করোনা থেকে সুরক্ষায় প্রথম ধাপে পর্যায়ক্রমে ৬৪ জেলাতেই টিকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ঢাকা জেলার জন্য সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এখানে ১২ লাখ ৫৪ হাজার ২০০ ডোজ দেওয়া হবে। চাঁদপুর জেলার জন্য দুই লাখ ৫১ হাজার ৫৯২ জন।
সবচেয়ে কম বরাদ্দ বান্দরবান জেলায়-শুরুতেই পাবেন ৪০ হাজার ৪৩৯ জন। জনসংখ্যার ঘনত্ব, সংক্রমণের হার প্রভৃতি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এ তালিকা তৈরি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
দেশের ২৯ শতাংশ মানুষের জন্য এখন পর্যন্ত টিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া ৪০ ভাগ মানুষের টিকা নিশ্চিত করতে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা করা হবে। যারা টিকা নেবেন, তাদের প্রত্যেককে সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত টিকা আগামি ২২-২৫ জানুয়ারি দেশে আসবে-এমনটি জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সোমবার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, প্রথম ধাপে ৫০ লাখ টিকা আসবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে।
ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই সারা দেশে প্রথম ধাপের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে। এই টিকাদান কর্মসূচিতে টিকা পাবেন দেশের ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ মানুষ।
এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে টিকাদানের জন্য প্রশিক্ষিত জনবল প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ সহয়িকা চূড়ান্ত খসড়া করা হয়েছে। পাশাপাশি অনলাইন প্রশিক্ষণ, মাঠ পর্যায়ের প্রশিক্ষণ ও বাজেট চূড়ান্তকরণ, নির্দেশিকা তৈরি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আগামী ১৮ জানুয়ারির মধ্যে এগুলো সব জেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
১৮ ও ১৯ জানুয়ারি দুদিন টিকা দেওয়ার বিষয়ে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের (ডেপুটি সিভিল সার্জন, ইউএইচএফপিও) প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে। সিটি করপোরেশন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ হবে ২০-২৪ জানুয়ারি এবং টিকাদান কর্মীদের প্রশিক্ষণ চলবে ২৩-২৬ জানুয়ারি। বিভিন্ন পর্যায়ের স্বেচ্ছাসেবকদের ওরিয়েনটেশন হবে ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি।
যেসব স্থান থেকে টিকা দেওয়া হবে তারমধ্যে রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা/সদর হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, পুলিশ-বিজিবি হাসপাতাল ও সিএমএইচ, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। এসব জায়গায় প্রথম ধাপের ৫০ লাখ ভ্যাকসিন দিতে ৭ হাজার ৩৪৪টি দল গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি দলে দুজন সরাসরি ভ্যাকসিন দেবেন এবং বাকি চারজন স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে অন্যান্য কাজ করবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ডিসট্রিবিউশন প্ল্যানে দেখা গেছে, বরিশাল বিভাগে টিকা দেওয়া হবে ৮ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯৪ জনকে। চট্টগ্রাম বিভাগে দেওয়া হবে ২৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৩ জনকে, ঢাকা বিভাগে দেওয়া হবে ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ৫৪৫ জনকে। খুলনা বিভাগে দেওয়া হবে ১৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪৬ জনকে। রাজশাহী বিভাগে ১৯ লাখ ২৪ হাজার ৯২২ জনকে। রংপুর বিভাগে ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫৯ জনকে। সিলেট বিভাগে দেওয়া হবে ১০ লাখ ৩২ হাজার একজনকে। তিন রাউন্ডে এই জনগোষ্ঠী টিকা পাবেন।
জেলা পর্যায়ের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ভোলায় টিকা পাবেন এক লাখ ৮৫ হাজার ২৭ জন, ঝালকাঠিতে ৭১ হাজার ৯০ জন, পটুয়াখালী এক লাখ ৫৯ হাজার, পিরোজপুর এক লাখ ১৫ হাজার ৯২৯ জন, বরগুনা ৯২ হাজার ৯৭০ জন, বরিশাল দুই লাখ ৪২ হাজার ৪২ জন। বান্দরবানে ৪০ হাজার ৪৩৯ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৫ জন, চাঁদপুরে দুই লাখ ৫১ হাজার ৫৯২ জন, চট্টগ্রামে ৭ লাখ ৯৩ হাজার ১২৯ জন, কুমিল্লায় ৫ লাখ ৬১ হাজার ৬ জন, কক্সবাজারে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৬৮ জন, খাগড়াছড়ি ৬৩ হাজার ৯৩০ জন, লক্ষ্মীপুরে এক লাখ ৮০ হাজার ৬৯ জন, নোয়াখালীতে ৩ লাখ ২৩ হাজার ৬৬০ জন, রাঙামাটিতে ৬২ হাজার ৬২ জন।
ঢাকায় ১২ লাখ ৫৪ হাজার ২০০ জন, ফরিদপুরে এক লাখ ৯৯ হাজার ২০৭ জন, গাজীপুরে ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৪৬৭ জন, গোপালগঞ্জে এক লাখ ২২ হাজার ৯০ জন, জামালপুরে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৭৪৮ জন, কিশোরগঞ্জে তিন লাখ তিন হাজার ২৩২ জন, মাদারীপুরে এক লাখ ২১ হাজার ৪১৬ জন, মানিকগঞ্জে এক লাখ ৪৫ হাজার ৪৬ জন, মুন্সীগঞ্জে এক লাখ ৫০ হাজার ৫৪৪ জন, নারায়ণগঞ্জে তিন লাখ ৭ হাজার ১৩ জন, নরসিংদীতে দুই লাখ ৩১ হাজার ৬৯৫ জন, নেত্রকোনায় ২ লাখ ৩২ হাজার ১৮৪ জন, রাজবাড়ীতে এক লাখ ৯ হাজার ৩১৯ জন, শরীয়তপুরে এক লাখ ২০ হাজার ৩৬২ জন, টাঙ্গাইলে তিন লাখ ৭৫ হাজার ৪১৬ জন।
বাগেরহাটে এক লাখ ৫৩ হাজার ৭১৩ জন, চুয়াডাঙ্গায় এক লাখ ১৭ হাজার ৫৭০ জন, যশোরে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৮৮৬ জন, ঝিনাইদহে এক লাখ ৮৪ হাজার ৪৫৫ জন, খুলনায় দুই লাখ ৪১ হাজার ৪৪০ জন, কুষ্টিয়ায় দুই লাখ দুই হাজার ৭৩৪ জন, মাগুরায় ৯৫ হাজার ৬৪০ জন, মেহেরপুরে ৬৮ হাজার ২৪৯ জন, নড়াইলে ৭৫ হাজার ১৫১ জন, সাতক্ষীরায় দুই লাখ ছয় হাজার ৮০৮ জন।
বগুড়ায় তিন লাখ ৫৪ হাজার ১৫০ জন, জয়পুরহাটে ৯৫ হাজার ১৫৫ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক লাখ ৭১ হাজার ৫৬৫ জন, নওগায় দুই লাখ ৭০ হাজার ৭৬৮ জন, নাটোরে এক লাখ ৭৭ হাজার ৭২৫ জন, পাবনায় দুই লাখ ৬২ হাজার ৭৫১ জন, রাজশাহীতে দুই লাখ ৭০ হাজার ২৫১ জন, সিরাজগঞ্জে তিন লাখ ২২ হাজার ৫৫৭ জন।
রংপুরে তিন লাখ ২২ জন, দিনাজপুরে তিন লাখ ১১ হাজার ৩৭৭ জন, কুড়িগ্রামে দুই লাখ ১৫ হাজার ৪৮৪ জন, লালমনিরহাটে এক লাখ ৩০ হাজার ৮০৪ জন, গাইবান্ধায় দুই লাখ ৪৭ হাজার ৭৬৪ জন, নীলফামারীতে এক লাখ ৯১ হাজার ৮ জন, পঞ্চগড়ে এক লাখ দুই হাজার ৮৪৮ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে এক লাখ ৪৪ হাজার ৭৫২ জন। এ ছাড়া হবিগঞ্জে দুই লাখ ১৭ হাজার ৫৩৮ জন, মৌলভীবাজারে এক লাখ ৯৯ হাজার ৮৪২ জন, সুনামগঞ্জে দুই লাখ ৫৭ হাজার দুজন, সিলেটে তিন লাখ ৫৭ হাজার ৬১৯ জন।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমএনসিঅ্যান্ডএএইচ-এর লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে টিকা পৌঁছবে ২৭ জানুয়ারি। টিকা পাওয়ার পর কয়েকটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবকদের পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া হবে।
তার এক সপ্তাহ পর, মাঠ পর্যায়ে টিকা দেওয়া শুরু হবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। তালিকাভুক্ত জনগোষ্ঠীকে ৮ সপ্তাহ ব্যবধানে (প্রথম ডোজের ৮ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ) টিকা দেওয়া হবে। প্রথম ধাপে টিকা পাবেন কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসাবে কর্মরত সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। তারপর পর্যায়ক্রমে পাবে অন্য সবাই।
প্রসঙ্গত, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ পাওয়ার জন্য গত ৫ নভেম্বর সেরাম ইনস্টিটিউট এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ। চুক্তি অনুসারে প্রথম ধাপে প্রত্যেক মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা। এ মাসেই যার প্রথম চালান আসছে।
ঢাকা ব্যুরো চীফ,১৩ জানুয়ারি ২০২১