জাতীয়

যেভাবে বাংলাদেশে করোনা ভ্যাকসিন আসতে পারে

করোনা ভ্যাকসিন বা টিকা পেতে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ। কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার গঠিত জাতীয় কারিগরি কমিটিও ভ্যাকসিনের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার তাগিদ দিয়েছে।

তবে করোনা ভ্যাকসিন পেতে এরইমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে সরকার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিন প্রক্রিয়ায় ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। নিজেদের তৈরি করা ভ্যাকসিন। অন্যদের ভ্যাকসিন ট্রায়ালে অংশগ্রহণ করলে এবং অন্য দেশের তৈরি করা ভ্যাকসিন হু’র মাধ্যমে চুক্তি করে নিতে হবে। আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন জোট ‘গ্যাভি’র ভ্যাকসিন পেতে এই প্রক্রিয়ায় এগোতে হবে।

বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পেতে এখন কোন অবস্থায় রয়েছে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, আমরা দীর্ঘদিন করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছি। বিভিন্ন দেশের ভ্যাকসিন ট্রায়াল হচ্ছে। আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে এই বিষয়ে চিঠি দিয়েছি।

সংস্থাটি জানিয়েছে, যখন ভ্যাকসিন অনুমোদন পাবে তখন দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো ২০ শতাংশ হারে পাবে। এটা যখন সহজলভ্য হবে। ‘গ্যাভি’কে চিঠি দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্যাভি’র ভ্যাকসিনই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে পাওয়া যাবে।

তিনি জানান, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন ভারতে ট্রায়ালে, চীনের ভ্যাকসিন ট্রায়ালে রয়েছে। রাশিয়া তো অনুমোদন দিয়েছে। আমেরিকার ফাইজারের ভ্যাকসিনও ট্রায়ালে আছে। সব বিষয়েই প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীই সিদ্ধান্ত দেবেন। তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। বাংলাদেশ যাতে সবচেয়ে ভালো ও নিরাপদ ভ্যাকসিন পেতে পারে সেভাবেই এগোচ্ছি।

এদিকে, সম্প্রতি টিকা প্রাপ্তির বিষয়ে বাংলাদেশ সফরে আসা ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। টিকা বা ভ্যাকসিন তৈরিকারী দেশ বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশ এখনো দৃশ্যত কোনো যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেনি। এক প্রকার সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে। করোনার ওষুধ আবিষ্কার না হওয়ায় পুরো বিশ্ব এখন ভ্যাকসিনের অপেক্ষায়। দেশের মানুষও অপেক্ষায় কবে ভ্যাকসিনের সুখবর আসবে। তবে এ পর্যন্ত ভ্যাকসিন নিয়ে কোনো আশার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

গত ১০ই আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে ‘বিশ্বব্যাপী বাজার থেকে ন্যায্যমূল্যে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সংগ্রহ’ শীর্ষক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আমদানি ও উৎপাদনের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সমপৃক্ত করার বিষয়টি ওঠে আসে। যাতে ভ্যাকসিন কূটনীতিতে বাংলাদেশ জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে।

বৈঠকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন জোট ‘গ্যাভি’র (দ্য গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস) মাধ্যমে দেশে নিয়ে আসার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ, পাশাপাশি নগদ টাকায় ভ্যাকসিন কেনার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ বিষয়ে আলোচনা হয়। জানা গেছে, বৈঠকে ভ্যাকসিন পাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রাধিকার পাবে বলে জানানো হয়।

কীভাবে আমরা টিকা পাবো- জানতে চাইলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং সংস্থাটির উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন বলেন, তিন প্রক্রিয়ায় ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। নিজদের তৈরি করা ভ্যাকসিন। অন্যদের ভ্যাকসিন ট্রায়ালে অংশগ্রহণ করে এবং অন্য দেশের তৈরি করা ভ্যাকসিন হু’র মাধ্যমে চুক্তি করে নিতে হবে। আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন জোট ‘গ্যাভি’র ভ্যাকসিন পেতে এই প্রক্রিয়ায় এগোতে হবে।

এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ঝুঁকিপূর্ণদের আগে ভ্যাকসিন দিতে হবে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীরা অগ্রাধিকার পাবেন। এরপর ধারাবাহিকভারে তালিকা করে দিতে হবে ভ্যাকসিন। সিরিঞ্জ তৈরি করতে হবে। সম্ভাব্য সব পরিকল্পনা নিতে হবে এখনই।

দেশের বিশেষজ্ঞরা টিকা বা ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে বলছেন, যারা টিকা আবিষ্কার করছেন তাদের সঙ্গে দৌড়াতে। কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি পরামর্শ দিয়েছে, করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে টিকার ট্রায়াল বাংলাদেশে হওয়া উচিত।

পরামর্শক কমিটি মত দিয়ে বলেন, টিকা আন্তর্জাতিক বাজারে এসে গেলে তা কীভাবে প্রথমেই বাংলাদেশে নিয়ে আসা যায় তার বিস্তারিত পরিকল্পনা এখনই নেয়া প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের এই কমিটি মনে করে, বাংলাদেশে টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হলে প্রথমত বাংলাদেশ এর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তা প্রমাণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই টিকা সফল প্রমাণিত হলে সর্বাগ্রে পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকবে। বুধবার কমিটির সর্বশেষ বৈঠক থেকেই এমন পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, গত ১৯শে আগস্ট ঢাকায় ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে সম্ভাব্য কোভিড-১৯ টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়। অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র সচিবকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ট্রায়ালসহ কোভিড-১৯ টিকা তৈরিতে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত। টিকা প্রস্তুত হলে সাশ্রয়ী মূল্যে শুরুতেই পেতে চায় বাংলাদেশ।

চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের করোনাভাইরাসের টিকা এখন তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়া প্রথম দেশ হিসেবে টিকা উৎপাদন শুরু করে দিয়েছে। এর মধ্যে চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেক লিমিটেড তাদের তৈরি করা টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা বাংলাদেশেও করার পরিকল্পনা করেছিল। বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলও গত ১৮ই জুলাই বাংলাদেশে ওই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছিল।

ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে চীনা টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কাজটি করার কথা ছিল আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র-আইসিডিডিআর,বি’র। বলা হয়েছিল, দেশের সাতটি হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হবে। তবে সে বিষয়টি পরে ঝুলে যায়।

এদিকে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করা টিকার পরীক্ষা ও উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত হয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (এসআইই)। দ্বিতীয় ধাপ থেকেই কোভিশিল্ড নামের ওই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে যাচ্ছে দেশটির সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী এই সংস্থা।

ঢাকা ব্যুরো চীফ, ২৪ আগস্ট ২০২০

Share