সারাদেশ

প্রবাসী মফিজ যেভাবে করোনা ভাইরাস ছড়ালো !

এখন সবার চোখ গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার দিকে। কতজন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, কতজন মারা যাচ্ছে। কোথায় কোথায় আক্রান্ত হচ্ছে। এসব তথ্যের খোঁজেই আছে জনগণ। কিন্তু করোনা কতভাবে যে ছড়াতে পারে সে বিষয়ে তেমন ভাবনা নেই অনেকের। খুব সহজে এবং দ্রুত করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।

কীভাবে ছড়াতে পারে সেটা একটু চিন্তা করলেই চোখে পড়বে। ধরুন প্রবাসী মফিজ সাহেব ইতালি থেকে এসেছেন। তিনি করোনা ভাইরাস আক্রান্তের প্রাথমিক পর্যায়ে ছিলেন। এয়ারপোর্ট থেকে সাধারণভাবেই বাসায় গেছেন। প্রশ্ন আসতে পারে এখানে কীভাবে ছড়িয়েছেন করোনা ভাইরাস?

প্রথমে মফিজ সাহেবের আত্মীয় আবুল সাহেব এয়ারপোর্ট থেকে তাকে উষ্ণ আলিঙ্গনে অভ্যর্থনা জানালেন। বুকে জড়িয়ে ধরে আবুল সাহেব করোনায় আক্রান্ত হলেন। এবার দুজনে খুশি মনে ল্যাগেজ-বাগেজ নিয়ে সিএনজিতে উঠলেন। এরমধ্যে তারা দুজনে মিলে লাগেজে করোনার জীবাণু ছড়িয়েছেন। সেই লাগেজ সিএনজি ওয়ালা তার গাড়িতে তুললেন। মফিজ ও আবুল ট্যাক্সিতে বসে ট্যাক্সির দরজা বন্ধ করে দিলেন। এখানে আক্রান্ত হলো- হলো মফিজ, আবুল, লাগেজ, ট্যাক্টি ও ড্রাইভার।

ছুটে চলছে করোনা ভাইরাস ট্যাক্সির গতিতে আর কার কাছে যাবে? ফোনে কথা চলছে সমানে। আর এক ঘন্টার ভেতর বাসায় পৌঁছে যাবে। সবার জন্য উপহার এনেছেন মফিজ সাহেব। বাসার সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে মফিজ সাহেবের জন্য।

এবার গাড়ি থামল মফিজের বাসার সামনে। সবাই বাসার গেটে দাঁড়িয়ে আছেন। মফিজ নামলেন সিএনজি থেকে। প্রথমে মফিজকে জড়িয়ে ধরলেন মা, কপালে চুমু দিলেন। এবার বাবার পালা। তিনিও একই কাজ করলেন। এবার প্রিয়তমা স্ত্রী সন্তান, ভাই-বোন একে একে সবাই।

ছোট ভাই লাগেজ নিয়ে বাসায় বাসায় তুললেন। সিএনজি ড্রাইভারকে ভাড়া দিলেন। ভাংতি টাকা ড্রাইভার ফেরত দিলেন। টাকায় লাগলো করোনা ভাইরাস। সিএনজি ড্রাইভার দিলেন ছুট। সিএনজি ড্রাইভার রোডে উঠতেই একজন পাশে দাঁড়িয়ে তিনি সিএনজি খুঁজছিলেন। পেয়ে গেলেন সিএনজি। দরজা খুলে উঠে পড়লেন। এবার তিনি এলেন করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে। তিনিও গৌন্তব্যে নামলেন। ভাড়া পরিশোধ করতে যেয়ে টাকা লেনদেন হলো। টাকার সংস্পর্শে এলেন।

এই ভদ্রলোক এবার কাজ শেষে উঠলেন পাবলিক বাসে। সিট না পাওয়ায় বাসে দাড়িয়ে আছেন। ধরে আসেন বাসে হ্যান্ডেল। কখনো সিট ধরছেন। এর মাঝে কত লোকের গায়ে গা ঠেকেছে কত লোকের তার হিসাব নেই। এভাবে কত লোক করোনা ভাইরাসের সংস্পর্শে তার হিসাব মেলানো কঠিন।

এদিকে মফিজের আদরের বোন লাগেজ খুলছেন। সবাইকে উপহার সামগ্রী বের করে দিচ্ছে। সে কী মহা আনন্দ। মফিজ বাড়িতে এসেছে শুনে রাতেই কিছু পাড়াপ্রতিবেশিও দেখতে এসেছেন। পরদিন মফিজ নিজের অনেক সঙ্গে দেখা করেছেন। অনেকের সঙ্গে হ্যান্ডসেক, কোলাকুলি করেছেন। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দোকানে বসে চা খেয়েছেন। কারো বাড়ি বসে নাস্তা করেছেন। বন্ধুদের নিয়ে এরপর হোটেলে গিয়েছেন। একসঙ্গে খাবার খেয়েছেন। বেড়াতে বের হয়েছেন বাইকে। মাঝে মাঝে হাঁচি কাশি দিচ্ছে। যেখানে সেখানে থুতু কফ ফেলছেল।

আস্তে ধীরে পরিবারের লোকজন হাঁচি কাশি দিচ্ছে। এরপর পাড়া প্রতিবেশির লোকজন হাঁচি কাশি দিচ্ছে। সবার গলা ব্যথা হচ্ছে। সবার আগে বেশি হাঁচি কাশি হচ্ছে মফিজের বাবার। তার অবস্থা একেবারেই নাজুক। তাকে দেখতে এখন অনেক আত্মীয় স্বজন আসছেন। এরপর আর মফিজের পরিবারের কথা নাই বা বললাম।

এভাবে তিন থেকে চারদিনের ভেতর মফিজের পুরো পরিবার থেকে পাশের বাড়ি, পাড়া, মহল্লা, গ্রাম থেকে শহর। শহর থেকে আরো কোথায় কোথায় ছড়িয়ে যাচ্ছে করোনা ভাইরাস তার খবর কে রাখবে?

লেখায় মফিজকে রুপক অর্থে ব্যবহার করেছি। তবে এভাবেই হয়তো করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে নিরবে চুপিসারে। হয়তো খেয়াল করতে পারছি না। আমাদের এখনই খুব সচেতন হতে হবে। না হলে আমি আপনি সবাই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারি কোনো না কোনোভাবে।

আসুন সচেতন হই। হাত ধোঁয়ার কোনো বিকল্প নেই। কোনো কিছু ধরলেই এখন হাত ধুতে হবে হ্যান্ডওয়াশ বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে। পরতে হবে মাস্ক। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। এই সময় সব সঙ্গ পরিত্যাগ করে অন্তত ১৪ দিন ঘরে থাকুন। সুস্থ থাকুন। (লিখেছেন- শেখ সাইফ) আরো পড়া যেতে পারে- করোনা পরীক্ষা কিট আবিষ্কার উন্মুক্ত করাসহ যেসব প্রস্তাব দিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী

বার্তা কক্ষ, ২২ মার্চ ২০২০

Share