চাঁদপুর

করোনা: চাঁদপুরে কমছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা

চাঁদপুর জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অনেকাংশে কমে এসেছে। চাঁদপুর শহরসহ জেলায় করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। কমছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা। বিশেষ করে গত দুই মাসে পরিস্থিতির ক্রমউন্নতি অব্যাহত রয়েছে। গত দুই মাসে আক্রান্তের হার খুবই কম। আর মৃত্যুর সংখ্যা গত দুই মাসে মাত্র ২জন।

চাঁদপুর পৌরসভার করোনা পরিস্থিতিও এখন স্থিতিশীল বলে চিকিৎসকরা মত দিয়েছেন। গত ৯ এপ্রিল থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ৫ মাসে পৌর এলাকায় মোট আক্রান্ত হয়েছে ৮০৮জন। এর মধ্যে মারা গিয়েছে মাত্র ১৭জন। আর সুস্থ হয়েছেন ৫৬৬জন। সুস্থতার হার ৭০ ভাগ। এই দুই সংখ্যা বাদ দিলে বাকি ২২৫জন হচ্ছেন চাঁদপুর পৌর এলাকায় করোনায় আক্রান্ত রোগী। এরা বর্তমানে চিকিৎসাধীন।

অন্যদিকে গত এক মাসের হিসেবে চাঁদপুর পৌর এলাকায় আক্রান্ত রোগী হচ্ছে ৭৬জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৬২জন। পৌর এলাকায় এই এক মাসে নতুন রোগী হচ্ছে মাত্র ১৪জন। আর এই এক মাসে মারা গেছে পৌর এলাকায় মাত্র ১জন। এসব তথ্য জানিয়েছেন চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ। তিনি এপ্রিল থেকে চলতি সেপ্টেম্বর মাসের বর্তমান তারিখ পর্যন্ত পুরো জেলা এবং চাঁদপুর পৌর এলাকায় করোনার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

সিভিল সার্জনের স্বাক্ষরিত তথ্য থেকে জানা যায়, গত ৮ এপ্রিল প্রথমে চাঁদপুর জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়। আর এটি হয় মতলব উত্তর উপজেলায়। এরপর থেকে ক্রমান্বয়ে চাঁদপুরে করোনা আক্রান্ত রোগী বাড়তে থাকে। আর এই সংক্রমণ বৃদ্ধির হার জুলাইর মাঝামাঝি পর্যন্ত ছিল। তখন আক্রান্তের হার পুরো জেলায় ছিল ২৮ ভাগ। সে হিসেবে তখন মৃত্যুর সংখ্যাও তুলনামূলক একটু বেশি ছিলো। শতকরা হারে তখন মৃত্যুর হার ছিল ৮ ভাগ। তবে তখন চাঁদপুরে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন না পেয়ে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর ঘটনা তুলনামূলক বেশি ঘটেছে।

জুলাইর মাঝামাঝিতে আড়াই শ’ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন হওয়ায় রোগীরা প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সাপোর্ট পেতে থাকে। এতে করে মৃত্যুর হারও কমতে থাকে। বর্তমানে মৃত্যুর হার আক্রান্তের তুলনায় এক ভাগেরও কম। সংখ্যা উল্লেখ করলে তা হচ্ছে, গত দুই মাসে চাঁদপুর জেলায় করোনায় মারা গেছে মাত্র দু’জন। আর চাঁদপুর পৌর এলাকায় মারা গেছে মাত্র একজন।

এদিকে ২৮ জুলাই চাঁদপুরে করোনা টেস্টিং ল্যাব স্থাপন হওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। তখন থেকে আগস্টের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চাঁদপুর জেলায় করোনায় আক্রান্তের হার ২৩ ভাগে নেমে আসে। আর বর্তমানে আক্রান্তের হার শতকরা ৭%। শুরুর দিকে এই হার ছিল ২৮%। সিভিল সার্জন ডা. মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ এ সব তথ্য জানান।

চাঁদপুর পৌর এলাকায় করোনার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সিভিল সার্জন জানান, গত ২২ আগস্ট থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাঁদপুর পৌর এলাকায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা হচ্ছে ৭৬ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৬২জন, আর মারা গেছেন মাত্র একজন।

একেবারে শুরু থেকে অর্থাৎ ৮ এপ্রিল থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ছয় মাসে চাঁদপুর পৌর এলাকায় করোনায় আক্রান্ত, মৃত্যু এবং সুস্থতার সংখ্যা হচ্ছে : আক্রান্ত ৮০৮জন, মৃত্যু ১৭জন। আক্রান্তের হিসেবে মৃত্যুর হার মাত্র ২ ভাগ। এদিকে ছয় মাসে আক্রান্ত ৮০৮জনের মধ্যে মারা গেছেন ১৭জন। পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছেন ৫৬৬ জন। সুস্থতার হার হচ্ছে ৭০ ভাগ।

এদিকে চাঁদপুর জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হওয়া থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় ছয় মাসে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১০ হাজার ৭শ’ ২০জনের। এর মধ্যে পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ২ হাজার ২শ’ ৬১জনের। এদের মধ্য থেকে সুস্থ হয়ে গেছেন (২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ১ হাজার ৮শ’ ৮২জন। যা শতকরা হারে ৮৩.২৩%। আর মোট আক্রান্ত রোগীর মধ্যে পুরো জেলায় মারা গেছেন মাত্র ৭৭জন। যা শতকরা হারে ৩.৪০%।

আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেলের সাথে গতকাল বুধবার দুপুরে কথা হলে তিনি জানান, হাসপাতালে বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছে মাত্র চারজন। আর করোনা সন্দেহজনক ভর্তি মাত্র ১১জন।

এদিকে চাঁদপুরে করোনা শনাক্ত হওয়া থেকে শুরু করে প্রথম সাড়ে তিন মাসের মতো আক্রান্তের শতকরা হার ২৮ থেকে ২৩ ভাগের মধ্যে থাকলেও বর্তমানে আক্রান্তের হার মাত্র ৭%-এ নেমে আসার কারণ কী থাকতে পারে এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহর কাছে জানতে চাওয়া হয়।

তিনি এ বিষয়ে বলেন, চাঁদপুরে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষাগার স্থাপনের আগ পর্যন্ত এই জেলার স্যাম্পল পরীক্ষা করার জন্যে ঢাকা পাঠানো হতো। আর ঢাকা থেকে রিপোর্ট আসতে সময় লেগে যেতো এক সপ্তাহ থেকে ১২-১৩ দিন পর্যন্ত। এই সময়েই সংক্রমণ বেড়ে যেতো। স্যাম্পল দেয়ার পর রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মানুষ অবাধে চলাচল করতো। আর তা থেকেই সংক্রমণ বাড়ত।

কিন্তু ২৮ জুলাই থেকে যখন চাঁদপুরে স্যাম্পল পরীক্ষা করার কাজ শুরু হয়ে গেলো, তখন দিনের রিপোর্ট দিনেই পাওয়া যেত। ফলে আক্রান্ত রোগীকে ১০ থেকে ১২ ঘন্টার মধ্যেই রিপোর্ট জানিয়ে তাকে আইসোলেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে করে তার থেকে আর কেউ সংক্রমিত হলো না। এভাবেই চাঁদপুরে করোনায় আক্রান্তের প্রাদুর্ভাব কমতে থাকে এবং মৃত্যুর হারও অনেক কমতে থাকে।

বার্তা কক্ষ, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

Share