চাঁদপুরসহ দেশের ৪২ জেলায় কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বগামী। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে এসব জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে ১ থেকে ৪৬ শতাংশ (%)। এর মধ্যে সর্বোচ্চ রাঙামাটিতে ৪৬ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন নাটোর, পিরোজপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ শতাংশ করে।
তবে যে জেলাগুলোতে আগের সপ্তাহের তুলনায় শনাক্তের হার কমেছে, সেই জেলাগুলোতেও শনাক্ত বিবেচনায় সংক্রমণ ইতিবাচক পর্যায়ের রয়েছে। সারা দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধির এই হারকে আশঙ্কাজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের অভিমত, ৪৬ জেলায় সংক্রমণের হার বাড়া মানে সারা দেশেই বাড়া। কারণ কঠোর বিধিনিষেধ চলমান থাকলেও স্বল্প পরিসরে আন্তঃজেলা বা আন্তঃউপজেলা যোগাযোগ বহাল রয়েছে। ব্যাপক হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও তাদের আইসোলেশন করা সম্ভব হচ্ছে না।
রোগীর সংস্পর্শে যারা থাকেন তাদেরও কোয়ারেন্টিন করা হচ্ছে না। ফলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে, তেমন কার্যকর ফল আসছে না সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধে। এমন পরিস্থিতিতে এই বিধিনিষেধের সময়সীমা আরও বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৫ জুলাই থেকে ২১ জুলাইয়ের তুলনায় ২২ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই-এই এক সপ্তাহের ব্যবধানে উল্লিখিত জেলাগুলোতে সংক্রমণের হার বেড়েছে। এর মধ্যে রাঙামাটিতে বেড়েছে ৪৬ শতাংশ; বান্দরবানে ২৫, শরীয়তপুরে ১৮, কুষ্টিয়ায় ১৩, বরিশালে ৮, মাগুরায় ২৯, কুড়িগ্রামে ২৬, মেহেরপুরে ২০, ঝিনাইদহে ১৬, খাগড়াছড়িতে ১২, ভোলায় ১১, নড়াইলে ১৮, সিরাজগঞ্জে ৫, রংপুরে ৯, পটুয়াখালীতে ১১, সাতক্ষীরায় ২০, চট্টগ্রামে ৬, মানিকগঞ্জে ১৫, গাজীপুর ৫, মুন্সীগঞ্জে ১, কিশোরগঞ্জে ৩, গাইবান্ধায় ১২, নওগাঁয় ১৭, চুয়াডাঙ্গায় ১১, মেহেরপুরে ৮, নরসিংদীতে ৯, নাটোরে ১, নারায়ণগঞ্জে ৩, হবিগঞ্জে ২, পিরোজপুরে ১, নোয়াখালীতে ১, মুন্সীগঞ্জে ১০, রাজশাহীতে ৬, সুনামগঞ্জে ৯, ঢাকায় ২, চাঁদপুরে ১, লালমনিরহাটে ৪, যশোরে ৪, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১, যশোরে ৭, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২ এবং জয়পুরহাটে ৪ শতাংশ।
রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ঈদের আগে এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ দেশের কোভিড পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। তার পরের অর্থাৎ দ্বিতীয় বিধিনিষেধের সময় সংক্রমণ না কমে উলটো বেড়েছে। তবে চলমান বিধিনিষেধের সঙ্গে আর এক সপ্তাহ যুক্ত হলে হয়তো কিছুটা কমতে পারে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক পজিটিভ রোগীকে পাবলিক হেলথ ম্যানেজমেন্ট ও মেডিকেল ম্যানেজমেন্টের আওতায় আনতে হবে। অর্থাৎ আক্রান্ত রোগীদের মাধ্যমে যেন রোগটি অন্যদের মধ্যে না ছাড়ায়, সে বিষয়ে তাদের পরামর্শ দিতে হবে এবং সেটি নিশ্চিত করা। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা। শারীরিক অবস্থা কোন পর্যায়ে গেলে, কী করতে হবে এসব ধারণাও সবাইকে দিতে হবে। পাশাপাশি সর্বস্তরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, ১৫ থেকে ২১ জুলাই উল্লিখিত জেলায় সংক্রমণের যে হার ছিল তার তুলনায় ২২ থেকে ২৮ জুলাইয়ে শনাক্ত বিবেচনায় বৃদ্ধির হার লক্ষ করা গেছে। এর মধ্যে রাঙামাটিতে এক সপ্তাহ আগে সংক্রমণের হার ছিল ৩৬ শতাংশ, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২ শতাংশে। একইভাবে এক সপ্তাহ আগে বান্দরবানে শনাক্তের হার ৫১ থেকে বেড়ে ৭৬; শরীয়তপুরে ৪৬ থেকে বেড়ে ৬৪, কুষ্টিয়ায় ৪৯ থেকে বেড়ে ৬২, বরিশালে ৫২ থেকে বেড়ে ৬২, মাগুরায় ৩১ থেকে বেড়ে ৬০, কুড়িগ্রামে ৩৩ থেকে বেড়ে ২৯, মেহেরপুরে ৩৮ থেকে বেড়ে ৫৮, ঝিনাইদহে ৪০ থেকে বেড়ে ৫৬, খাগড়াছড়িতে ৪৩ থেকে বেড়ে ৫৫, ভোলায় ৪২ থেকে বেড়ে ৫৩, নড়াইলে ৩৫ থেকে বেড়ে ৫৩, সিরাজগঞ্জে ৪৭ থেকে বেড়ে ৫২, রংপুরে ৩২ থেকে বেড়ে ৫১, পটুয়াখালীতে ৩৮ থেকে বেড়ে ৪৯ শতাংশ। এছাড়া সাতক্ষীরায় গত সপ্তাহে ছিল ২৬ শতাংশ।
চলতি সপ্তাহে ২০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪৬ শতাংশ। চট্টগ্রামে ৪০ থেকে বেড়ে ৪৬, মানিকগঞ্জে ৩০ থেকে বেড়ে ৪৫, গাজীপুরে ৩৯ থেকে বেড়ে ৪৪, মুন্সীগঞ্জে ৪৩ থেকে বেড়ে ৪৪, কিশোরগঞ্জে ৩৯ থেকে বেড়ে ৪২, গাইবান্ধায় ৩০ থেকে বেড়ে ৪২, নওগাঁয় ২৪ থেকে বেড়ে ৪১, চুয়াডাঙ্গায় ৩০ থেকে বেড়ে ৪১, মাদারীপুরে ৩৩ থেকে বেড়ে ৪১, নরসিংদীতে ৩১ থেকে বেড়ে ৪০, নাটোরে ৩৯ থেকে ৪০, নারায়ণগঞ্জে ৩৬ থেকে বেড়ে ৩৯, হবিগঞ্জে ৩৭ থেকে বেড়ে ৩৯, পিরোজপুরে ৩৭ থেকে বেড়ে ৩৮, নোয়াখালীতে ৩৬ থেকে বেড়ে ৩৭, মুন্সীগঞ্জে ২৭ থেকে বেড়ে ৩৭, রাজশাহীতে ৩১ থেকে বেড়ে ৩৭, সুনামগঞ্জে ২৭ থেকে বেড়ে ৩৬, ঢাকায় ৩৩ থেকে বেড়ে ৩৫, চাঁদপুরে ৩৩ থেকে বেড়ে ৩৪, লালমনিরহাটে ২৯ থেকে বেড়ে ৩৩, যশোরে ২৮ থেকে বেড়ে ৩২, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২৮ থেকে বেড়ে ২৯, কক্সবাজারে ২১ থেকে বেড়ে ২৮, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৯ থেকে বেড়ে ২১ এবং জয়পুরহাটে ১২ থেকে ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
অনলাইন ডেস্ক,৩১ জুলাই ২০২১