করোনা প্রতিরোধে মাস্কই গুরুত্বপূর্ণ

করোনা প্রতিরোধে ফেস মাস্ক গুরুত্বপূর্ণ। সবার মুখে মাস্ক থাকলে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি অথবা কাশি থেকে খুব বেশি ভাইরাস ছড়াতে পারে না। কিছু ভাইরাস মাস্কের ঢিলা অংশ দিয়ে বের হয়ে আসতে পারে তবে যতটুকু ভাইরাস বের হয়ে যায় সেগুলো মাস্কে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে তা বেশি দূর ছড়াতে পারে না।

করোনার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকে ভাইরাস ছড়ানোর পরিমাণ খুবই কম থাকে। ফলে আশপাশের মানুষ অনেকটা নিরাপদ থাকে। শনিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোল (সিডিসি) সবাইকে মাস্ক পরার জন্য আহ্বান জানিয়েছে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য।

মাস্ক যে ধরনেরই হোক না, মাস্কহীন চলাচলের চেয়ে তা ভালো। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গুণগত মানসম্পন্ন মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। বিশ্ব সংস্থা ফেসশিল্ড, বাল্বযুক্ত মাস্ক তা সর্বাধুনিক এন-৯৫ হলেও এবং স্তরহীন মাস্ক ব্যবহার করতে নিরুৎসাহিত করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিছু কিছু মাস্ককে ব্যবহার করতে নিষেধ করেছে এ কারণে যে এসব মাস্ক ব্যবহারকারীর নাক-মুখ থেকে বের হওয়া ভাইরাস আশপাশে ছড়িয়ে পড়তে প্রতিরোধ করতে পারে না আবার ব্যবহারকারীকে আশপাশের করোনা সংক্রমিত মানুষ থেকে ভাইরাস প্রতিরোধেও সহায়তা করে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সিডিসি বাল্বযুক্ত মাস্ক সেটা এন-৯৫ হলেও ব্যবহার করতে নিরুৎসাহিত করেছে। এই দুটো সংস্থাই বলেছে, ফেসশিল্ড কোনোভাবেই ভাইরাস প্রতিরোধ করে না। এমনকি সিডিসি ফেসশিল্ডকে মাস্কের বিকল্প বলতেও চাচ্ছে না। তারা বলেছে, এটা মাস্কের গ্রহণযোগ্য বিকল্প নয়। ফেসশিল্ডের উপরে ও নিচে বিশাল ফাঁক রয়েছে বলে এটা ভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করে না।

তবে ডিউক ইউনিভার্সিটির গবেষণায় বলা হয়েছে, কেবল বাল্বহীন এন-৯৫ মাস্ক খুব ভালো। গবেষণায় এন-৯৫ মাস্ককে প্রথম রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রেখেছে তিনস্তরযুক্ত সার্জিক্যাল মাস্ক। এরপরই রয়েছে তিনস্তর বিশিষ্ট প্রপাইলিনযুক্ত কটন মাস্ক। তাদের গবেষণায় চতুর্থ কার্যকর মাস্ক হিসেবে চিহ্নিত করেছে দুইস্তর বিশিষ্ট প্রপাইলিনযুক্ত অ্যাপ্রন মাস্ক। এর মধ্যে থার্মো প্লাস্টিক পলিমার রয়েছে, যা আর্দ্রতা শোষণ করতে পারে। এটা সার্জিক্যাল মাস্কের মতোই দেখতে। এ ধরনের মাস্ক সার্জিক্যাল মাস্কের চেয়ে কিছুটা কম ভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে।

ডিউক ইউনিভার্সিটির গবেষণায় মাস্কের গুণগত মানের দিক থেকে বাল্বযুক্ত এন-৯৫ মাস্ককে ৬ নম্বরে রাখা হয়েছে। পাঁচ নাম্বারে রাখা হয়েছে দুইস্তরের কটনপ্লিটেড স্টাইল মাস্ককে। কারণএন-৯৫ মাস্কের বাল্বের ভেতর দিয়ে ভাইরাস বের হয়ে যেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে এখন যত্রতত্র সার্জিক্যাল মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে।

এ মাস্ক নিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এখন এসব মাস্ক বস্তিতেও সাধারণ পরিবেশে বানানো হচ্ছে এমন অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য অধ্যাপক এম মোজাহেরুল হক বলেন, ফেসমাস্কের মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেয়া উচিত। বাজারে যেসব মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে যে এগুলো মানসম্পন্ন কি না। সরকারের উচিত মাস্কের একটি স্ট্যান্ডার্ড করে দিয়ে এর বাইরের সব ধরনের মাস্ক নিষিদ্ধ করে দেয়া।

করোনা প্রতিরোধে মাস্কের ব্যবহার খুবই গুরুত্ব হলেও বর্তমানে করোনার ব্যাপারে মানুষের মধ্যে শৈথিল্য চলে আসায়। মাস্ক না পরার প্রবণতা বেড়েছে। মোবাইল কোর্ট শাস্তি দিলেও খুব কাজে লাগছে না। দৃষ্টান্তমূলক কিছু শাস্তি দিতে পারে সরকার। কারণ একটি ভালো মাস্ক ভ্যাকসিনের কাজ করে। একটি ভালো মাস্ক সব সময় ব্যবহার করলে করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

বার্তা কক্ষ , ৬ ডিসেম্বর ২০২০

Share