প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস দিনদিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে মরুর দেশ সৌদি আরবে। করোনায় সৌদিতে মৃতদের মধ্যে বাংলাদেশি ২০ শতাংশ। প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রায় প্রতিদিনই নতুন করে রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্তের খবর জানাচ্ছে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৫১ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৮৫ জন। আর মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৭ জন। দূতাবাস এবং কনস্যুলেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সৌদিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১১ জন বাংলাদেশি প্রবাসী।
যা মোট মৃত্যুহারের ২০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে মদিনায় ৭ জন এবং তাদের চারজনই চট্টগ্রামের।
বাংলাদেশ দূতাবাস রিয়াদ এবং বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল জেদ্দা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া বাংলাদেশিরা হলেন, সাভারের কোরবান (মদিনা), নড়াইলের ডাক্তার আফাক হোসেন মোল্লা (মদিনা), চট্টগ্রামের মোহাম্মদ হাসান (মদিনা), চট্টগ্রামের মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন (মদিনা), ভোলার মোহাম্মদ হোসেন (রিয়াদ), পাবনার আব্দুল মোতালেব (রিয়াদ), মানিকগঞ্জের মান্নান মিয়া (জেদ্দা), চট্টগ্রামের মোহাম্মদ রহিম উল্লাহ (মদিনা), নরসিংদীর খোকা মিয়া (মদিনা), চট্টগ্রামের নাসির উদ্দিন (মদিনা) এবং আজিবর (মদিনা)।
সৌদি সরকার করোনার বিস্তার রোধ করতে নানামুখি পদক্ষেপ নিয়েছে। পাশাপাশি নাগরিক এবং বিদেশিদের সচেতন করতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক তথ্য দিয়ে সেলফোনে ২ বিলিয়নের বেশি ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশিদেরকে সচেতন করতে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রচারপত্রে বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
এছাড়াও সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ’র দেয়া একটি বাংলা বক্তব্য প্রচারের পরিকল্পনা নিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এতো কিছুর পরেও কিছু কিছু এলাকার বাংলাদেশিরা এখনো বেপরোয়া। ২৪ ঘণ্টা কারফিউ চলমান থাকার পরেও তারা অকারণে জমায়েত হচ্ছেন।
বাংলাদেশিদেরকে স্থানীয় আইন মেনে ঘরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছে মিশনগুলো। বড় বড় শপিং মলের সামনে করোনা থেকে বাচার বিভিন্ন উপার সম্বলিত রোল আপ স্ট্যান্ড লাগানো হয়েছে।
বাংলাদেশিরা খুব বেশি আইন মানছেন না এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। তারা বলছেন কিছুকিছু এলাকায় কিছু অতি উৎসাহী বাংলাদেশিদের কারণের সৌদি আরবে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিরা বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখিন হতে পারেন। সৌদি আরবে কর্মরত বেশিরভাগ বাংলাদেশি যেহেতো নিম্ন আয়ের এবং গণবসতিতে বাস করেন। সেহেতু এখনই যদি সতর্ক না হয় তাহলে সামনে ভয়ঙ্কর পরিণতি অপেক্ষা করছে বলেও মত দেন অনেকে।
ফয়সাল আহমেদ নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, স্বাভাবিক কমন সেন্স থেকে আশঙ্কা করছিলাম সৌদি আরবের বিভিন্ন কোম্পানির লেবার ক্যাম্পে ভাইরাস বিস্তার লাভ করলে কি বিপর্যয় হতে পারে। শুক্রবারের খবর অনুযায়ী মদিনা শহরের বিভিন্ন লেবার ক্যাম্পে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, পূর্বাঞ্চলেও নাম করা কয়েকটি বড় কোম্পানির লেবার ক্যাম্প রয়েছে, যেখানে আছে হাজার হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক। রাব্বুল আলামীন নিরাপদ রাখুন। প্রত্যেকেই নিজ সহকর্মীর মোবাইল নাম্বার, পাসপোর্ট, ইকামা কপি নিজের পরিবারের নিকট পাঠিয়ে রাখলে ভাল হবে।
মো. ফজলুল হক শেখ লিখেছেন, সৌদিতে কারপিউর (কারফিউ’র) মধ্যেও হারা বাঙ্গালী অধ্যসিত (অধ্যুষিত) এলাকায় একটি জংলি ডিস্টিকের মারামারি দেখে মনে হল কতটা বর্ভর (বর্বর) এরা, জাতি হিসেবে দায়বার (দায়ভার) আমাদের কাদেও (কাঁধেও)।
এছাড়াও অনেক বাংলাদেশি ছবি এবং ভিডিও পোস্ট করে বাংলাদেশিদের আইন না মানার বিষয়টি তুলে ধরে দূতাবাসের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বাংলাদেশ দূতাবাস রিয়াদের শ্রম কল্যাণ কাউন্সিলর মো. মেহেদী হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দূতাবাসের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে বলা হচ্ছে। খাদ্য সংকটে থাকা প্রবাসীদেরকে দূতাবাসের পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। ৫-৬হাজার বাংলাদেশির কাছ থেকে ম্যাসেজ পাওয়া গেছে। তবে এখন যেহেতু ২৪ ঘণ্টা কারফিউ সে কারণে আমরা কোথাও মুভ করতে পারছি না। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। সহায়তা বিতরণের জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তারা সম্মতি দিলে আমরা সাহায্যপ্রার্থী প্রবাসীদের তথ্য ও সামগ্রী দিব। তারা ঘরে ঘরে সেটা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করবে। যোগ করেন এই কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ ইউং এর একটি টোল ফ্রি হটলাইন নাম্বার (৮০০১০০০১২৫) প্রবাসীদের সেবায় ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা হয়েছে। প্রবাসীরা চাইলে এখানে কল করে যেকোন ধরনের পরামর্শ নিতে পারবেন এজন্য ফোনে কোন টাকা কাটবে না।
বার্তা কক্ষ, ১১ এপ্রিল ২০২০