চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক:
ওজন কমানো যেমন কঠিন তেমন ওজন বাড়ানোও অনেকের কাছে কঠিন। কম ওজনের শরীর নিয়ে অনেককেই সামাজিকভাবে হেয় হতে হয়,
আবার কখনো বা চাকুরীর ভাইবাতে গিয়ে আটকে যেতে হয়, বলা হয় বডি ফিটনিস সমস্যা, কিংবা বডি ফিটনিস তেমন ভাল না, চেহারা অনেকটা
ভাঙ্গা, বাতাসে পড়ে যাবে, এই সেই ইত্যাদী।
আর এ কাজে প্রয়োজন যথাযথ প্রচেষ্টা এবং একটু সময় নিয়ে লেগে থাকা। এ লেখায় থাকছে ওজন বাড়ানোর ২০টি উপায়।
১. কারণ নির্ণয় করুন বিভিন্ন কারণে মানুষের ওজন কম হতে পারে। এ কারণটি নির্ণয় করতে পারলে সহজেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। অপর্যাপ্ত খাওয়ার অভ্যাস, অনেক বিরতি দিয়ে খাওয়া, শারীরিক পরিশ্রমহীনতা কিংবা পর্যাপ্ত খাবার না খেয়েও শারীরিক পরিশ্রম করা এসব কারণের অন্যতম। এ ছাড়াও পেটের গণ্ডগোল কিংবা কোনো রোগ রয়েছে কি না, তাও দেখার বিষয়
২. ক্যালরি গ্রহণ ওজন বাড়ানোর জন্য খাবারের ক্যালরি হিসাব করে নিতে হবে। প্রতিদিন বাড়তি ৫০০ কিলোক্যালরি খাওয়া হলে প্রতি সপ্তাহে আধ কেজি করে ওজন বাড়তে পারে। তবে ওজন বাড়াতে হলে যে কোনো কাজ হঠাৎ করে করা উচিত নয়। এ কারণে হঠাৎ ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা অনেকখানি বাড়ানো উচিত নয়। ৩. শারীরিক পরিশ্রম শারীরিক পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। ওজন বাড়ানোর জন্য নিয়মিত সীমিত মাত্রায় শারীরিক পরিশ্রমের প্রয়োজন আছে। এতে ক্ষুধা বাড়বে এবং পাশাপাশি বাড়বে দেহের ওজন। এজন্য খেলাধূলা কিংবা কার্ডিও, ওয়েট ট্রেনিং ও ফ্লেক্সিবিলিটি এক্সারসাইজ করা যেতে পরে। কম ওজন নিয়ে সমস্যা? ২০ উপায়ে হয়ে উঠুন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ৪. ওজন তুলুন আপনার দেহের ওজন বাড়ানোর জন্য ওজন তোলার ব্যায়াম খুবই কার্যকর। এজন্য অবশ্যই নিয়মিত পরিমিত মাত্রার ওজন তোলার অনুশীলন করতে হবে। এছাড়া ওজন তোলার প্রস্তুতি হিসেবে কোনো যন্ত্র ব্যবহার না করেই কিছু এক্সারসাইজ করা যেতে পারে।
৫. এক্সারসাইজ ওজন বাড়ানোর জন্য যে এক্সারসাইজগুলো করতে পারেন তা হলো- প্রথম দিন- স্কোয়াট ৫ ইন্টু ৫ বার পুল আপস (ঝুলে দেহ তুলে ধরা) ৫-এর বেশি ওভারহেড প্রেস ৫ ইন্টু ৫ বার দ্বিতীয় দিন- স্কোয়াট ৫ ইন্টু ৫ বার ডেডলিফট ১/২/৩ ইন্টু ৫ বার (প্রথমে অল্প ওজন দিয়ে শুরু হবে। কিছুদিন পরে ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে) বেঞ্চ প্রেস ৫ ইন্টু ৫ বার তৃতীয় দিন- স্কোয়াট ৫ ইন্টু ৫ বার পুল আপস (ঝুলে দেহ তুলে ধরা) ৫-এর বেশি ওভারহেড প্রেস ৫ ইন্টু ৫ বার (প্রতি সপ্তাহেই তিনদিন করে এ কাজগুলো করুন) ৬. স্বাস্থ্যকর খাবার কোনো ওষুখ কিংবা ভিটামিন কিনে খাওয়ার বদলে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস অনেক ভালো। এজন্য সঠিক মাত্রায় প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট খাওয়া প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজনে বাদাম ও দুগ্ধজাত খাবার খেতে হবে। জাংক খাবার খেলে তা কোনো উপকারে নাও আসতে পারে। কারণ জাংক খাবার স্থূল ও পাতলা উভয় মানুষের দেহেও প্রায় একই অস্বাস্থ্যকর ভূমিকা রাখে। ৭. খাবারে কয়েকটি উপাদান যোগ করুন পেস্তা বাদাম ও চানা ডালের মতো উপাদান যোগ করুন আপনার খাবারে। প্রয়োজনে প্রতিদিন বিকালে নিয়ম করে এসব খাবার খান। এ ছাড়াও বাদামি আটার রুটি/পাউরুটি, সয়ার তৈরি খাবার, চীনাবাদাম, চাটনি ও আঁশসমৃদ্ধ খাবার রাখুন তালিকায়। ৮. জলীয় দ্রব্য পান ক্ষুধা বাড়ে, এমন কোনো পানীয় পান করুন। তবে বড় কোনো খাবারের আগে বেশি পান করবেন না। এতে রুচি নষ্ট হতে পারে। ৯. খাবারের সংখ্যা কমান বারবার খাওয়া হলে তা আপনার ক্ষুধার মাত্রায় পরিবর্তন আনবে। তবে দিনে তিনটা বড় খাবার বা ছয়টা ছোট খাবার খাওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে বড় খাবার খাওয়ার আগে ছোট কোনো খাবার খাবেন না। কম খাওয়াও অনেক সময় দেহের ওজন বাড়াতে পারে। তবে এক্ষেত্রে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ১০. মাত্রাতিরিক্ত চিনি নয় ওজন বাড়ানোর জন্য কেউ যদি আপনাকে মাত্রাতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি খাবার খেতে পরামর্শ দেয় তাহলে তা ভুল হবে। চিনি কখনোই মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। কারণ এটি আপনার দেহে এমন একটি অবস্থা তৈরি করতে পারে যার নাম ‘স্কিনি ফ্যাট।’ অর্থাৎ আপনার দেহ শীর্ণ থাকলেও দেহের ভেতরে ফ্যাট জমা হবে। এতে দেহের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ফ্যাট জমতে পারে। ১১. প্রচুর সবজি ও মাংস খান ওজন বাড়াতে হলে আপনার আগের তুলনায় অনেক বেশি করে সবজি ও মাংস খেতে হবে। এতে দেহের প্রচুর হরমোন তৈরি হবে, যা সুস্বাস্থ্য আনবে। ১২. স্বাস্থ্যকর ফ্যাট আপনার খাবারের তালিকায় রাখুন স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। এ ফ্যাট পাওয়া যাবে ডিম, মাংস, নারিকেল তেল ও অনুরূপ খাবারে। এছাড়া কলাতেও অনুরূপ ফ্যাট রয়েছে। তাই বেশি করে কলা খান। ১৩. প্রোটিন গ্রহণ করুন প্রোটিন মাংসপেশি গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এতে দেহের ওজনও বাড়ে।
১৪. ডিম খেতে ভুলবেন না ডিমে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, ই ও ভালো কোলেস্টরেল। তাই নিয়মিত ডিম খেতে ভুলবেন না। ১৫. যেসব খাবার ওজন বাড়াবে- ডিম, বাটার, মাছ, ফলের রস (প্রাকৃতিক), গমের আটার রুটি ইত্যাদি খাবার। ১৬. ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার- চীনাবাদাম, বাটার, কাজু বাদাম, যব, পনির, ভোজ্য তেল, কলা, দই ইত্যাদি। ১৭. সাপ্লিমেন্ট গ্রহণে সতর্কতা অনেকেই ওজন বাড়াতে ফার্মেসি থেকে সাপ্লিমেন্ট কিনে সেবন করেন। এসব সাপ্লিমেন্ট চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করা উচিত নয়। ১৮. খাবার বিষয়ে কয়েকটি করণীয় -খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয়। -খাওয়ার পরেই চা বা কফি বাদ দিতে হবে। -সঠিকভাবে রান্না করা খাবার খেতে হবে। ১৯. যে অভ্যাসগুলো বাদ দিতে হবে – কম ঘুমানোর কারণে আপনার ওজন বাড়তে পারে। যদিও তা উচিত নয়। প্রতিদিন কমপক্ষে সাত থেকে সাড়ে সাত ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। – গাড়িতে খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিন। -টিভি দেখতে দেখতে খাওয়া যাবে না। এতে খাওয়ার প্রতি মনোযোগ হারায় এবং পাচক রস নিঃস্বরণ কম হয়। -প্রতিদিন একই খাবার খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিতে হবে। এতে একঘেয়েমি আসতে পারে। -নিজের পছন্দে খেতে হবে। বন্ধু-বান্ধবদের চাপ এড়িয়ে যেতে হবে। -কফি বা পানীয় পানের জন্য কারো সঙ্গে দেখা করা বাদ দিন। ২০. ওজন বাড়ানোর পর পর্যাপ্ত খাবার খাওয়া ও শারীরিক পরিশ্রমের পর দেহের ওজন যদি বেড়ে গিয়ে সঠিক মাত্রায় আসে তাহলেও থামবেন না। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা চালিয়ে যান। খাওয়ার মাত্রা লক্ষ্য রাখুন, প্রয়োজনে সামান্য নিয়ন্ত্রণ করুন। অন্যথায় দেহের ওজন আরও বেড়ে যেতে পারে। আবার এ কাজগুলো বন্ধ করে দিলে দেহের ওজন কমেও যেতে পারে –
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া