সারাদেশে ওয়ার্ড পর্যায়ে চালু হওয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও গ্রামীণ হতদরিদ্রদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার সুবিধার্থে সরকারের কাছে সুপারিশমালা পাঠানো হয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ২ এপ্রিল আটটি সুপারিশ সংযুক্ত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এ সুপারিশমালাটি পাঠিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক অতুল সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তার অবগতির জন্য এ সুপারিশমালা পাঠানো হলো।
সুপারিশগুলো হচ্ছে
১. সারাদেশে ১৩ হাজার ৫ শ’ কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। অধিকাংশ ক্লিনিক ২০০৯ কিংবা ২০১০ সালে নির্মিত হয়। এগুলোর কাজের মান খুব ভালো হয়নি বলে স্বাস্থ্য বিভাগীয় কর্মকর্তারা মনে করেন। ফলে অধিকাংশ কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবহার অনুপযোগী। এগুলো জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা দরকার।
২. প্রত্যেক কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার কর্মরত আছেন। এদের নিয়োগ যোগ্যতা এইচএসসি পাস। ফলে এ পদে কর্মরত প্রায় সকলে নন-মেডিক্যাল বা নন-টেকনিক্যাল ব্যক্তি। ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি থেকে ৩ বছর কোর্স সম্পন্নকারীদের এ পদে নিয়োগ দেয়া হলে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সেবার মান বাড়বে বলে প্রতীয়মান হয়। এ ক্ষেত্রে তাদের বেতন ভাতা এখন যে প্রক্রিয়ায় দেয়া হচ্ছে একই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা যেতে পারে। শুধু যোগ্যতা পরিবর্তন করা প্রয়োজন হবে।
৩. বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে এ অধিদফতরের জনবল সঙ্কট প্রকট। তদুপরি এদের কাজের মান নিয়ে মাঠ পর্যায়ে অসন্তোষ রয়েছে। পক্ষান্তরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ে পর্যাপ্ত কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল রয়েছে। এ বিবেচনায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর নির্মাণ ও মেরামত কাজ বস্তবায়ন করা যায়। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর থাকা স্বত্তেও সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ ও মেরামত কাজ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর করছে। মাধ্যমিক থেকে তদুর্ধ্ব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্মাণ ও মেরামত কাজ করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর।
৪. প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রসূতি মায়েদের সেবা দেয়া এবং তাদের স্বাভাবিক প্রসব সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বর্তমানে সবগুলো কমিউনিটি ক্লিনিক প্রসূতি মায়েদের জন্য নরমাল ডেলিভারির সমান সুযোগ নেই। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর বিদ্যামান কক্ষ সুবিধার মধ্যে অথবা অন্তত একটি প্রসূতি কক্ষ নির্মাণ করে এ সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
৫. বর্তমানে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা নন-টেকনিক্যাল বিধায় তাদের দীর্ঘ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযোগী করে তুলতে হবে। এদের প্রশিক্ষণের মেয়াদ বাড়ানো প্রয়োজন। অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, যেসব কমিউনিটি ক্লিনিকে নারী সিএইচসিপি আছেন সেগুলোতে প্রসূতি সেবা ভালো হচ্ছে। ভবিষ্যতে সিএইচসিপি নিয়োগের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে।
৬. অনেকগুলো কমিউনিটি ক্লিনিকের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নয়। এসব কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য দাতারা জমি দিয়েছেন দূরবর্তী স্থানে। এসব জায়গায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে রাস্তা নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কারের অগ্রাধিকার দেয়া যায়।
৭. কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো নিবিড় পরিদর্শন দরকার। বর্তমানে সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, স্থাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ইত্যাদি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরিদর্শন করার নিয়ম রয়েছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর পরিদর্শন হচ্ছে না।
৮. জেলা ও উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর ব্যবস্তাপনা বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত করা প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে তৎকালীন আ’লীগ সরকার প্রধান শেখ হাসিনা সারা দেশব্যাপি পল্লী এলাকায় প্রতি ৬ হাজার হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে বারান্দাসহ ৬ শত্যাংশ ভূমির ওপর একটি আর্সেনিকমুক্ত টিওবেল বা কলসহ ৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা ব্যয়ে দু’কক্ষ বিশিষ্ট একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। জমিদাতা ও স্থানীয় পর্যায়ের ৭ সদস্য বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সার্বিক পরামর্শে পরিচালিত হচ্ছে ।
২০০০-’০১ অর্থবছর পর্যন্ত ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করার পর পরবর্তী সরকার পরিবর্তনের ফলে বাকিগওলো নির্মাণ কাজ ভেস্তে যায়।গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়ার পাটগাতি ইউনিয়নের গিমাডাঙ্গা গ্রামে দেশের প্রথম কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ শেষে ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বার্তা কক্ষ
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৬:১০ পিএম, ৫ এপ্রিল ২০১৮, বৃহস্পতিবার
এজি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur