২০২০ সালে পঞ্চগড়সহ উত্তরবঙ্গের ৫ জেলায় ১ কোটি ৩ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। এ অঞ্চলের সমতলের ১০টি চা বাগান এবং সাত সহস্রাধিক ক্ষুদ্র চা চাষির বাগান থেকে এ চা উৎপাদিত হয়েছে। এ বছর চায়ের জাতীয় উৎপাদন হয়েছে ৮৬ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন কেজি। এর ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ উত্তরাঞ্চলের এসব বাগান থেকে উৎপাদিত। কোভিড পরিস্থিতিতেও এ বছর চা উৎপাদনে সবোর্চ্চ রেকর্ড হয়েছে। পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ড কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, ২০২০ সালে উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলার ১০টি নিবন্ধিত ও ১৭টি অনিবন্ধিত চা বাগান, সাত হাজার ৩১০টি ক্ষুদ্রায়তন চা বাগানে (নিবন্ধিত এক হাজার ৫১০টি) ১০ হাজার ১৭০ দশমিক ৫৭ একর জমিতে চা চাষ হয়েছে। এসব বাগান থেকে ২০২০ সালে পাঁচ কোটি ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৩৮৬ কেজি সবুজ চা-পাতা তোলা করা হয়েছে। যা থেকে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ের ১৮টি কারখানায় এক কোটি তিন লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় ২০২০ সালে এক হাজার ৪৮৯ দশমিক ৮৯ একর জমিতে চায়ের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সাত দশমিক ১১ লাখ কেজি চা বেশি উৎপাদিত হয়েছে।
পঞ্চগড় চা বোর্ডের আঞ্চলিক অফিস জানায়,জেলায় ১৮টি কারখানা চা উৎপাদন করছে। ঠাকুরগাঁও,লালমনিরহাট,দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলার কাঁচা চা পাতাও এসব কারখানায় নিয়ে আসা হয়। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব চা কারখানায় চা উৎপাদন হয়েছে। এরপর থেকে চা পাতা উত্তোলন বন্ধ রয়েছে।
চলতি বছরের মার্চ মাসে চা উৎপাদন মৌসুম শুরু হবে।
পঞ্চগড়ের মৈত্রী টি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মোজাহিদুল হান্নান নিপুণ বলেন, ‘পঞ্চগড়ের মৈত্রী টি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কারখানাটি এবার উত্তরবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চা উৎপাদন করেছে। এখানে ২৫ লাখ ১২ হাজার ৪৭৯ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। পঞ্চগড় জেলার চার ভাগের এক ভাগ চা এই কারখানা থেকে উৎপাদিত হয়েছে।’
পঞ্চগড়ে বাংলাদেশ চা বোর্ড আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন জানান, সমতল ভূমিতে চা চাষের জন্য পঞ্চগড় ও এর পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এলাকা। দিন দিন উত্তরাঞ্চলে চা চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাষ সম্প্রসারণের জন্য চাষিদের বিভিন্ন সহায়তার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
স্বল্পমূল্যে উন্নত জাতের চারা সরবরাহ করা হচ্ছে। চাষিদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ‘ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলে’ হাতেকলমে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান দিতে ইতোমধ্যে ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’নামে একটি মোবাইল অ্যাপস চালু করা হয়েছে।
এ আঞ্চলিক কার্যালয়ে একটি পেস্ট ম্যানেজমেন্ট ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে চা চাষিদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান,চাষের নানান রোগবালাই ও পোকা দমনে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সহায়তা দেয়া হয়। এ বছর ক্ষুদ্র চাষিরা উৎপাদিত কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় চাষে উৎসাহিত হয়েছেন,চা বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী বাগানের যত্ন নিয়েছেন।
এছাড়াও পাতার দাম ভালো পাওয়ায় নতুন চাষিও বাড়ছে। এতে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষের যেমন একদিকে দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে, তেমনি অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
তিনি আরও জানান,কোভিড পরিস্থিতিতেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এবং চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো.জহিরুল ইসলামের ব্যবস্থাপনায় উত্তরবঙ্গের সব চা বাগানের সার্বিক কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চা বাগান পরিচর্যা ও পাতা তোলার কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এর ফলে ২০২০ সালে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলের মাধ্যমে চা আবাদে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহের ফলে সমতলের চা বাগান থেকে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।
বার্তা কক্ষ , ২৪ জানুয়ারি ২০২১
এজি