করোনাভাইরাসের চিকিৎসা বা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে- এমনটা মনে করার অন্যতম কারণ ভিটামিন ডি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় একটা ভূমিকা পালন করে।
যুক্তরাজ্যে শীতকালে সবাইকে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করতে সুপারিশ করা হয়। যাদের দেহে এই ভিটামিনের ঘাটতি আছে- তাদের সারা বছর ধরেই এটা খেতে বলা হয়।
কিন্তু, উচ্চমাত্রায় ভিটামিন ডি খেলে কোনো রোগ প্রতিরোধ করা বা তার চিকিৎসা সম্ভব- আজ পর্যন্ত কোনো গবেষণায়ই যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রতীয়মান হয়নি। অবশ্য তার মানে এই নয় যে ভবিষ্যত কোনো গবেষণায় এর কোনো পরিবর্তন হবে না। খবর বিবিসির।
অনেকগুলো জরিপে দেখা গেছে যে, ভিটামিন ডি এবং কোভিড সংক্রমণের পরিণাম- এ দুয়ের মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে। কিন্তু এগুলো হচ্ছে পর্যবেক্ষণ থেকে পাওয়া প্রমাণ। এর অর্থ হলো, কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর ভিটামিন ডি ঘাটতি আছে এমন লোকদের ক্ষেত্রে কী ঘটেছে, তার সঙ্গে উচ্চতর মাত্রার ভিটামিন ডি আছে এমন লোকদের কী ঘটেছে- তার তুলনা করা হয়েছে।
কিন্তু এখানে রোগীদের ওপর অন্য যেসব প্রভাবক কাজ করেছে তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। এগুলো তাই সর্বোচ্চ স্তরের তথ্যপ্রমাণ নয়। সেটা পেতে হলে অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত ট্রায়াল চালাতে হয়- যাতে কিছু লোককে একটি চিকিৎসা পদ্ধতি দেওয়া হয়, অন্য আরও কিছু লোককে দেওয়া হয় একটি ‘ডামি’। যাতে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে, চিকিৎসার যে ফল পাওয়া যাচ্ছে তা ওই বিশেষ পদ্ধতি প্রয়োগের কারণেই হচ্ছে।
তবে এটা ঠিক যে পর্যবেক্ষণভিত্তিক জরিপে দেওয়া যায়, কিছু গোষ্ঠীর মানুষদের ভিটামিন ডি ঘাটতি থাকার ফলে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যেমন- যারা বয়স্ক মানুষ, যারা মোটা হয়ে গেছেন, বা কৃষ্ণাঙ্গ বা দক্ষিণ এশিয়ান জনগোষ্ঠীর মানুষ যাদের ত্বকের রঙ অপেক্ষাকৃত কালো বা বাদামি। এমন হতে পারে যে ভিটামিন ডি কম থাকাটাই এসব জনগোষ্ঠীর করেনাভাইরাস সংক্রমণের বেশি ঝুঁকির কারণ। অথবা এর পেছনে কোনো পরিবেশ বা স্বাস্থ্যগত কারণও থাকতে পারে।
ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় কৃষ্ণাঙ্গ ও দক্ষিণ এশিয়ান বংশোদ্ভূতদের সারা বছর ধরে ভিটামিন ডি খেতে বলা হয়। কিন্তু ভিটামিন ডির ঘাটতির সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা তা শুধু যথাযথ গবেষণার পরই বলা সম্ভব।
কেউ কেউ বলেছেন, অনেক দেশের সরকারই ভিটামিন ডির কার্যকারিতার কথা ‘নামমাত্র’ উল্লেখ করছে এবং তারা জোর দিচ্ছে ভ্যাকসিন ও সংক্রমণের ট্র্যাকিংয়ের ওপর। তাদের মতে, ‘এই উপেক্ষার কারণ হলো বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বড় বড় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির কাছ থেকে টাকা নেয়।’
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যে ডেক্সামেথাসোনের মতো সস্তা ও কার্যকর চিকিৎসা যখন প্রমাণিত হয়েছে তখন সরকারগুলো একে ঠিকই গ্রহণ করেছে। তাছাড়া ভিটামিন বিক্রি নিজেই একটি কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা।
তবে ভিটামিন ডি তুলনামূলকভাবে ঝুঁকিমুক্ত। তাই ভুয়া তথ্য হিসেবেও একে খুব একটা ক্ষতিকর বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় না।
ঢাকা চীফ ব্যুরো, ০৬ এপ্রিল , ২০২১;