সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে এসব শিক্ষক আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
তাদের সঙ্গে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা নানাভাবে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। তবে কারো অবস্থা আশঙ্কাজনক না হলেও নিজ উদ্যেগে অনেকে সুস্থ হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে অন্তত ১৫ জনের অবস্থা মুমূর্ষু। নিজ উদ্যোগেই নানাভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। নিম্ন বেতনের প্রাথমিক শিক্ষকরা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বড় ধরনের সংকটে পড়েছেন। পরিবারের সদস্যরাও কেউ কেউ আক্রান্ত হয়েছেন। এর বাইরে মাঠ পর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের আক্রান্ত হওয়ার খবরও মিলেছে।
আক্রান্ত শিক্ষকরা জানিয়েছেন, এই শিক্ষকদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে তাদের কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয়নি। তবে স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আক্রান্তদের নানা ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। কারও চিকিৎসকের পরামর্শ লাগলে সেই ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। যেসব শিক্ষক কভিড-১৯ আক্রান্ত, তাদের বেশিরভাগই নিজের বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন। আর হাসপাতালে ভর্তি আছেন কয়েকজন।
শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাজিয়া সুলতানা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গুরুতর অসুস্থ তিনি। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। গত মাসে এই ভাইরাসের থাবায় একই সঙ্গে প্রাণ হারিয়েছেন রাজিয়ার বাবা ও মা। চট্টগ্রাম মহানগরীর উত্তর পাহাড়তলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফারহানা শবনম গত বৃহস্পতিবার মারা গেছেন।
সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন- কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার বাড়েরা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাইফুল ইসলাম, একই বিদ্যালয়ের ইসরাত জাহান, কাদুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাসুম মিয়া ও তার মা দক্ষিণ ভোমরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাফুজা বেগম। আরও রয়েছেন ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার গজারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সফিকুল ইসলাম, সিলেট দক্ষিণ সুরমা উপজেলার আলমদীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আমেনা বেগম, চট্টগ্রাম সন্দ্বীপ উপজেলার রহমতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লিপি আক্তার, মুন্সীগঞ্জ সিরাজদীখান উপজেলার জৈনসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কামাল হোসেন, বরিশাল সদর উপজেলার কিশোর মজলিশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জাহেদা আক্তার, ঢাকা মহানগরীর ধানমন্ডি থানার আইয়ুব আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাহাবুবা সুলতানা, চাঁদপুর সদর উপজেলার আক্কাছ আলী রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রোজিনা হাবিব।
শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন- মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দা নার্গিস আক্তার, নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শাহিন মিয়া, গাজীপুর জয়দেবপুর পিটিআইর ইনস্ট্রাক্টর দিলারা বেগম, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের প্রশাসন শাখার উচ্চমান সহকারী ওসমান গণি, সিলেট জৈন্তাপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী শিশাকর কুমার ঘোষ, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা বেগম, চাঁদপুর সদরের চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদা আক্তার, কে আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইতি ঠাকুর, পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম।
করোনায় আক্রান্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে সিলেট বিয়ানীবাজার উপজেলার নলবহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র মো. সায়েম এবং মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কামারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র হৃদয়। তবে আক্রান্ত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে সুস্থ হয়েও উঠেছেন বলে জানা গেছে।
আক্রান্ত শিক্ষকদের বিষয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, অধিকাংশ শিক্ষক মাঠ প্রশাসনের কাজ, সরকারঘোষিত মানবিক সহায়তার কাজ এবং বিদ্যালয়ের উপবৃত্তি, ডিআরসহ বিভিন্ন তথ্য হালনাগাদ করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অথচ সরকারঘোষিত প্রণোদনা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে শিক্ষকরা বঞ্চিত।
করেসপন্ডেট,৩১ মে ২০২০