কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে বৃদ্ধা মাকে বাসস্ট্যান্ডে বসিয়ে রেখে চম্পট দিল তারই গুণধর ছেলে। হতভাগ্য ওই মায়ের বয়স প্রায় ৮০। পরনে একটা ময়লা সাদা সুতির শাড়ি। বয়সের ভারে স্মৃতিশক্তি খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে, এখন আর কোনো কিছুই ঠিকঠাক মনেও রাখতে পারেন না।
কাঁপা কাঁপা গলায় তাঁর অভিযোগ, চার ছেলের সুখের সংসারে বলতে গেলে তিনিই ছিলেন একমাত্র বোঝা। তাই মাথা থেকে বোঝা নামাতে বাসস্ট্যান্ডে তাঁকে একা ফেলে রেখে চলে গেল তাঁর ছেলে। ছেলেদের জানা আছে মায়ের বয়স হয়েছে তাই ঠিকানা হয়ত ঠিকঠাক বলতে পারবে না, তাই তাঁর আর বাড়ি ফেরারও কোনো সম্ভাবনা নেই। গভীর রাতে স্থানীয় মানুষ তাঁকে উদ্ধার করে।
বর্তমানে লক্ষ্মীদেবীর অস্থায়ী ঠিকানা মগরা গ্রামীণ হাসপাতাল। মঙ্গলবার রাতে অমানবিক এই বিষয়টি প্রথম নজরে পড়ে ত্রিবেণী এলাকার এক ব্যবসায়ীর। রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন গৌতম ব্যানার্জি। তিনি লক্ষ করেন ত্রিবেণী বাসস্ট্যান্ডে এক বৃদ্ধা একা বসে রয়েছেন।
শীতের রাতে কনকনে ঠাণ্ডায় বসে রীতিমতো কাঁপছেন। গায়ে কোনো শীতবস্ত্র ছিল না, কনকনে শীতে বাসস্ট্যান্ডে একা বসে কষ্ট পেতে দেখে ওই বৃদ্ধাকে সাহায্য করতে এগিয়ে যান গৌতমবাবু। ততক্ষণে কনকনে ঠাণ্ডায় অনেকটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। শীতে জবুথবু ওই বৃদ্ধা তাঁর নাম লক্ষ্মী সাঁতরা এইটুকু কথা বলতে পারলেও বাড়ির ঠিকানা সম্পর্কে জানানোর মতো অবস্থায় তিনি ছিলেন না।
গৌতমবাবু অনুমান করে তাঁকে একটি ভ্যান রিকশায় করে তাঁর বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্যে ত্রিবেণী বাঁধাঘাট এলাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত ওই ভ্যানচালক ত্রিবেণী বাঁধাঘাট, কালীতলাসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকায় বহু খোঁজাখুঁজির পরও ওই বৃদ্ধার বাড়ি খুঁজে পায় না।
অগত্যা ওই ভ্যানচালক তাঁকে আবার ফিরিয়ে আনে ত্রিবেণী বাসস্ট্যান্ডে। রাতেই আবার গৌতমবাবুর উদ্যোগে ওই বৃদ্ধাকে স্থানীয় ঝাউতলা কালীবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে কম্বল ও খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
কোনোরকমে লক্ষ্মীদেবীর রাত কাটে ওই কালীবাড়িতে। সকালে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা রাজা চ্যাটার্জি বিষয়টি জানান মগরা থানায়। পুলিস ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়ে মগরা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করে।
বুধবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরেও লক্ষ্মীদেবী তাঁর বাড়ির ঠিকানা পরিষ্কার জানাতে পারেননি। কখনও তিনি বলেছেন বাড়ি তেঘরিয়া, আবার কখনও বলছেন বাড়ি তেঁতুলতলায়।
তবে তিনি জানিয়েছেন, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দৈহিক ক্ষমতা কমেছে, আগের মতো আর কাজকর্মও করতে পারেন না। তাই এখন তাঁর চার ছেলে ও তাঁদের পরিবার আর তাঁকে পছন্দ করে না।
তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিকালে তাঁর মেজো ছেলে দিলীপ সাঁতরা তাঁকে বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে আসে। বাড়িতে ঠাকুর ঘর তৈরি করা হবে তাই মেজো ছেলে তাঁকে বলেছিল কয়েক দিনের জন্য কোনো আত্মীয় বাড়িতে তাঁকে রেখে আসবে। তাই মঙ্গলবার মাকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যাওয়ার উদ্দেশেই ঘর থেকে বেরিয়েছিল দিলীপ।
লক্ষ্মীদেবী বলেন ছেলের সঙ্গে তিনি দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তাই সঙ্গে কিছু খাবারদাবারও ছিল। তার পর লক্ষ্মীদেবীকে বাসস্ট্যান্ডে বসানোর পর তার মেজো ছেলে ‘এখনই আসছি’ বলে চলে যায়, তার পর রাত কেটে গেল, ছেলে আর তাঁকে নিতে এলো না।
নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট : ০২:০০ এএম, ০৮ জানুয়ারি ২০১৫, শুক্রবার
ডিএইচ