Home / জাতীয় / করোনাহীন রোগীও নিচ্ছে না হাসপাতালগুলো
করোনাহীন রোগী

করোনাহীন রোগীও নিচ্ছে না হাসপাতালগুলো

দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিত্সাসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে চরম অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও সাধারণ রোগীদের হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার একের পর এক অভিযোগ উঠছে। সরকারি হাসপাতালে সাধারণ কোনো রোগী গেলেই কোভিড টেস্ট রিপোর্ট আনতে বলা হচ্ছে। জরুরি রোগী হলেও করোনামুক্ত সার্টিফিকেট ছাড়া ভর্তি করা হচ্ছে না। আর বেসরকারি হাসপাতাল নানা অজুহাতে রোগীদের ভর্তি করছে না। বেড খালি থাকলেও বর্তমানে ৯৫ ভাগ বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। সরকারি নির্দেশ তারা অমান্য করছে। এমন অবস্থার মধ্যে সবার প্রশ্ন, এসব সংকটাপন্ন রোগীদের জীবন রক্ষার উপায় কি?

বুকের ব্যথা অনুভব করায় একে একে তিনটি হাসপাতালে নেওয়া হয় শফিউল আলম ছগিরকে। কিন্তু কোনো হাসপাতালে জুটেনি চিকিত্সা। পরে চট্টগ্রাম নগরের পার্কভিউ হাসপাতালে নেওয়া হলেও ততক্ষণে তিনি মারা যান। মঙ্গলবার সকালে মারা যান নগরের বায়োজিদ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম ছগির। চিকিত্সকরা বলেছেন, তার মৃত্যুর কারণ হূদেরাগ। করোনা সন্দেহে অধিকাংশ হাসপাতাল ফিরিয়ে দেওয়ায় তার ভাগ্যে জুটেনি চিকিত্সা। শফিউল আলমের মৃত্যুর পর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ আওয়ামী লীগ নেতারা।

মঙ্গলবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মেয়র আ জ ম নাছির বলেন, আমাদের থানা আওয়ামী লীগের এক সেক্রেটারি স্ট্রোক করেছিলেন। তাকে তিন-চারটা হাসপাতালে নেওয়া হলেও কোনো হাসপাতালেই সিট খালি নেই এমন অজুহাতে ভর্তি করায়নি। পরে যখন পার্কভিউ হাসপাতালে নেওয়া হলো তখন চিকিত্সকরা পরীক্ষা করে দেখেন তিনি আর বেঁচে নেই।

জানা গেছে, শফিউল আলম হঠাত্ বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে ভর্তি না করায় পরবর্তীতে বেসরকারি মেডিক্যাল সেন্টারে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাকে পার্কভিউ হাসপাতালে নেওয়া হলে প্রথম দফায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে নানা প্রচেষ্টায় তাকে ভর্তি করানো হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি মারা যান।

একজন কিডনি ডায়ালাইসিস রোগী অনেক আগে থেকেই নির্দিষ্ট একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়মিত চিকিত্সা গ্রহণ করেন। গত ৭ মে ঐ রোগী সেখানে চিকিত্সা নিতে গেলে তাকে চিকিত্সা না দিয়ে অন্য কোনো হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উপায়ান্তর না দেখে হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে অবশেষে ঐ দিনই বিকালে রোগীটি মৃত্যুবরণ করেন।

এমন ঘটনা এখন অহরহই হচ্ছে। ক্যানসারে আক্রান্ত একজন রোগীর কেমোথেরাপি অন্যতম চিকিত্সা। কিন্তু চিকিত্সক সাফ জানিয়ে দিলেন, করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়া হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ নেই। কেমোথেরাপি যখন রোগীর বাঁচা-মরার প্রশ্ন তখন চিকিত্সকের শর্ত পূরণে রোগীকে ছুটতে হচ্ছে করোনা পরীক্ষার ল্যাবে। ততদিনে পেরিয়ে যায় সময়। এভাবে অসংখ্য রোগী হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে যথাযথ চিকিত্সা না পেয়ে মারা যাচ্ছে।

করোনার সময়ে এমন সংকটে করোনা ছাড়া অন্য কোনো রোগও যেন অভিশাপ হয়ে দেখা দিচ্ছে। চিকিত্সা চাইলেই জটিলতা। আবার শর্ত পূরণের পথও বেশ কঠিন। উপসর্গ থাকা রোগীদেরই যেখানে করোনা পরীক্ষা করে শেষ করা যাচ্ছে না, সেখানে অন্য চিকিত্সার জন্য করোনা পরীক্ষা খুবই জটিল। এই অবস্থায় রোগীরা যাবে কোথায়?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, কোনো রোগীকে ফেরত দেওয়া অন্যায়। সরকারি হোক আর বেসরকারি হাসপাতাল হোক রোগীদের ফেরত দেওয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল কোনো রোগীকে ফেরত দেয় না।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বেড আছে প্রায় দেড় লাখ। এরমধ্যে সরকারি বেড আছে ৫২ হাজার ৮০৭টি। অন্য সময় শুধু ইমারজেন্সি রোগীদের জন্য প্রতিদিন দেড় লাখ বেড প্রয়োজন হতো। সেখানে এখন যুক্ত হয়েছে করোনা রোগী।

এ কারণে অন্য জরুরি রোগীদের ভাগ্যে কী ঘটছে? তিনি বলেন, সরকারি ও বেসরকারি ডাক্তার আছে ৯০ হাজার। এরমধ্যে সরকারি ৩০ হাজার ও বেসরকারি ৪০ হাজার। বাকি ২০ হাজার ডাক্তার প্রাইভেট প্রাকটিস করেন। ১০ হাজার ডাক্তার অবসরে আছেন। এমনি সময়ের জন্যই আরো ৩০ হাজার ডাক্তার প্রয়োজন। সেই হিসেবে ৯০ হাজার নার্স লাগবে। জনবলের বিরাট সংকট। ক্রান্তিকালে চুক্তিভিত্তিক ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে বলে জানান তিনি ।

বেসরকারি হাপসাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, যেসব বেসরকারি হাসপাতাল করোনা রোগীদের জন্য চিকিত্সাসেবা চালু করেনি তাদের বিরুদ্ধে সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। (ইত্তেফাক)

বার্তা কক্ষ,১১ জুন ২০২০