শাহরাস্তিতে কীট সংকটে করোনার নমুনা পরীক্ষা না করেই ফিরছে রোগীরা

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে কীট সংকটে নমুনা পরীক্ষা ও করোনা শনাক্ত কমেছে। এ সংকটের কারণে প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষা না করেই ফিরে যাচ্ছে শত শত রোগী।

জানা যায়, র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট (আরএটি) কীট সংকটে ১১ আগস্ট হতে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট কক্ষে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ব্যতীত অন্যদের রেপিড এন্টিজেন টেষ্ট এর মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে না, সীমিত আকারে আরটি পিসিআর নমুনা সংগ্রহ করা হবে মর্মে জানানো হয়।

একই ভাবে ৪ আগস্ট হতে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট কক্ষের সামনে ‘করোনার কীট অপ্রতুলতার কারনে শুধুমাত্র করোনার লক্ষন, শ্বাসকষ্ট ও অক্সিজেন সেচুরেশন কম (৯০ এর নিচে) চল্লিশোর্ধ ব্যাক্তিদের রেপিড এন্টিজেন টেষ্ট এর মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে। সীমিত আকারে আরটিপিসিআর নমুনা সংগ্রহ চলমান থাকবে শীর্ষক নোটিশ সাঁটিয়ে প্রতিদিন স্বল্প সংখ্যক নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিলো।

র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট ল্যাব হতে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ৪ আগস্ট ২৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়, যাতে ১৮ জনের পজেটিভ ও ৬ জনের নেগেটিভ আসে। ৫ আগস্ট ২১ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়, যাতে ১৫ জনের পজেটিভ ও ৬ জনের নেগেটিভ আসে। ৭ আগস্ট ২৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়, যাতে ১৭ জনের পজেটিভ ও ১১ জনের নেগেটিভ আসে। ৮ আগস্ট ২০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়, যাতে ৯ জনের পজেটিভ ও ১১ জনের নেগেটিভ আসে।

৮ আগস্ট ২০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়, যাতে ৯ জনের পজেটিভ ও ১১ জনের নেগেটিভ আসে। ৯ আগস্ট ১৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়, যাতে ১১ জনের পজেটিভ ও ৭ জনের নেগেটিভ আসে। ১০ আগস্ট ১৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়, যাতে ৯ জনের পজেটিভ ও ৬ জনের নেগেটিভ আসে। এক সপ্তাহের পরিসংখ্যানে মোট ১শ ২৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। যাতে ৭৯ জনের পজেটিভ ও ৪৭ জনের নেগেটিভ আসে।

এর আগে ১৪ দিনের রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে নমুনা সংগ্রহ কমেছে ৪ শ’য়ের অধিক।

এদিকে সীমিত আকারে আরটিপিসিআর নমুনা সংগ্রহের কথা বলা হলেও গত ১ সপ্তাহে যে ক’জন আরটিপিসিআর নমুনা দিয়েছেন এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের রিপোর্ট আসে নি বলে হাসপাতালের ল্যাব টেকনোলজিস্ট মোঃ খোরশেদ আলম জানিয়েছেন।

সরেজমিনে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যাচ্ছে অসংখ্য রোগী নমুনা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। কীট সংকটে নমুনা না দিয়েই ফিরে যাচ্ছে শত শত মানুষ। পৌরসভার ১২ নং ওয়ার্ডের নোয়াগাঁও গ্রামের মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, সে তার নিকটাত্মীয়কে করোনা পরীক্ষার জন্য নিয়ে এসেছে। যথেষ্ঠ পরিমান উপসর্গ থাকার পরও করোনা কিনা নিশ্চিত না হওয়ায় রোগীর চিকিৎসা নিয়ে তিনি চিন্তিত।

এ দিকে মেহের দক্ষিণ ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের গৃহিণী জাকিয়া জানান, এক সপ্তাহ ধরে জ্বর ও সর্দি-কাশিতে ভুগছি। আজসহ ২দিন করোনা পরীক্ষার জন্য এসে ফিরে যাচ্ছি।

টামটা দক্ষিন ইউনিয়নের আজাগরা গ্রামের মোঃ ওমর ফারুক জানান, তিনি তার মাকে নিয়ে ৪ দিন ধরে হাসপাতালে রয়েছেন। করোনা আক্রান্তদের পরিবারের সদস্যরা আক্রান্তের ঝুঁকিতে শীর্ষে রয়েছেন। ভর্তি রোগী ছাড়া নমুনা পরীক্ষার সুযোগ না থাকায় করোনা উপসর্গ নিয়ে লোকজন বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। ফলে করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বেড়ে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, করোনার প্রকোপ ভয়াবহভাবে বাড়ায় সম্প্রতি আইসোলেশন ওয়ার্ডের শয্যা ৭ টি হতে ২৪টিতে উন্নীত করা হয়েছে। যাতে প্রতিদিন ১৮ হতে ২২ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ নাসির উদ্দিন জানান, কীট সংকটের কারনে র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট সীমিত করা হয়েছে। সংকটের বিষয়টি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১ মাসে মরনঘাতি করোনার (কোভিড-১৯) উর্ধ্ব সংক্রমণে শাহরাস্তি উপজেলায় ৮শ’৪৯ জন আক্রান্ত হয়েছে। শনাক্তের শতকরা হার ৫৯ ভাগ। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছে ১৩ জন। এ নিয়ে উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৩শ’১৫ জন। মৃতের সংখ্যা ২২ জন। কারোনায় লাশ দাফনকারি স্বেচ্ছাসেবকদের মতে গত ১ মাসে করোনা ও করোনা উপসর্গে মৃতের সংখ্যা ৪০ জনের অধিক হবে।

শাহরাস্তি প্রতিনিধি

Share