বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। কেউ চাকরি কেউ ব্যবসা আবার কেউ বিভিন্ন পেশায় হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে কষ্টার্জিত অর্থ দেশে পাঠান। গত বছরের শেষের দিকে চীনের উহান প্রদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর থেকে পর্যায়ক্রমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ রোগটি ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ রোগটিকে বিশ্ব মহামারি বলে ঘোষণা করেছে। এ মহামারির বিরূপ প্রভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা বিপাকে পড়েছেন। প্রবাসীদের অনেকেই কাজ না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে নিরুপায় হয়ে দেশে ফিরছেন।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১ এপ্রিল থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে সর্বমোট দুই লাখ নয় হাজার ২৪৫ জন প্রবাসী দেশে ফিরেছেন। তাদের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৮৬ হাজার ৩০৯ জন ও নারী ২২ হাজার ৯৩৬ জন।
সূত্র জানায়, ফেরত আসা কর্মীদের মধ্যে নয়টি দেশ থেকে কাজ না থাকায় ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছেন ৫৪ হাজার ৪২৪ জন। কাতার থেকে সর্বাধিক সংখ্যক ২১ হাজার ২৫৭ জন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ৭১ জন, মালয়েশিয়া থেকে নয় হাজার ৯৫২ জন, থাইল্যান্ড থেকে ৮৯ জন, মিয়ানমার থেকে ৩৯ জন, ইরাক থেকে আট হাজার ২৮২ জন, তুরস্ক থেকে ১২২ জন, লেবানন থেকে ছয় হাজার ৫০৬ জন এবং কম্বোডিয়া থেকে ১০৬ জন ফেরত এসেছেন। এছাড়াও অন্যান্য কারণে আরও কয়েক হাজার শ্রমিক ফিরে এসেছেন।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীকর্মী ফেরত এপ্রিল মাস থেকেই অব্যাহত রয়েছে। প্রবাস ফেরত দুই লাখ নয় হাজার ২৪৫ জনের মধ্যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আসা কর্মীর সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। ৫৩ শতাংশ কর্মীই এ দুটি দেশ থেকে এসেছেন। প্রতিদিনই এ সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
সূত্র জানায়, ফেরত আসা কর্মীদের মধ্যে বৈধ পাসপোর্ট নিয়ে এক লাখ ৭৫ হাজার ৮১০ জন এবং আউটপাসের মাধ্যমে ৩৩ হাজার ৪৩৫ জন এসেছেন। তাদের মধ্যে কেউ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা খেটে, কেউ করোনার কারণে কাজ না থাকায় বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া আবার কেউ ভিসার মেয়াদ না থাকায় সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশে ফেরত এসেছেন।
১ এপ্রিল থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত প্রবাসীকর্মীদের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট ২৮টিসহ অন্যান্য দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫২ হাজার ৫৬৫ জন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফেরত এসেছেন (পুরুষ ৪৮ হাজার ৬৭৮ জন জন ও নারী তিন হাজার ৮৮৭ জন)। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ না থাকায় তারা কর্মীদের পাঠিয়েছে। কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের আবার নেয়ার হবে।
এছাড়া সৌদি আরব থেকে ৫৪ হাজার ৪১০ জন, মালদ্বীপ থেকে ১১ হাজার ৮১১ জন, সিঙ্গাপুর থেকে তিন হাজার ৫৫৭ জন, ওমান থেকে ১২ হাজার ৬৭৯ জন, কুয়েত থেকে ১০ হাজার ৭০৬ জন, বাহরাইন থেকে এক হাজার ৩২৭ জন. জর্ডান থেকে দুই হাজার ১৯৭ জন, ভিয়েতনাম থেকে ১২১ জন, ইতালি থেকে ১৫১ জন, শ্রীলঙ্কা থেকে ৫৪৮ জন, মরিশাস থেকে ৪৫২ জন, রাশিয়া থেকে ১০০ জন, নেপাল থেকে ৫৫ জন, হংকং থেকে ১৬ জন, জাপান থেকে আটজন, লন্ডন থেকে ৫৩ জন, লিবিয়া থেকে ৩১৫ জন এবং অন্যান্য দেশ থেকে ১২৮ জন ফিরে আসেন।
বার্তা কক্ষ, ২০ অক্টোবর ২০২০