করোনা ডেডিকেটেড চাঁদপুর ২৫০ শয্যার সরকারি জেনারেল হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। ঈদের আগের দিন থেকে হঠাৎ করেই করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় এ সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, গত ২৩ জুলাই সন্ধ্যা থেকে ২৪ জুলাই সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আইসোলশন ওয়ার্ডে ৬ রোগীর মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে ২ জন নারী ও ৪ জন পুরুষ। করোনা উপসর্গ নিয়ে বাকি ৩ জনের মৃত্যু হয় কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিব উল করিম জানান, ‘অক্সিজেন সংকট তেমন বেশি না, মাঝে মাঝে সমস্যা হয়। রোগী বেড়ে যাওয়ার কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। শনিবার এ হাসপাতালে ১৪৮ জন আইসোলেশনে ছিলেন। ঈদের আগের দিন থেকে অনেকটা জোয়ারের মতো রোগী বাড়ছে।’
অক্সিজেন সরবরাহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গত ১৫ জুলাই থেকে আবুল খায়ের গ্রুপ অক্সিজেন দিচ্ছে। এছাড়া কুমিল্লা থেকে প্রতিদিনই অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল করে আনা হচ্ছে। এরপরও সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। অক্সিজেন সংকট কিছু সময়ের জন্য হলেও তা খুব বেশি না। হাসপাতালে বর্তমানে ২৪০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে। যার মধ্যে ১৮০টি বড় এবং ৬০টি ছোট সিলিন্ডার।’
তিনি আরও জানান, স্পেকট্রার মাধ্যমে নির্মিত সদর হাসপাতালের অক্সিজেন প্লান্ট পুরোপুরি প্রস্তুত। তবে লিকুইড অক্সিজেন আসতে দেরি হওয়ার কারণে তা চালু করা যাচ্ছে না। সারাদেশের ৩০টি লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট এখনও চালু করা যায়নি। অক্সিজেন পেলে এগুলো চালু হবে।
আরও পড়ুন… চাঁদপুরে প্রস্তুত লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট, অচিরেই সেবা পাবে রোগীরা
চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘রোগী যে হারে বাড়ছে, তাতে এখন অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা হাসপাতালে করোনা বেড থাকার পরেও সেসব এলাকার রোগীরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালমুখী হচ্ছেন। সদর হাসপাতালে মাঝে মাঝে অক্সিজেন কমে যায়। অনেক সময় সিলিন্ডার খালি হয়ে যায়। রাতে কিছুটা সংকট মাঝে মাঝে দেখা দেয়। আবার রিফিল করলে ঠিক হয়ে যায়। একটা সিলিন্ডার তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। নবনির্মিত লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট চালু হয়ে গেলে এ সমস্যা কেটে যাবে। আগামি রোববারের মধ্যেই এটি চালু হয়ে যাবে বলে নির্মাতারা জানিয়েছেন।’
তিনি জানান, চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি দিন দিনই অবনতি হচ্ছে। গড়ে এখন ৩শ’র উপরে নমুনা নেওয়া হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় পাঁচ জন হাসপাতালে মারা গেছেন। এ যাবৎ জেলায় সাত হাজার ৯শ’ ৫৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। গত কয়েকদিনে আক্রান্তের হার ৪৫ থেকে ৫৫ শতাংশ। জেলার এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ১৫৪ জন।
তাছাড়া চাঁদপুরে বাড়ি কিন্তু ঢাকা বা অন্য কোথায়ও মারা গেছেন আরও ১৯৩ জন। সেই হিসাবে জেলার ৩৪৭ জন অধিবাসী করোনায় মারা গেছেন।
প্রসঙ্গত, গত দুই মাস আগে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের ইউনাইটেড ন্যাশন ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন্স ইমার্জেন্সি ফান্ড (ইউনিসেফ) এর অর্থায়নে লিকুইড অক্সিজেন প্ল্যান্টের কাজ শুরু করা হয়। যা বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। হাসপাতালের উত্তর পাশের খালি জায়গাটিতে ৫১ লাখ ৬০ হাজার মিলিলিটারের প্ল্যান্টের অক্সিজেন সংরক্ষণের ট্যাংকি, সেবা কার্যক্রমের ভবনসহ সকল কাজও ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এটি থেকে প্রায় দেড়শ’ আউটলেট সংযোগ দেয়া হয়েছে।
মূল প্ল্যান্টটি হচ্ছে ছয় হাজার লিটারের। এটি অক্সিজেনে রূপান্তর হলে ৫১ লাখ ৬০ হাজার মিলিলিটারে রূপান্তর হয়। এটির কাজ সম্পন্ন হলে চাঁদপুরের চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো সময় লিকুইড অক্সিজেন পাওয়া যাবে।
প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ২৫ জুলাই ২০২১