ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার সিটির এরিনাতে এক কনসার্টে বোমা হামলায় কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫৯ জন।
তাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সোমবার দিবাগত রাতে ওই কনসার্টে সঙ্গীত পরিবেশন করছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের গায়িকা আরিয়ানা গ্রান্ডে (২৩)। এর শেষের দিকে ওই বোমা হামলা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন কর্মকর্তা মনে করছেন এটা আত্মঘাতী বোমা হামলা। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে এটাকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে দেখছেন। জরুরি ভিত্তিতে তিনি মন্ত্রীপরিষদের বৈঠক আহ্বান করেছেন।
প্রকৃতপক্ষেই যদি এটা সন্ত্রাসী হামলা হয় তাহলে ২০০৫ সালের জুলাইয়ের পর এটাই বৃটেনে সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। ২০০৫ সালে লন্ডনের পরিবহন সিস্টেমে আত্মঘাতী বোমা হামলায় চারজন মুসলিমসহ কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হয়েছিলেন।
স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৩৫ মিনিটের দিকে ওই কনসার্টে সঙ্গীত পরিবেশন করছিলেন আরিয়ানা গ্রান্ডে। এ সময় ২১ হাজার দর্শকের মধ্যে উপস্থিত ছিল অনেক শিশু। আরিয়ানা গান শেষ করে আনার সঙ্গে সঙ্গেই বোমা বিস্ফোরিত হয়। কনসার্টে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন বলেন, তিনি এরিনা থেকে বের হয়ে আসছিলেন। এমন সময় বিকট শব্দ শুনতে পান। এরপরই শোনা যায় আর্তনাদ। মানুষজন স্রোতের মতো বেরিয়ে আসতে থাকে এরিনা থেকে। টুইটারে এ ঘটনার একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, কনসার্টে উপস্থিতদের বেশির ভাগই যুবক বা যুবতী। তারা কনসার্ট স্থল থেকে আর্তনাদ করতে করতে দৌড়ে বেরিয়ে আসছেন। অসংখ্য পিতামাতাকে দিশাহারা হয়ে পড়েন। তারা মরিয়া হয়ে সন্তানকে খুঁজতে থাকেন। অনেককে দেখা গেছে সামাজিক মিডিয়ায় সন্তানের ছবি ও সংশ্লিষ্ট তথ্য দিয়ে সহায়তা চাইছেন। কনসার্টে উপস্থিত ছিলেন ক্যাথেরিন ম্যাকফারলেন। তিনি বলেন, আমরা কনসার্ট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলাম। আমরা বহির্গমন দরজার কাছে যেতেই বিকট শব্দ শুনতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় আর্তনাদ। একজনের ওপর দিয়ে অন্যজন পালানোর পথ খুঁজছিলেন। বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই প্রকট ছিল যে মনে হয়েছিল হৃদপিন্ড উড়িয়ে নিচ্ছে। চারদিকে তখন সৃষ্টি হয় এক বিশৃংখল পরিস্থিতি। সবাই দৌড়াচ্ছিল। গায়িকা আরিয়ানা গ্রান্ডের মুখপাত্র বলেছেন, তিনি ভাল আছেন। তার কোন ক্ষতি হয় নি। পরে টুইটারে আরিয়ানা নিজেই লিখেছেন- আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। আমি ভীষণ ভীষণ দুঃখিত। এ হামলা নিয়ে কথা বলার মতো ভাষা নেই আমার। ওদিকে আর মাত্র আড়াই সপ্তাহ পরেই বৃটেনে জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে বলেছেন, এ ঘটনায় তিনি বেদনাহত। সমবেদনা প্রকাশ করেছেন নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি। সন্দেহজনক এই হামলার প্রেক্ষিতে নির্বাচনী প্রচারণা আপাতত স্থগিত রাখার প্রস্তুতিক নিচ্ছে ক্ষমতাসীন তার দল কনজার্ভেটিভ পার্টি। ম্যানচেস্টার চিফ কনস্টেবল ইয়ান হপকিনস বলেছেন, এ ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবেই দেখছে পুলিশ। এক্ষেত্রে তারা সহায়তা নিচ্ছেন সন্ত্রাস বিরোধী পুলিশের ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার। তিনি বলেছেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা যাবে না। ওদিকে এ হামলায় দায় তাৎক্ষণিকভাকে কোন পক্ষ স্বীকার করে নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এটাকে ২০১৫ সালে ফ্রান্সের বাটাক্লাঁ কনসার্টের হামলার সঙ্গে মিলিয়ে দেখছেন। ২০১৫ সালে প্যারিসে বাটাক্লাঁ কনসার্টে ওই হামলায় নিহত হন কমপক্ষে ১৩০ জন। এ হামলার দায় স্বীকার করে ইসলামপন্থি জঙ্গিরা। যুক্তরাষ্ট্রের দু’জন কর্মকর্মা বলেছেন, প্রাথমিকভাবে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে এটাকে আত্মঘাতী বোমা হামলা বলেই মনে হচ্ছে। ওদিকে ইসলামিক স্টেটের সমর্থকরা সামাজিক মিডিয়ায় এ হামলায় উল্লাস প্রকাশ করেছে। উল্লেখ্য, ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার তালিকায় বৃটেন রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে।
ফলে ম্যানচেস্টার সিটিতে এ ঘটনার দিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট