কবর পাকা করাকে সাধারণত না জায়েজ বলা হয়। আবার অনেক সময় দেখা যায় পূর্ববর্তী বূযুর্গদের (পীর/ আওলিয়া) কবরগুলো প্রায় সবই পাকা করা। হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ(রহ.) এর আমলেও অনেক আলেমের কবর পাকা হয়েছে। এছাড়া হযরত শাহজালাল (রহ.), হযরত মইনুদ্দিন চিশতি (রহঃ) সহ অনেক পীর আওলিয়ার কবর পাকা। এ বিষয়ে ইসলামের প্রকৃত ব্যাখ্যা আসলে কি? খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিচের ব্যাখ্যাথেকে জেনে নিন-
بسم الله الرحمن الرحيم
রাসূল সাঃ কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন,
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: «نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ، وَأَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ، وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهِ
হযরত জাবির রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূল সাঃ কবরে চুনকাম করতে, কবরের উপর গৃহ নির্মাণ করতে, এবং কবরের উপর বসতে নিষেধ করেছেন। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৯৭০}
عَنْ أَبِي الْهَيَّاجِ الْأَسَدِيِّ، قَالَ: قَالَ لِي عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ: أَلَا أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِي عَلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ «أَنْ لَا تَدَعَ تِمْثَالًا إِلَّا طَمَسْتَهُ وَلَا قَبْرًا مُشْرِفًا إِلَّا سَوَّيْتَهُ
হযরত আবুল হাইয়াজ আসাদী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার হযরত আলী রাঃ আমাকে বলেন, আমি কি তোমাকে সেই কাজে পাঠাবো না, যে কাজে রাসূল সাঃ আমাকে পাঠিয়েছিলেন? ঐ কাজ এই যে, কোন মূর্তি দেখলে তা নষ্ট করে ফেলবে, আর কোন উঁচু কবর দেখলে তা সমান করে দিবে। {মুসলিম, হাদীস নং-৯৬৯}
ইমাম আবু হানীফা রহঃ কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন!
ইমাম মুহাম্মদ রহঃ তার সংকলিত কিতাবুল আসারে উল্লেখ করেছেন-
وَنَكْرَهُ أَنْ يُجَصَّصَ أَوْ يُطَيَّنَ، أَوْ يُجْعَلَ عِنْدَهُ مَسْجِدٌ، أَوْ عَلَمٌ، أَوْ يُكْتَبُ عَلَيْهِ، وَنَكْرَهُ الْآجُرَ أَنْ يُبْنَى
بِهِ أَوْ يَدْخُلَ الْقَبْرَ، وَلَا نَرَى بِرَشِّ الْمَاءِ عَلَيْهِ بَأْسًا، وَهُوَ قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ
আমরা [কবরকে] চুনকাম করা, পাকা করা, অথবা তার নিকটে মসজিদ নির্মাণ করা, ঝান্ডা টানানো, কোন কিছু লেখা মাকরূহ মনে করি। এবং আমরা কবরকে ইট দ্বারা পাকা করা, কবরে প্রবেশ করাকে মাকরূহ মনে করি। তবে কবরে পানি ছিটিয়ে দেয়াতে কোন সমস্যা নেই। এটাই ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর বক্তব্য। {কিতাবুল আসার লিমুহাম্মদ-২/১৯১}
ইমাম আবু হানীফা রহঃ ইন্তেকাল করেছেন ১৫০ হিজরীতে। ইমাম মুহাম্মদ রহঃ ইন্তেকাল করেছেন ১৮৯ হিজরী। এই দুই ইমাম মহোদয়ই কবর পাকা করাকে মাকরূহ বলেছেন। তাছাড়া ইমাম হাসান বিন আম্মার বিন আলী বিন আলী আশশুরুনবুলালী আলমিসরী ইন্তেকাল করেছেন ১০৬৯ হিজরী।
এমনিভাবে আল্লামা তাহের মাজমাউল বিহারের ৩/২২৬ নং পৃষ্ঠায়, ফাতাওয়ায়ে শামী ২/২৩৬ নং পৃষ্ঠায়, ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ ফাতহুল বারীর ৩/৫৫৯ নং পৃষ্ঠায়ও কবরকে পাকা করাকে মাকরূহ উল্লেখ করা হয়েছে।
যেখানে পরিস্কার ভাষায় হাদীসে ইরশাদ রয়েছে, গ্রহণযোগ্য ফুক্বাহায়ে কেরামগণ যুগে যুগে মাকরূহ বলেছেন। সুতরাং কোন বড় ব্যক্তির কবর পাকা থাকলেই সে কাজ জায়েজ হয়ে যাবে না।
সেই সাথে সবচে’ বড় কথা হল, যেসব মনীষীদের কবরকে পাকা করা হয়েছে, তারা নিজেরা কি কখনো তাদের পূববর্তী কোন বুযুর্গের কবরকে পাকা করেছেন? কিংবা তারা কি তাদের কবরকে পাকা করতে নির্দেশ দিয়েছেন?
তাছাড়া অনেক বুযুর্গানে দ্বীনের কবর ঘিরে প্রচুর পাপকর্ম করা হয়, গাঁজার আসর, গানের আসর বসানো হয়, বুযুর্গদের কবরের পাশে এসব গোনাহের কাজ করতে কি সেসব বুযুর্গরা আদেশ করে গেছেন?
এখন কেউ যদি মুইনুদ্দীন চিশতী রহঃ এর কবর পাশে গাঁজা খাওয়া হয় বলে, গাঁজা খাওয়াকে জায়েজ ফাতওয়া প্রদান করেন, তাহলে একথাটি ঠিক হবে?
দেখতে হবে কুরআন ও হাদীস কী বলে? ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার ভক্ত মুরিদান বা পরবর্তী ব্যক্তিরা কোন কাজ করলেই সেটি উক্ত বুযুর্গের কাজ বলে সাব্যস্ত হয় না। এসব বিষয় শরয়ী দলীলও হয় না।
সুতরাং হাদীসের দ্বারা এবং ফুক্বাহায়ে কেরামের মতামত দ্বারা পরিস্কারভাবে প্রমাণিত যে, কবরকে পাকা করা নাজায়েজ।