিবেচনায়ও ভাড়া নির্ধারণ করেছে সিটি করপোরেশন। নির্ধারিত সেই মূল্যেই বাড়ি ভাড়ার ওপর কর পরিশোধ করেন বাড়িওয়ালারা। কিন্তু ভাড়া আদায় করেন ওই তালিকার বহুগুণ বেশি।

কনজিউমারস এ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ক্যাব) এক জরিপে বলা হয়েছে, রাজধানীর ভাড়াটিয়াদের আয়ের প্রায় ৪০ ভাগ চলে যাচ্ছে বাড়ি ভাড়ায়। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় দুই হাজার শতাংশেরও বেশি। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ঢাকা শহরের বাড়ি ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৩২১ দশমিক ০৬ শতাংশ। ২৫ বছরে ঢাকা শহরে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ।

জরিপ অনুযায়ী, বাড়িওয়ালাদের ৮০ শতাংশই বাড়ি ভাড়ার আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন এবং ঢাকার ২৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ বাড়িওয়ালা ভাড়াটেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।

এদিকে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণে ‘বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১’ নামে একটি আইন থাকলেও এর তোয়াক্কা করছেন না বাড়িওয়ালারা। তারা প্রতিবছর ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার পর্যন্ত ভাড়া বাড়ান হয়।

১৯৯১ সালের ওই আইন অনুযায়ী ভাড়াটিয়াকে ইচ্ছে করলেই উচ্ছেদ করা যাবে না। এক মাসের বেশি অগ্রিমও নেওয়া যাবে না। সিটি করপোরেশনের রেন্ট কন্ট্রোলাররা বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করবেন। মালিক ও ভাড়াটিয়ারা মিলে মানসম্মত ভাড়া নির্ধারণ করবে।

আইনে আরও বলা হয়েছে, বাড়িওয়ালা প্রতি মাসে ভাড়াটিয়াকে বাড়ি ভাড়ার রশিদ দেবেন। ভাড়ার আগে দুই পক্ষের মধ্যে লিখিত চুক্তি থাকতে হবে। চুক্তিতে কখন কীভাবে ভাড়া বাড়ানো হবে তা বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে। আইনে ভাড়াটিয়ার জন্য বিদ্যুতের আলাদা মিটার বসাতে হবে। প্রতি মাসে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিলের কপি ভাড়াটিয়াকে সরবরাহ করতে হবে।

ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি মো. বাহারানে সুলতান বাহার বলেন, ‘মহান মে দিবসে আমাদের মূল দাবি তিনটি। দাবিগুলো হল— কর্মক্ষেত্রে জীবনের নিরাপত্তা দিতে হবে, কর্মজীবীদের বাসস্থান সুবিধা প্রদান করতে হবে ও বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করা যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া দেখভালের কেউ নেই। একে অপরের ওপর দায় দিয়েই খালাস। ১৯৯১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত গত ২০ বছরে রাজধানীতে প্রায় তিনশ গুণের বেশি ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর পর ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তা বহুগুণ ছাড়িয়ে গেছে। এ জটিলতা এড়াতে যুগোপযোগী বাড়ি ভাড়া আইন পাস করতে হবে।’

জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বি এম এনামুল হক বলেন, “আইন গ্রামে-শহরে বসবাসরত সকলের জন্য সমান। আমরা ‘বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১’ অনুসারে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করি না। সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বাড়িতে আমরা ‘হোল্ডিং ট্যাক্স’ বসাই অর্থাৎ হোল্ডিং ট্যাক্স গ্রহণ করি ও আদায় করি।”

তিনি আরও বলেন, ‘হোল্ডিং ট্যাক্স বসানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিগত ২৮ বছর হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করা হয়নি। হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা এখন ভাবছি। তবে বৃদ্ধির বিষয়ে এখনও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’

বাড়ি ভাড়ার ওপর ওই আইনটি কার্যকর করতে ২০১০ সালে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে এ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন।

জানতে চাইলে মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনটি কার্যকর না হওয়ার ক্ষেত্রে মূলত তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, এ আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জনগণকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। দ্বিতীয়ত, আইনে বলা আছে, যদি বাড়ি ভাড়ার বিষয়ে সমাধাণ না হয় তাহলে আদালতে যেতে হবে। এতে সময়ের পাশাপাশি অর্থও ব্যয় হয়। ফলে এতে জনগণ তেমন আগ্রহ দেখায় না। তৃতীয়ত, এ আইনের মাঝে বেশকিছু অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। এগুলো সংশোধন করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাড়ি ভাড়া আইনটি কার্যকর করতে ইতোমধ্যেই আদালতে রিট করা হয়েছে। রিটের রায় এখনও হয়নি। রায় হলেই আশা করি জনগণ এর সুফল পাবেন।’

অপরদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত বছরে ঢাকার বাড়ির মালিকদের ভাড়ার হিসাব নেওয়ার উদ্যোগ নেয়। ওই সময় বাড়ি ভাড়া বাবদ নিট আয় ২৫ হাজার টাকা হলেই বাড়ির মালিকের কর দেওয়ার বিধান চুড়ান্ত করে। পরবর্তী সময়ে ভাড়া জমা ও পরিশোধের ক্ষেত্রে ১০টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তবে এনবিআরের এ উদ্যোগও এখন পয়ন্ত আলোর মুখ দেখেনি। ফলে ভাড়াটিয়াদের থেকে বাড়িওয়ালাদের আদায়কৃত অর্থের সঠিক কর হারাচ্ছে সরকার।

এমআরআর/2015

নিয়মিত আপনার ফেসবুকে নিউজ পেতে ক্লিক করে লাইক দিন :

https://www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes