কুমিল্লায় পিসিআর মেশিনের করোনা পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে অসন্তোষ ও বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে (কুমেক) স্থাপিত পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষায় পজেটিভ আসা নাঙ্গলকোট উপজেলার ১০জনকে ঢাকায় পরীক্ষা করা হলে ফলাফল নেগেটিভ আসে।
নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: দেব দাশ দেব বলেন, এই ভুল রিপোর্টের কারণে সংশ্লিষ্টরা সামাজিক ও মানসিক ভোগান্তিতে পড়েছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি জানান, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে নাঙ্গলকোট হাসপাতালের সাতজন চিকিৎসকসহ ১৪জনের ফলাফল পজেটিভ ঘোষণা করে। এর পর সঙ্গত কারনেই আমরা নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স লকডাউন ঘোষণা করি।
ডা: দেব দাশ দেব বলেন, এই পরীক্ষা আমাদের সন্দেহ হয়। তাই, তিনদিন পর আক্রান্ত ১৪ জনের মধ্যে ১০জনের নমুনা আবার ঢাকায় পাঠাই। ৩ মে ওই ১০জনেরই নেগেটিভ ফলাফল আসে। এছাড়া কুমেকে দুইজনকে নেগেটিভ বলা হলেও ঢাকায় তাদের পজেটিভ ঘোষণা করে।
এনিয়ে সবাই মানসিক ভাবে এবং সামাজিক ভাবেও ভোগান্তিতে পড়েছে বলেও জানান, ডা: দেব দাশ দেব।
ডা: দেব দাশ দেব আরও বলেন, চিকিৎসক ও স্টাফদের নেগেটিভ ঘোষণা করে কাজে যোগদান করাতে বলেছেন আইডিসিআর এর বায়োলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. তাহমিনা শিরিন মহোদয়। তিনি বলেন, অন্যদের পজেটিভ ফলাফল নিয়েও নিয়েও আমার সন্দেহ রয়েছে। তাই, সামনে আর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে নমুনা পাঠাবো না।
এদিকে জেলার দেবিদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সৈয়দ খলিলুর রহমান বাবুল এই প্রতিবেদককে জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর ফেসবুক পেইজে দেয়া তথ্যগুলো তুলনা করলে দেখা যায়, কুমিল্লা মেডিকেল থেকে আসা রিপোর্টগুলো বেশি পজেটিভ আসে। ৫০টি নমুনা পাঠালে ১৫/২০জন পজেটিভ আসে। ঢাকায় পাঠালে এই হার নেমে আসে ৮/১০জনে।
এব্যাপারে দেবিদ্বার উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আহমেদ কবীর বলেন, আমরা এ বিষয়ে মমন্তব্য করতে পারি না। তবে, আমাদের কাছেও বিষয়টি এমনই মনে হয়েছে। তাই, আমরা সিভিলসার্জন অফিসে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। সেখানে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেছি যে, আমাদের প্রেরিত নমুনর ফলাফল পেতে অনেক বিলম্ব হয়, ফলাফল আনুপাতিক হারে পজেটিভ বেশি আসে এবং কিছু ফলাফল অসম্পূর্ণ থাকে।
নাঙ্গলকোট উপজেলার করোনা পজেটিভ ৭৯ জন করোনা আক্রান্ত রোগীর নমুনা পুনরায় আইইডিসিআর এ পাঠানোর দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগী পরিবার গুলো এবং সেন্টার ফর সোসাল সার্ভিসেসের পরিচালক অধ্যক্ষ সায়েম মাহবুব।
তারা বলেন, নাঙ্গলকোটে করোনা ভাইরাস পরীক্ষায় ভুল রিপোর্টের ফলে ৭০ পরিবারে নেমে এসেছে বিপর্যয়। এদিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দেয়া ভুল রিপোর্টের কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দীর্ঘ ১৪ দিন যাবৎ লকডাউন থাকায় উপজেলার ছয় লাখ মানুষ চিকিৎসা বঞ্চিত হন।
সেন্টার ফর সোসাল সার্ভিসেসের পরিচালক অধ্যক্ষ সায়েম মাহবুব বলেন, উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম হতে সংগ্রহ করা ৬০৪ জনের নমুনার মধ্যে ৭০ ভাগই কুমিল্লা মেডিকেলের রিপোর্ট বলে জানা গেছে। এছাড়া এখনো ৯২ জনের রিপোর্ট প্রক্রিয়াধীন। এ নিয়ে জনমনে ব্যাপক সংশয় দেখা দিয়েছে।
কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ভুল হতেই পারে। এতে চিকিৎসকদের কিছু সমস্যা হয়েছে। এনিয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোস্তফা কামাল আজাদ বলেন, এই পরীক্ষার ৩০ভাগ বদলে যেতে পারে। তাছাড়া নমুনা সংগ্রহে সতর্ক না হলে কিংবা দেরিতে জমা দিলে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়না। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ২৪ঘন্টার বেশি নমুনা ভালো থাকে না। তিনি আরো বলেন, আমরা প্রতিদিন দুই শিফটে ১৮০জনের নমুনা পরীক্ষা করতে পারি। কিন্তু নমুনা আসছে সাড়ে চারশ’ পাঁচশ’ জনের। মেশিন ও জনবলের সংকট রয়েছে। চিকিৎসক ও স্টাফরা রাত ২টা পর্যন্ত কাজ করছেন।
প্রতিবেদক: জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, কুমিল্লা ॥ ০৫ জুন ২০২০।।