চাঁদপুর জেলায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১২ জনের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে জুন মাসে প্রতিদিন গড়ে শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ২৩ জন। আর জুলাই মাসের প্রথম তিন দিনে গড় শনাক্তের হার ৪৩জন।
যা এপ্রিল মাসে ছিল ১জনেরও কম (গড়ে ০.৭২জন) এবং মে মাসে ছিল প্রায় ৬জন (গড়ে ৫.৯৩জন)। এই পরিসংখ্যানে স্পষ্ট জেলায় করোনায় আক্রান্তের হার কতটা ভয়াবহ মাত্রায় বাড়ছে।
চাঁদপুর সিভিল অফিস থেকে প্রতিদিন প্রদত্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তি বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, জেলায় প্রথম শত রোগী পূর্ণ হতে প্রায় দেড় মাস লেগেছে।
আরও পড়ুন…চাঁদপুর জেলায় করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১ হাজার ছাড়ালো
আর জুন মাসে দু’দফা একদিনের ব্যবধানেই শত রোগী বেড়েছে। দিন দিন আক্রান্তের হার অস্বাভাবিক মাত্রায় বাড়ছে। প্রায়’ই জ্যামিত্যিক পদ্ধতিতেও টপকে যাচ্ছে আক্রান্ত বৃদ্ধির হার।
চাঁদপুরে করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে প্রায় ৩ মাস আগে। এর মধ্যে সর্বাধিক রোগী শনাক্ত হয়েছে জুন মাসে। ওই মাসে সর্বাধিক ৬৭৯জন রোগী শনাক্ত হয়। আর জুলাই মাসের প্রথম দিনে শনাক্ত হয়েছে ১২৯জন।
৩ জুলাই পর্যন্ত আরো ৩৬৮জনের রিপোর্ট অপেক্ষমান ছিল। এসব রিপোর্ট আসলে প্রতিদিনের গড় আক্রান্তের হার আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চাঁদপুরে প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৯ এপ্রিল। এর ১ মাস ১৪ দিন পর প্রথম শত রোগী পূর্ণ হয় ২২ মে। সেদিন রোগীর সংখ্যা ছিল ১১১জন। আক্রান্তের দ্বিতীয় শতক (২১০) পূর্ণ হয় ১০ দিন পর ১ জুন।
এর ১১ দিন পর ১২ জুন তৃতীয় শতক (৩৬৪) অতিক্রম হয়। পরদিন ১৩ জুন চতুর্থ শতক (৪১২) অতিক্রম হয়। পঞ্চম শতক (৫০৮) পূর্ণ হয় আগের শতকের ৪ দিন পর ১৭ জুন। এর ৫ দিন পর ২২ জুন ষষ্ঠ শতক (৬১০) অতিক্রম করে।
ষষ্ঠ আর সপ্তম শতকের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ছিল ৪ দিন। ২৬ জুন করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ৭৫১জন। একদিন পর ২৭ জুন আক্রান্তের সংখ্যা অষ্টম (৮০৫) পূর্ণ হয়। এর ৪ দিন পর ১ জুলাই পূর্ণ হয় নবম শতক (৯১৯)। আর ২ দিনের ব্যবধানে ৩ জুলাই দশম শতক তথা আক্রান্তের সংখ্যা হাজার (১০০৩) অতিক্রম করে।
করোনা টেস্টের জন্য নমুনা প্রদানকারীদের রিপোর্টের ভিত্তিতে এই তথ্য জানায় সিভিল সার্জন অফিস। করোনার উপসর্গ থাকা ও উপসর্গহীন আরো কতজন পরীক্ষার আওতার বাইরে রয়ে গেছেন তার হিসেব কারো কাছে নেই।
এছাড়া ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নমুনা দিয়ে চাঁদপুরের আরো অনেকের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সেই হিসেব চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিস কিংবা স্বাস্থ্য বিভাগের অন্য কোথাও সংরক্ষিত নেই এই মূহূর্তে। এর বাইরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাঁদপুরের অসংখ্য মানুষ করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করেছেন। এখন পর্যন্ত সেই সংখ্যাও অজানা।
এদিকে করোনায় মৃত হিসেবে ৩ জুলাই পর্যন্ত ৬২জনকে শনাক্ত করেছে চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিস। সে হিসেবে প্রতি ৩ দিনে ২জনের বেশি করোনা শনাক্ত রোগী মারা গেছেন। উপসর্গে মৃত আরো অনেকের নমুনা টেস্টের রিপোর্ট এখনো অপেক্ষমান। আক্রান্তদের মধ্যে এখনো ৫৯৪জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন।
আবার উপসর্গে মৃত অনেকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। মৃত্যুর খবর না পাওয়া, দেড়িতে খবর পাওয়া, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পাওয়া, স্বাস্থ্যকর্মী সংকট, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন নির্দেশনাসহ নানা কারণে নমুনা পরীক্ষার বাইরে রয়ে গেছেন অনেকে।
সর্বশেষ ৩ জুলাই চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানানো হয়েছে, চাঁদপুর থেকে ঢাকায় করোনা টেস্টের জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে ৪৮৫৫টি। এর মধ্যে রিপোর্ট এসেছে ৪৪৮৭টি। অর্থাৎ রিপোর্ট প্রাপ্তির শতকরা হার ৯২.৪২%।
প্রাপ্ত রিপোর্ট থেকে পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে ৯৮৪টি। নমুনা প্রদানকারীদের মধ্যে আক্রান্তের শতকরা হার ২১.৯৩%। তবে অন্য জেলায় করোনা শনাক্ত হয়ে চাঁদপুরে এসে চিকিৎসাধীন/মৃতসহ জেলায় মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০০৩জন। (প্রবাহ)
বার্তা কক্ষ,৪ জুলাই ২০২০