বিশেষ সংবাদ

করোনায় কি দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়া আশংকা আছে! কি বলছেন গবেষকরা?

করোনার ভয়াল আঘাতে মৃত্যুপুরী হয়ে উঠছে বিশ্বের একের পর এক দেশ। কোন ওষুধ নেই, প্রতিষেধক নেই। মারাত্মক ছোঁয়াচে এই মারণ ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় সংক্রমণ থেকে বেঁচে থাকা। এতদিন চিকিৎসক ও গবেষকদের ধারণা ছিল করোনা থেকে একবার সৌভাগ্যক্রমে সুস্থ হয়ে উঠলে শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়ে যায়, দ্বিতীয়বার আর সংক্রমিত হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না। তবে সেই ধারণাও ভুল।

জাপানে ৪০ বছর বয়সী এক নারী দ্বিতীয়বারের মতো কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় এখন প্রশ্ন উঠেছে ভাইরাসটি দ্বিতীয়বার কাউকে আক্রমণ করতে পারে কি-না। ভাইরাসটির দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে অনেক গবেষণা চলছে। তবে এখনো নির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি গবেষকরা।

এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ব্রাডফোর্ড এবং ইউনিভার্সিটি অব লিডস স্কুল অব মেডিসিন-এর জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ডা. আমির খান। ভাইরাসটি দ্বিতীয়বার আক্রমণের বিষয়ে তিনি বলেন-

“করোনাভাইরাস দ্বিতীয়বার আক্রমণ করে কিনা তা বোঝার আগে আমাদের এটা জানা জরুরি যে, আমাদের শরীর কীভাবে প্রথমে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। যখন কোনো রোগজীবাণু (ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া) মানব শরীরে প্রবেশ করে, তখন শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রথমে এটিকে এলিয়েন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। শরীরের কিছু নির্দিষ্ট রক্তকণিকা রয়েছে যাদের কাজ শরীরকে পাহারা দেওয়া এবং নতুন কোনও সংক্রমণ দেখা দিলে ব্রেনে দ্রুত সতর্কতা পাঠানো।

এই সতর্কসংকেত পাওয়ার পর শরীর নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি উৎপাদন শুরু করে প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে থাকে। এই প্রক্রিয়াটি সময় নেয় কারণ সংক্রমণটি কাটিয়ে ওঠার জন্য নির্দিষ্ট স্তরের অ্যান্টিবডিগুলি উৎপাদনেও সময় বেশি লাগে।

যেহেতু প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে শরীরের একটু সময় লাগে তাই এই সময়ের মধ্যে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াটি বহুগুণে বৃদ্ধি পায় এবং মানুষকে অসুস্থ করে ফেলে।

ভাইরাসটির সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডিগুলো তৈরি করতে শরীরের কয়েক দিন বা সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে, সেই সময়টিতে ভাইরাসটি তার সংক্রমণের লক্ষণগুলো প্রকাশ করতে থাকে। যখন শরীরে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তখন সংক্রমণটি কাটিয়ে ওঠে এবং মানুষটিও সুস্থ হয়ে উঠতে শুরু করে।

এই সময়ে মানব শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা একটি বুদ্ধিদীপ্ত কাজ করে রাখে ভবিষ্যতের জন্য। এটি কিছু মেমরি কোষ তৈরি করে রাখে। ভবিষ্যতে একই ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ শরীরে আবার প্রবেশ করলে তখন এই মেমরি কোষগুলো ভাইরাসটি দ্রুত ধ্বংস করে দেয়।

দ্বিতীয়বারের বেলায় মানুষের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা এত তাড়াতাড়ি কাজ করে যে ব্যক্তি টেরই পায় না তিনি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। এই প্রতিরোধ ক্ষমতা সাধারণত সারা জীবনের জন্য স্থায়ী হয়। এটি আবার সবসময় হয় না, তাই অনেক ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কাও থাকে।

কভিড-১৯ রোগ ছাড়াও করোনাভাইরাসের কারণে আরও অনেক রোগ হয়ে থাকে। এই করোনা পরিবারের বিভিন্ন ভাইরাসের কারণে মানুষের সর্দি কাশি লেগেই থাকে। যেসব ব্যক্তি অন্যান্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন তাদের ২-৩ বছরের জন্য একই ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হয়ে থাকে। সুতরাং তারা আবার আক্রান্ত হবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

করোনা পরিবারের ভাইরাস ঠেকানোর জন্য মানব শরীরে মেমরি কোষের তৈরি প্রতিরোধ ব্যবস্থা আগে থেকেই থাকার কারণে কভিড-১৯ রোগে দ্বিতীয়বার কেউ আক্রান্ত হতে পারেন কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় থেকে যায়।

চীনে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত একাধিক বানরের শরীরের আবার একই ধরনের ভাইরাস প্রবেশ করানো হয়। এরপর দেখা যায় যে তারা দ্বিতীয়বারের মতো কেউ এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়নি।

তবে কভিড-১৯ রোগের দ্বিতীয়বার সংক্রমণ নিয়ে ইমিউনোলজিস্টরা একমত যে, এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

কিছু বিশেষজ্ঞ বলেছেন, কভিড-১৯ রোগ দ্বিতীয়বার হওয়ার আশঙ্কা নেই। লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক মার্টিন হিবার্ড বলেছেন, যদিও এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমাদের আরও প্রমাণের প্রয়োজন আছে। তবে বিভিন্ন ডেটা পর্যালোচনা করে এখন এটা বলা যায় যে , সারস-সিওভি-২ তে কারও দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই সারস-সিওভি-২, কভিড-১৯ এর আর একটি নাম। (সূত্র: আল জাজিরা)

বার্তা কক্ষ, ৬ এপ্রিল ২০২০

Share