চাঁদপুর

করোনা আক্রান্ত বাড়লেও চাঁদপুর সদর হাসপাতালে বাড়েনি সেবার মান

চাঁদপুরে হু হু করে প্রতিদিনই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। যার কারনে চাঁদপুর ২৫০ শয্যা সরকারি হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা করাতে মানুষের ভিড় বাড়ছে প্রতিদিন। করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা ও সংক্রমিত রোগীর চিকিৎসা নিয়ে মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নমুনা পরীক্ষা থেকে শুরু হয় ভোগান্তি, আক্রান্ত হলে চিকিৎসা পর্যন্ত চলে দুর্ভোগ। এর শেষ হয় মৃত্যু অথবা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার মাধ্যমে। সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য নমুনা পরীক্ষা করা এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

এদিকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে করনো ও করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগীর মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। গত কয়েকদিনে ৮-১০জন রোগী চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা গেছেন। এর মধ্যে কিছু রোগী করনোয় আক্রান্ত ছিলেন এবং বাকিরা করনোর উপসর্গ নিয়ে ভর্তি ছিলেন।

রোবাবার চাঁদপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে দু’জন মারা যায়। তাদের দু’জনের বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে। রোববার সকালে করনোর উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হন মোস্তফা কামাল (৬০)। তিনি ভর্তির ৫০ মিনিটের মাথায় মারা যান। অপরদিকে একই দিন বিকেলে আব্দুল কাদের পাটওয়ারী (৬৫) হাসাপাতলে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যান। করোনার উপসের্গ মারা যাওয়া উভয়ের পরিবারের লোকদের সাথে মুঠোফোনে কথা হয়।

তারা জানান, করোনার উপসর্গ বেশি দেখে আমরা চিকিৎসার জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে তারা ভালো ভাবে না দেখেই হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে কিভাবে আছে, কি চিকিৎসা দিচ্ছে এসব কথা জিজ্ঞেস করলে খারাপ আচরন করেন দায়িত্বরত চিকিৎকরা। চাঁদপুরে করোনা চিকিৎসা অবহেলার কারনে তাদের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে থেকে যারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন কথা হয় কয়েকজনের সাথে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকরা জানান, আল্লাহ তায়ালা আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন বলে এখনো বেঁচে আছি। হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে যাওয়ার পর থেকে নিজেদের মধ্যে একরমক ভিতি সৃষ্টি হয়েছে। মনে হয়েছিলো, এই বুজি মারা যাবো। আইসোলেশন ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সরা আমাদের কোন কথা শুনতেই নারাজ। কোন রকম ভাবে আমাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হতো। যাদের অবস্থা বেশি খারাপ থাকতো, তাদের কাছেও কেউ যেতো না। আইসোলেশন ওয়ার্ডে এক প্রকার মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করেই টিকে থাকতে হয়।

এত সম্যার পরও চাঁদপুরে বাড়েনি হাসপাতালের সেবার মান। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সব রকম প্রস্তুতি আছে, তাহলে কেনো হাসপাতালে গিয়ে কাঙ্খিত সেবা পাবে না রোগীরা। জানা যায়, চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ক্লিনার, আয়া বা সহায়তাকারী লোকবল নেই। এছাড়া নেই আইসিইউ ইউনিট। ভেন্টিলেশনের সুবিধাও নেই।

এদিকে অভিযুক্তদের কথা মতে সোমবার দুপুরে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালের আরএমও ফোকালপার্সন ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেলের কক্ষে যাওয়া হয়। ওই সময় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ রাজারগাঁও থেকে আসা করোনার উপসর্গ তাজুল ইসলাম (৬১) এর মেয়ে মরিয়ম বেগমের আকুতি ছিলো দেখারমত। আমার বাবাকে বাচাঁন। সারদিন অপেক্ষা করেছি, করোনা পরীক্ষা নেয়নি।

এ বিষয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা মরিয়ম বেগম বলেন, আমার বাবা অনেক অসুস্থ্য। তার করোনার উপসর্গ রয়েছে। হাসপাতাল থেকে বলেছে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। তার পরপরই আমি নাম, ঠিকানা সব দিয়েছি কিন্তু আমার বাবার করোনা পরীক্ষা করা হয়নি। বাবা ও কোলের বাচ্চাটাকে নিয়ে সারাদিন অপেক্ষা করেছি।

এ ঘটনায় চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডা.আনোয়ারুল আজিমের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। তবে হাসপাতালের আরএমও ফোকালপার্সন ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল একই ভাবে প্রতিবেদকের সাথে ব্যস্ততা দেখান। তিনি বলেন, এখন কোন কিছু বলা যাবে না। রাত ৮টার পর আসেন।

হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে কি রকম চিকিৎসা দেওয়া হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনরা কি জানেন না কি চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঔষুধ, সেলাইন যা দরকার তাই দেওয়া হয়। আইসোলেশন ওয়ার্ডে কতজন মারা গেছে তা আমার জানা নেই। পরে ফাইল দেখে বলতে পারবো।

চাঁদপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. শাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, চাঁদপুর জেলায় এ পর্যন্ত মৃত ৩৯ জনের নমুনা টেস্ট করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জন পজেটিভ এবং ১৭ জন নেগেটিভ। বাকি আরো ৬ জনের বাকি রয়েছে।

তিনি জানান, চাঁদপুরে আইসিইউ এর অভাবে বেশির ভাগ করোনা রোগী মারা যাচ্ছে। আইসিইউ সাপোর্ট, সেন্ট্রাল অক্সিজেন, ল্যাব ও আরটিবিসিআর প্রয়োজন। এসব হলে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা উন্নত হবে।

প্রতিবেদক: শরীফুল ইসলাম,২ জুন ২০২০

Share