জাতীয়

কমছে হজের সময় বাড়ছে সেবার মান

চলতি বছর থেকে শতভাগ হজযাত্রীর ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্ন ও প্যাকেজে হজের সময়কাল ৪২ দিন থেকে কমিয়ে ৩০ দিনে আনা হচ্ছে। পাশাপাশি সৌদি আরবে উন্নতমানের খাবার ও আবাসনের ব্যবস্থাসহ হজযাত্রীদের সেবার মান বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এছাড়া সরকারি কোটার হজযাত্রীর সংখ্যা ৭ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৭ হাজার করা হয়েছে। সরকারি হজযাত্রীর কোটা পূরণ করতে তুলনামূলক কমমূল্যে সহনীয় প্যাকেজ ঘোষণার কথা চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।

এসব বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আবদুল্লাহ বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ২০১৯ সালে সুন্দর ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় হজ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছর সব ধরনের হাজীদের সেবার মান ও সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানো হবে।

এ বিষয়ে সৌদি সরকারের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের হজ কোটা ১০ হাজার বাড়ানো হয়েছে। আরও ১০ হাজার বাড়ানোর বিষয়ে প্রস্তাব রয়েছে। স্বল্পমূল্যে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পাশাপাশি প্যাকেজের সময়কালও কমানোর চেষ্টা চলছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর সৌদি সরকার যে ১০ হাজার অতিরিক্ত কোটা বৃদ্ধি করেছে তা সরকারি ব্যবস্থাপনার জন্য রাখা হয়েছে। ফলে এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটার মধ্যে বেসরকারি কোটা বিদায়ী বছরের মতোই এক লাখ ২০ হাজারই থাকল।

বাকি ১৭ হাজার ১৯৮ জন সরকারি ব্যবস্থাপনার জন্য রাখা হয়েছে। গত ৪ ডিসেম্বর হজ চুক্তির সময় সৌদি হজ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংস্থা মোয়াচ্ছাসাকে বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, গত বছর এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে হজে যান এক লাখ ২৭ হাজার ১৫২ জন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ছিল ছয় হাজার ৯১৬ জন, যা ৫ শতাংশেরও কম। যদিও সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোটা রাখা হয়েছিল ১০ হাজার ১৯৮ জন, যা ছিল ৮ শতাংশের মতো।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হজ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনেও চলতি বছর থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী বৃদ্ধির কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমি তো কোটার অর্ধেকই সরকারি ব্যবস্থাপনায় পাঠাতে চাই। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এবার সরকারি হজযাত্রীর কোটা ১৭ হাজার থাকছে। আগামীতে এ প্রচেষ্টা আরও বাড়ানো হবে। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশেই ৭০-৮০ শতাংশ হজযাত্রী সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালন করেন। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বাড়াতে হবে বলে মনে করছেন হজ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট প্রায় সব কর্মকর্তাই।

এদিকে চলতি বছরের হজচুক্তিতে হাজীদের সেবার মান বাড়ানোর বিষয়ে বিভিন্ন শর্ত রাখা হয়েছে। এবার এজেন্সিপ্রতি হজযাত্রীর সর্বনিু সংখ্যা ১০০ এবং সর্বোচ্চ সংখ্যা ৩০০ বহাল রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দর ব্যবহারকারী হজযাত্রী ছাড়া শতভাগ হজযাত্রীর ইমিগ্রেশন সৌদি আরবের পরিবর্তে ঢাকায় সম্পন্ন করা হবে। মদিনা থেকে হজ ফ্লাইটের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। হজ এজেন্সিগুলোর জন্য এআইটিএ সনদ থাকার শর্তারোপ করা হচ্ছে না। প্রত্যেক হজযাত্রীর ইন্স্যুরেন্স কভারেজ দেবে সৌদি সরকার। ‘রুট টু মক্কা’র মতো ফিরতি হজযাত্রীদের জন্য ‘রুট টু ঢাকা’ সুবিধা চালু করা হবে। হাজীরা যাতে ৪২ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিনের কম সময়ে দেশে ফিরতে পারেন সে ব্যবস্থা গ্রহণ, ভিসা প্রসেসিং সহজ করা হবে।

থাকা-খাওয়াসহ সৌদি আরবে বাংলাদেশি হাজীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে। হাজীদের জন্য বাধ্যতামূলক খাবার সরবরাহের প্রথা বন্ধ করা এবং মিনায় উন্নতমানের বাংলাদেশি খাদ্য পরিবেশন ও উন্নতমানের আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। হজের সময় বাংলাদেশের আইন লঙ্ঘন করে সৌদি এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রির স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

হজযাত্রী পরিবহনে বাস সার্ভিস উন্নত করা এবং বাংলাদেশি হাজীদের জন্য ট্রেন পরিবহনের সুবিধা বাড়ানোর কথা চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এসব বিষয় বাস্তবায়ন হলে হাজীদের হয়রানি কমে যাবে এবং সেবার মান বাড়বে।

অন্যদিকে চলতি বছর হজের বর্ধিত কোটা পূরণের জন্য সরকারের দুটি প্যাকেজের মধ্যে একটির প্যাকেজমূল্য কমানোর চিন্তাভাবনা চলছে যাতে করে বেসরকারি এজেন্সিগুলোর চেয়ে স্বল্পমূল্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে মানুষের আগ্রহ বাড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, বাড়িভাড়া এবং হাজীদের মক্কা-মদিনায় থাকার সময় ২৫-৩০ দিনের মধ্যে আনতে পারলে প্যাকেজমূল্য অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব। সেই লক্ষ্যে হজ চুক্তির সময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মক্কার আজিজিয়া এলাকা ঘুরে দেখে এসেছেন। হজ চুক্তিতে ঢাকা-মদিনা ফ্লাইট বৃদ্ধির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) আমিন উল্লাহ নূরী ২০১৯ সালের হজ পরবর্তী এক কর্মশালায় এমন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, হজের দিনগুলোর আগে মক্কায় হোটেল বা বাড়িভাড়া প্রায় দুই-তিন গুণ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে মদিনায় বাড়িভাড়া কম থাকে। বাংলাদেশের হাজীদের এভাবে হিসাব করে মদিনায় রাখা হলে বাড়িভাড়ার খরচ অনেক কমে যাবে।

একইসঙ্গে হাজীদের সৌদি আরব অবস্থানের সময় কমিয়ে আনতে পারলে সে ক্ষেত্রে খরচ কমবে। এছাড়া শুরু থেকেই মক্কায় হাজীদের মসজিদুল হারামের কাছে না রেখে কিছুটা দূরে স্থায়ী বাড়িতে রাখলে হাজীপ্রতি খরচ অনেক কমানো সম্ভব।

প্রসঙ্গত, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩১ জুলাই পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।

চাঁদপুর টাইমস রিপোট

Share