নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভুল তথ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া বাবুল চন্দ্র দাস (৫০) নামে হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক ব্যক্তিকে মুসলমান হিসেবে দাফন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যোগাযোগ না করেই করোনা সংক্রমণের ভয়ে মৃতের স্বজনরা মরদেহ নিতে আসছে না বলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) এক কাউন্সিলরকে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানাজা ও দাফনের খবরে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাবুল চন্দ্র দাসের পরিবার ও তার কর্মস্থল সৈয়দপুর এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করছে তারা।
নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালকে বর্তমানে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়েছে। ১৫ এপ্রিল হাসপাতালের আইসোলেশনে বাবুল চন্দ্র দাসকে ভর্তি করে আসেন গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সৈকত হোসেন। ১৭ এপ্রিল সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
হাসপাতালের সুপারইনটেনডেন্ট ডা. এম এ বাশার জানান, হাসপাতালের এন্ট্রি খাতার তথ্য অনুযায়ী মৃত রোগীর নাম বাবুল। বয়স পঞ্চাশ। সৈকত নামের একজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সৈয়দপুর এলাকায় তার বাড়ি।
তিনি আরও জানান, হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে তার আত্মীয়রা কেউ খোঁজ নেয়নি। মৃত্যুর পর তার পরিবারকে জানানো হলেও করোনা রোগী হওয়ায় তারা মরদেহ নিতে চাচ্ছে না। তাই মরদহে দাফনের জন্য নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকুকে জানানো হয়েছে।
খবর পয়ে কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকুসহ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দাফন টিম এসে মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করে। এ বিষয়ে কাউন্সিলর বলেন, ‘যেহেতু হাসপাতালের রেকর্ডে মৃতকে মুসলমান হিসেবে উল্লেখ করা হয়, তাই আমরা মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করি। এছাড়া গোসলের সময় মৃতকে খৎনা করা দেখতে পাই।’
তবে মৃত বাবুল দাসকে হাসপাতালে নিয়ে আসা নারায়ণগঞ্জের গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সৈকত হোসেন বলেন, ‘বাবুল চন্দ্র দাস ছয় বছর ধরে আমাদের এলাকার খোকন মন্ডল খোকার দোকানে দর্জি হিসেবে কাজ করতো। নিজ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বললেই চলে। তাই সে দোকানেই ঘুমাতো। হোটেলে খেতো। ১৪ এপ্রিল সে অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা তাকে মহাখালী নিয়ে যাই চিকিৎসা করাতে। সেখানে তাকে পরীক্ষা করে দেখে যে তার করোনা পজিটিভ।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরদিন তাকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। ভর্তির সময়ই আমরা তার নাম বাবুল চন্দ্র দাস বললেও তার পুরো নাম এন্ট্রি খাতায় না লিখে শুধু বাবুল লেখা হয়। ১৮ এপ্রিল সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রথম আমরা তার মৃত্যুর খবর পাই। পরে যখন হাসপাতাল থেকে আমাকে ফোন দেয়া হয় তখন মরদেহ দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার মৃত্যুর পরপর যদি আমাদের ফোন দিতো তাহলে আমরা হাসপাতালে গেলে মরদেহ হিন্দু না মুসলিম তা শনাক্ত হতো। আর তার মরদেহ সৎকারের ব্যবস্থা আমরাই করতাম।’
বাবুলের খৎনা করার প্রসঙ্গে সৈকত বলেন, ‘তিনি হিন্দু হলেও তার খতনা করা ছিল।’
মৃত বাবুল দাসের সঙ্গে তার স্ত্রীর ১০-১৫ বছর ধরে সম্পর্ক নেই বলে জানান তার মেয়ে কৃষ্ণা রানী দাস। তিনি কুমিল্লার মতলব উপজেলার লবারকান্দিতে থাকেন। মোবাইল ফোনে তিনি জানান, অন্তর নামে তার এক ভাই রয়েছে। তার বাবা যার দোকানে কাজ করতেন সেই খোকন মন্ডলের কাছ থেকেই তিনি বাবুলের মৃত্যুর খবর পান। হাসপাতালের কেউ তাকে তার বাবার মৃত্যুর খবর জানায়নি।
তিনি জানান, লকডাউনের কারণে তার পক্ষে নারায়ণগঞ্জ আসা সম্ভব না। তার বাবা যে এলাকায় থাকতেন তিনিও সেখানকার সবার সহায়তা নিয়েই সৎকারের ব্যবস্থা করতেন।
সোমবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে হাসপাতাল সুপার ডা. বাশার বলেন, ‘বাবুল করোনা পজিটিভ এটি জানার পর থেকেই তার পরিবার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। যেদিন বাবুল মারা যান সেদিন বারবার তার পরিবারকে ফোন দেয়া হয়। কিন্তু তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘লোকটি মুসলমান। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে তার দাফন করা হয়।’
হাসপাতাল থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়নি এমন অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমাদের নার্স ডাক্তাররা তার পরিবারের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। সম্ভব হয়নি বলেই এ কনফিউশন তৈরি হয়েছে।’
ঢাকা চীফ ব্যুরো,২০ এপ্রিল,২০২১;