জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকেই টানা এক মাস বন্ধ থাকবে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। অবশ্য সংশ্লিষ্টদের দাবি, জুন মাসের শেষ সপ্তাহে পুনরায় চালু করতে সক্ষম হবে পাওয়ার প্লানটি। তবে তখন ‘ফুল ক্যাপাচিটি’তে প্লানটি চালু করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।
ডলার সংকটে বকেয়া পরিশোধ করতে না পারায় কয়লা সরবরাহ নেই, তাই বন্ধ হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। যার প্রভাব পড়বে দেশের বিদ্যুৎ খাতে। এর ফলে গোটা দেশে লোডশেডিংয়ের সময় বেড়ে যাবে।
জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকেই টানা এক মাস বন্ধ থাকবে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। অবশ্য সংশ্লিষ্টদের দাবি, জুন মাসের শেষ সপ্তাহে পুনরায় চালু করতে সক্ষম হবে পাওয়ার প্লানটি। তবে তখন ‘ফুল ক্যাপাচিটি’তে প্লানটি চালু করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।
পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প ব্যবস্থাপক শাহ আবদুল মাওলা সোমবার বলেন, যে পরিমাণ কয়লা আছে তা দিয়ে ৩ জুন পর্যন্ত প্লান্টটি চালু রাখা যাবে। ৩ তারিখের পর গোটা প্লান্টটি বন্ধ হয়ে যাবে। তবে আমরা আশা করছি, জুন মাসের শেষে কয়লার জাহাজ আসবে। তখন আমরা পুনরায় প্লান্টটি চালু করতে সক্ষম হবো।
তিনি বলেন, ১০ কোটি ডলারের পুরোটা আমরা এখনও পাইনি। তবে আশা করছি ২/১ দিনের মধ্যেই পেয়ে যাব। আপাতত সেই আশায়ই আমরা নতুন করে চেষ্টা করছি কয়লা আনার জন্য। তবে সেটা এসে পৌঁছাতে পারে, আশা করি জুন মাসের শেষ নাগাদ।
প্লান্টটি বন্ধ হলে দেশে লোডশেডিংয়ের প্রভাব পরবে কি না এমন প্রশ্নে শাহ আবদুল মাওলা বলেন, এটি বলা মুশকিল। কারণ পিডিবি এটা কীভাবে ট্যাকেল করবে বা কোন পদ্ধতি নিবে তার ওপর নির্ভর করবে। এটা পিডিবি ভালো বলতে পারবে। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রেজওয়ান ইকবাল খান বলেন, আপনারা সবাই জানেন কয়লা সংকটের কারণে ইতোমধ্যে ১৩২০ মেঘাওয়াটের এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। অবশিষ্ট মজুদ কয়লা দিয়ে বাকি ইউনিটটি আমরা চালু রেখেছি। কিন্তু সেটিও কয়েকদিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে, মানে ৩ তারিখের পর এটিও বন্ধ হবে।
তিনি বলেন, যে পরিমাণ কয়লা আছে তাতে আগামী ৩ জুন তারিখ পর্যন্ত প্লান্টটি চালু রাখা সম্ভব হবে। এরপর হয়তো জুন মাসের শেষ নাগাদ আমরা আবার প্লান্টটি চালু করতে পারবো, এমন আভাস পাচ্ছি আমরা। কিন্তু তখন এই প্লান্টটি ফুল ক্যাপাচিটিতে চালু করতে পারবো কি না তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
৩ তারিখের পর প্লান্টটি বন্ধ হলে দেশে লোডশেডিং বেড়ে যাবে কি না এমন প্রশ্নে রেজওয়ান ইকবাল খান বলেন, আমাদের পায়রার বিদ্যুৎ এখান থেকে গোপালগঞ্জ যাবার পর যেহেতু ঢাকাসহ অন্যান্য জায়গার বিদ্যুৎ লাইন রেডি আছে সেক্ষেত্রে এটি নির্ভর করবে এনএলডিসির (ন্যাশনাল লোড ডিসপাস সেন্টার (জাতীয় লোড প্রেরণ কেন্দ্র) ওপর। কোন জায়গায় লোডশেডিং দেবে, কোন জায়গায় লোডশেডিং দেবে না, এটি সম্পূর্ণ তাদের ব্যপার। কারণ বাংলাদেশে যত বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে জাতীয় গ্রিডে যায়, তারপর তারাই সিদ্ধান্ত নেন কোন জায়গায় বিদ্যুৎ দেবেন বা কোন জায়গায় বিদ্যুৎ দেবেন না।
তারপরও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হলে এর প্রভাব জাতীয় গ্রিডে পড়বে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ১৩২০ মেঘাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দেশের উৎপাদিত এই মুহূর্তে সবচেয়ে সর্ববৃহৎ একটি প্লান্ট। দেশের মোট চাহিদার ৯ভাগ বিদ্যুৎ এখান থেকে আমরা সাপ্লাই দিয়ে আসছি এতদিন। অর্থাৎ এখান থেকে উৎপাদিত ১২৪০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যাবার পর সেখান থেকে বরিশাল এবং খুলনা বিভাগেও আমাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। যে কারণে এত বড় প্লানটি বন্ধ হলে এর একটি প্রভাব অবশ্যই পড়ার কথা। তারপরও যেসব প্লান্ট বন্ধ ছিল সেগুলো সরকার হয়তো চালু করতে পারে তবে সেটি সংশ্লিষ্টরাই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু কমবেশি একটা প্রভাব অবশ্যই পরবে এতে সন্দেহ নাই। তবে সেটি কী পরিমাণ হবে কম না বেশি তা নির্ভর করবে সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর।
রেজওয়ান ইকবাল খান আরও বলেন, আমাদের এমডি স্যার ঢাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন, কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায় দ্রুত সময়ের মধ্যে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোদমে চালাতে গড়ে প্রতিদিন ১২ হাজার টন কয়লা ব্যবহার হয়। যার পুরোটাই ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করে আসছিল সিএমসি। ডলার সংকট দেখা দেয়ায় গত ছয় মাস ধরে কোনো বিল পরিশোধ করা হয়নি। ফলে ২৯৮ মিলিয়ন (২৯ কোটি ৮০ লাখ) মার্কিন ডলার বা ৩ হাজার ১৭৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা (প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ১০৬ টাকা ৫০ পয়সা ধরে) বকেয়া পড়েছে।
সূত্র জানায়, ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদিত দুইটি ইউনিটের মধ্যে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারিতে উৎপাদনে আসে। পরে একই বছরের ২৬ আগস্টে দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসে। পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে চুক্তি করে পিডিবি।
তবে সঞ্চালন লাইনের জটিলতায় দেড় বছর ধরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির একটি ইউনিট বন্ধ রাখতে হয়। এরপর বিকল্প উপায়ে রাজধানী এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখা হয়।
এর আগে বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রও ডলার-সংকটে পড়ে কয়লা কিনতে না পেরে দুই দফায় বন্ধ হয়েছিল। এখন উৎপাদনে রয়েছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র।
টাইমস ডেস্ক/৩০ মে ২০২৩