তরুন কবি ও লেখক আশিক বিন রহিমের ৩১ তম জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৮৭ সনের ২৫ নভেম্বর মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদী বেষ্টিত চাঁদপুর জেলার প্রধান বানিজ্যিক এলাকা পুরাণবাজারে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৃত আ. রহিম শেখ, মাতা বেগম ফয়জুননেছা।
কবিতা, গল্প, ছড়া, ফিচার, প্রবন্ধ ও ভ্রমণ কাহিনী লেখার পাশাপাশি তিনি তরী নামে একটি লিটলম্যাগ সম্পাদনা করেন। বর্তমানে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিয়ে সাম্প্রতিক দেশকাল এর জেলা প্রতিনিধি, চাঁদপুর প্রতিদিন সিনিয়র রিপোর্টার, চাঁদপুর টাইমস এর যুগ্ম বার্তা সম্পাদক, সপ্তাহিক পাঠক সংবাদ এর বার্তা প্রধান ও পাক্ষিক চাঁদনগর এর বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়াও নজরুল সংঙ্গীত শিল্পী পরিষদ জেলা শাখার নির্বাহী সদস্য, জাতিয় সাহিত্য পরিষদ চাঁদপুর জেলা শাখার নির্বাহী সদস্য, নতুন কুঁড়ি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাবেক যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক সহ বেশ কিছু শিল্পসাহিত্য ও সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছে। চাঁদপুরের অনুপম ও স্বরলিপী নাট্যদলের ব্যানারে বেশ কিছু মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন।
এবারের অমর একুশে জাতীয় গ্রন্ধ মেলা ২০১৯ এ কবি আশিক বিন রহিমের প্রথম কাব্যগ্রন্ধ ’প্রদ্মপ্রয়াণ’ ও গল্পগ্রন্থ ‘রৌদ্র ছায়ার খেদ’ প্রকাশের অপেক্ষায়।
আশিক বিনি রহিম তাঁর ব্যক্তিজীবনে কাজের স্বীকৃতি সরূপ পেছেয়েন কবিতায়:
চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমী পুরুস্কার, ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরাম পুরুস্কার, সাহিত্যকর্মে: চাঁদপুর কণ্ঠ পাঠক ফোরাম ও লেখক পুরস্কার, ছড়ায়: মোহনবাঁশী ছড়া উৎসব পুরস্কার, লিটলম্যাগ সম্পাদনায় ছায়াবানি মিডিয়া কমিউনেকেশন সম্মাননা এবং ফটোগ্রাফিতে বাফজএ চাঁদপুর পুরস্কার ও চতুরঙ্গ ইলিশ উৎসব পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার।
আজ কবি আশিক বিন রহিমের জন্মদিনে চাঁদপুর টাইমসের পাঠকদের জন্য প্রকাশিত তার স্বরচিত একগুচ্ছ কবিতা।
১.নিরাশার ভারী নিশ্বাস
দিন যায়
যেতে যেতে অনেক সময়, মাস, বছর
সূর্য ওঠেÑ অস্ত যায়
মেঘেঢাকা চাঁদও হাসে অতঃপর।
পা’জোড়া হাঁটে…
চলতে চলতে ক্লান্তদেহে বেড়ে ওঠে
নিরাশার ভারী নিশ্বাস;
তারপর স্বপ্নের লাশ কফিনবন্দী করে
লোনা-জলের পেরেক মারি শক্ত হাতে।
কালিও শেষ,
পাঁচটি আঙুল নুয়ে পড়ে কলমের ভারে
নুয়ে পড়ে বিবেক ও বিশ্বাস।
সত্ত্বার মৃত্যু হবে তাই-
বাস্তবতার এত আনন্দ উল্লাস!
২.দাওয়াই
মাথার উপর ঝুলে থাকা চাঁদ, খুঁঁটিহীন নীল আসমান
মেঘ ভেঙে সূর্য হাসে। অথচ কী আশ্চর্য প্রেম
যেখানে ক্ষত আঁকে সেখানেই লিখে দেয় দাওয়াই
মসৃণ মমতা।
ভালোবাসায় ক্ষত, রক্তাক্ত প্রাণে যতোটুকু দহন-অসুখ
প্রেমেই তা চুর্ণ হয়, পূর্ণ হয় হৃদয়।
প্রেম; বড়ই আশ্চর্য দাওয়াই।
৩.একজন জ্যোতিষীর খোঁজে
বহুদিন এই শহরে জ্যোতিষী দেখি না
হাতের উপর আতশী কাচ রেখে অথবা পাখির ঠোঁটে
যে তুলে আনে মানুষের ভাগ্যসনদ।
একজন সাপুড়ে দেখি না অনেকদিন হলো
কাঠের বাক্সে থাপ্পড় দিয়ে যে দেখায় জীবন্ত দুধনাগ
যাকে ঘিরে গেন্দার মালার মতো দাঁড়িয়ে থাকে মানুষ
হাতের পাঞ্জায় মেলে ধরে কাগজের টাকা, পিতলের কয়েন।
এই শহরে একজন জ্যোতিষীকে খুঁজে চলেছি আমি
কিছু মানুষকে প্রেমিক বানিয়ে গলায় পরবো বলে।
৪.রাতের ফুল
তার ঠোঁটের বারান্দায় চেয়ে দেখি
অসংখ্য জীবন্ত লাশ শুয়ে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে;
প্রশ্নপীড়ায় কাতর ললাট আকাশকে লক্ষ্য করে
হতাশায় ঢিল ছোঁড়ে ওপরে।
তার হাতের নখে নেইল-পলিশ ছিলো,
নগ্ন পায়ের নখেও; কাজলরাঙা আইব্রু
চোখের নিচে লেপ্টে থাকা রঙিন শ্যাডো হাসি নয়
পড়েছিলো ক্ষুধা, কান্নার কবিতা।
তার কাছে যেতেই স্বাগত জানায় নকল প্রেমে
সময়ের দাম-দরে ভালোবাসার খুনসুটি
নকল হাসিতে খুলে দেয় শাড়ি, নীল ব্লাউজÑ
স্ট্রিচ-ব্রেসিয়ারের নিচে লুকানো ভুখা শরীর।
মেয়েটি রাতের ফুল ছিল।
৫.সব কিছু বদলে যাচ্ছে
দিনে দিনে বদলে যাচ্ছে সব। মাঠ-ঘাট, চেনা-জানা বাজার, পথের ধারের পরিচিত চৌচালা বাড়িগুলো
পাড়ার যুবতী মেয়েরা বদলে গেছে খুব। একদিন লাল ফিতায় যারা বেঁধেছিলো কিশোরী চুলের খোপা
নরম কানের কাছে ভোরের শিশিরভেজা রক্তগোলাপ। আজকাল তারা বিলেতি ক্রিমের বদান্যতায় লাল
করে চুল, লুকিয়ে রাখে মুখের ভাঁজ। উঠতি বয়সের যুবকেরা পরে জোড়াতালিসর্বস্ব নতুন প্যান্ট।
আমাদের বাড়ির উঠোনগুলো এখন আর আগের মতো নেই। একদিন যেখানে শাশুড়ি-বৌয়ের খুনসুটি
উঁকুন মারা, কাঁথা সেলাই দেখা যেতো। বদলে গেছে শহরগামী বড় রাস্তাগুলো। কাদামাটির শরীরময়
ইট-পাথরের বিছানা পাতা। মানুষেরা সেখানে ইচ্ছাহীন লাশ হয়, শুয়ে থাকে নিথর দেহে।
দিনে দিনে সব বলদে যাচ্ছে। আমাদের বিবেক, চিন্তার ভূগোলক, মানুষে মানুষে প্রীতি ভালোবাসা আর
বিশ্বাসগুলো পোকায় খাওয়া নারকেলের আধুনিক সংস্করণ।
স্টাফ করেসপন্ডেট