মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। ।স্রষ্টা মানুষকে দিয়েছেন চিন্তার স্বাধীনতা, চলার স্বাধীনতা ও কর্মের স্বাধীনতা। একেক মানুষের জন্ম একেক স্থানে হয়ত উন্নত বিশ্বের কোন দেশে নয়তো আফ্রিকার কোন অনুন্নত দেশে।আমাদের ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, সংস্কৃতি, খাদ্যাভাস আলাদা হলেও দিনশেষে আমরা সবাই মানুষ।স্রষ্টার অনেক বড় বড় ও শক্তিশালী সৃষ্টির মাঝে টিকে থাকার জন্য মানুষের আছে জ্ঞানের ও কৌশলের শক্তি।মানুষ স্থলে, বন্দরে, মহাকাশে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের জানান দিয়েছে বিভিন্ন আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে।সমগ্র পৃথিবী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির একটি উৎকৃষ্ট সময় পার করছে।
সাবমেরিন ও অন্যান্য গবেষণার মাধ্যমে আমরা যেমন গভীর মহাসাগরের তলদেশের কথা জানি, তেমনি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে জানি মহাকাশ ও পৃথিবীর অবস্থা। অনেক কিছুরই আগাম বার্তা আমরা জানতে পারি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতিও অবিশ্বাস্য উন্নতি সাধন করেছে নিউরোসার্জারী, ওপেনহার্ট সার্জারী,ক্যান্সার চিকিৎসা ও লিভার ট্রান্সপ্লান্টের মত কঠিন কঠিন ক্ষেত্রে।
পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশ মেগা প্রকল্প নিয়ে পারমানবিক অস্ত্র বানাচ্ছে না হয় যুদ্ধাস্ত্র বানাচ্ছে মানুষকে মারার জন্য।কিন্তু মানুষকে বাঁচানোর জন্য গবেষণা কই? পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যে পরিমান অর্থ যুদ্ধ বিমান ও অস্ত্রের পিছনে খরচ করে তার সিকিআনাও কি খরচ করে মানুষকে বাঁচানোর পিছনে!মানুষই একমাত্র প্রাণী যে সাময়িক ভালো থাকার জন্য অন্যের অধিকার, হক নষ্ট করে এমনকি হত্যা পর্যন্ত করতে দ্বিধাবোধ করে না।মানুষকে মেরে ফেলা হয়ত হয়তো খুবই সহজ কিন্তু বাঁচানো অনেক কঠিন।
আমাদের এত জ্ঞান, গবেষণা, এত আবিষ্কার, এই উৎকর্ষতা, এত ক্ষমতা সবিই আজ নিরুপায় খুবই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটা ভাইরাসের কাছে যার কোন প্রতিষেধক নেই আমাদের হাতে।যেটাকে আমরা দেখিও না, অবস্থান অনুভবও করতে পারিনা, সেই অদৃশ্য শক্তির হাতে মারা গেল পৃথিবীর প্রায় লাখের উপর মানুষ। যেসব উন্নত দেশে কোভিড-১৯ এ হাজার হাজার মানুষ মারা গেল, কি নেই তাদের কাছে, কি ফ্যাসিলিটির অভাব তাদের! তারা তো ঘরে বসেই সারা পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করে।এই ভাইরাসের কোন আগাম সর্তকতাতো দিতে পারলো না যদিও সাইক্লোন, টনেডোর মত মহাপ্রলয়ের সংকেত ও পূর্বাভাস দেয়।২০১৯ সালেও কি মানুষ বুঝতে পারছে যে ২০২০ সালটা এত কঠিন হবে?যা ছিল মানুষের কল্পনারও বাহিরে।পৃথিবীটা সব লেভেলের মানুষ রাজা,প্রজা,ধনী,গরিব সবার জন্য পৃথিবীটা কারাগার হয়ে যাবে।
শক্তিশালী ও উন্নত রাষ্ট্রগুলো নিরুপায় হয়ে যাবে, তাদের সামনেই মানুষ মহামারিতে মরে যাবে যথোপযুক্ত চিকিৎসার অপ্রতুলতার কারণে এমনটা কি কেউ ভেবেছে।এই নভেল করোনা ভাইরাস দেখিয়ে দিয়েছে আসলেই আমরা কতটা সম্ভ্রান্ত? সত্যিই তো সম্ভ্রান্ত কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির পাশে কেউ যেতে চায় না অথবা যেতে দেয়া হয় না।এই ভাইরাস প্রমাণ করলো মানুষ আসলেই কত অসহায়।
হাসপাতাল ও বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী পিপিই পড়া ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের দেখলেই তো ভয় লাগে ধবধবে সাধা পোশাকের কারণে। আর সারাদিন পিপিই পড়ে সেবা দেয়া যে কত কষ্টকর যারা সেবা দিচ্ছে তাঁরাই বলতে পারবে। যুদ্ধবাজী, হানাহানি, মারামারি,দুর্নীতি, অত্যাচার, অবিচার, হিংসা এবং গীবত বাদ দিয়ে সুন্দর ও মানবিক পৃথিবী গড়ে তুলি।মানুষকে মারার জন্য নহে সকল গবেষণা, আবিষ্কার ও উদ্ভাবন হোক। মানুষের কল্যাণে।যার যার অবস্থান থেকে মানুষের পাশে দাঁড়াই।সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। ঘরেই থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
লেখকঃ মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ
বিএসসি ইন টেলিকম. এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং(হাবিপ্রবি)
সহকারী প্রোগ্রামার, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর।