ভয়কে জয় করে সন্দেহভাজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন বিধান চন্দ্র রায় (৫১)। তিনি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে একজনের শরীের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।
বিধান চন্দ্র রায়ের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার বলাইরকান্দি গ্রামে। গত কয়েক বছর ধরে তিনি এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত আছেন। তিনি বলেন, বিপদে আজকাল অনেক মানুষই মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান না। বিপদে বন্ধুর পরিচয়—কথাটি মানুষ ভুলে যান। তিনি সেই দলে না। তাঁর কাছে সেবাই ধর্ম।তাই সব ভয়–আতঙ্ক পেছনে ফেলে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন তিনি। গত মার্চ মাস থেকে তিনি করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকা ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করছেন।
বিধান বলেন, তিনি এ পর্যন্ত যতজনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন তাঁর মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ এসেছে। তিনি মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা।তিনি এখন ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নমুনা সংগ্রহের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথম দিকে তাঁর ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই), এমনকি মাস্ক পর্যন্ত ছিল না। তবু পিছু হটেননি তিনি। প্রতিদিন দুপুর দুইটা পর্যন্ত তাঁর কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনের কথা।তবে তাঁকে যখনই ডাকা হয়, তিনি গিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজ করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে, সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ বা চিকিৎসাসেবায় একটানা সাত দিন নিয়োজিত থাকলে তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে যেতে হয়। কিন্তু তিনি না থাকলে নমুনা সংগ্রহের আর কেউ থাকবেন না, এ জন্য তিনি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
এই ব্যক্তি তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কারণ, তাঁরা তাঁকে প্রতিনিয়ত সাহস ও অনুপ্রেরণা দেন।
মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গোলাম কাউসার বলেন, তাঁর কার্যালয়ের টেকনোলজিস্ট বিধান করোনাকালের একজন সাহসী যোদ্ধা। সব ভয়–ভীতি ও দ্বিধা কাটিয়ে তিনি যেভাবে একাই নমুনা সংগ্রহের কাজ করে যাচ্ছেন, তা প্রশংসনীয়। তিনি সামনের সারির করোনা যোদ্ধা।
মতলব দক্ষিণ করেসপন্ডেট,২৭ এপ্রিল ২০২০