চাঁদপুরে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সাথে পাল্লা দিয়ে দীর্ঘ হচ্ছে এ মৃতের মিছিলও। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় চাঁদপুরে ২২১টি নমুনা পরীক্ষায় ১০৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। একই সময়ে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
বর্তমানে চাঁদপুরে করোনা রোগীদের একমাত্র চিকিৎসালয় চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে তিল ধারণের জায়গা নেই। নির্ধারিত শয্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি হওয়ায় মেঝেতেও রাখা হচ্ছে করোনা রোগীদের। বর্তমানে হাসপাতালে ১৬০ জন করোনা আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধিন রয়েছেন। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
চলতি জুলাই মাসের শুরুতে আইসোলেশন ওয়ার্ড ৬০ শয্যা থেকে বাড়িয়ে ১২০ শয্যার করা হয়। কিন্তু এর পরেও ওয়ার্ডের ফ্লোর ও বারান্দায়ও রোগীদের জায়গা মিলছে না। রোগীর সংখ্যা শয্যার সংখ্যার থেকে প্রায় দিগুণ হওয়ায় অক্সিজেন সংকটও বেড়ে গেছে। এতে করে করোনায় মৃত্যুও বেড়েছে।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের মুখপাত্র ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল বলেন, ‘আইসোলেশন ওয়ার্ডে বর্তমানে ১৬০ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ৭০ জন করোনা পজিটিভ। বাকিদের জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও গলাব্যথা আছে।’
তিনি বলেন, ‘রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স নেই। এ ছাড়া, সেন্ট্রাল লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট চালু না হওয়ায় জটিল অবস্থা তৈরি হয়েছে। সিলিন্ডার অক্সিজেনেরও সংকট আছে।’
চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে যাচ্ছে। এখন থেকেই সচেতন না হলে চরম মাশুল গুনতে হবে জেলাবাসীকে। চাঁদপুরে আক্রান্ত নমুনা পরীক্ষার হারে ৫০ ভাগেরও বেশি। এরইমধ্যে প্রায় আট হাজার ছাড়িয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। মারা গেছে অন্তত ১৫০ জন।
তিনি আরো বলেন, ইউনিসেফের সহায়তায় লিক্যুইড অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করা হলেও, স্পেকট্রা অক্সিজেন সরবরাহ করছে না। এ নিয়ে আমরা চরম বিপদে আছি’।
এদিকে, চাঁদপুরে কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সরাসরি মাঠে কাজ করছে জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কঠোর বিধিনিষেধ শুরুর দিন শুক্রবার থেকেই সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার ব্যাটেলিয়নের বেশ কয়েকটি দল চাঁদপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
শহরের প্রবেশ পথে শুধুমাত্র রোগী এবং জরুরি পণ্যবাহী যান ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বন্ধ রয়েছে জরুরি সেবা ছাড়া অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নদীপথে যাত্রীবাহী লঞ্চ, সড়কপথে ছোটবড় যাত্রীবাহী যান এবং রেলপথে ট্রেন চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, অন্য বারের চেয়ে এবার আরও কঠোর অবস্থানে থাকবে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিনা কারণে কেউ বের হলেই তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ২৪ জুলাই ২০২১