মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ ১টি হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করন। সরকার ও মানুষের দৌড় গোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইউনিয়ন পর্যায়ের উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে।
অন্যান্য উপজেলার ন্যায় চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায় ৪টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ৮টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র স্থাপন করেছে। নিয়ম অনুসারে ৪টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিটিতে ১জন ডাক্তার, ১জন সেকমো, একজন ফার্মাসিষ্ট, ১জন পিয়ন ও ১জন আয়া, ৮টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিটিতে ১জন ডাক্তার, ১জন ফার্মাসিষ্ট ও ১ জন পিয়ন থাকার কথা রয়েছে।
কিন্তু প্রায় ৪-৫ বছর এ কেন্দ্রগুলোতে কোন ডাক্তার নেই। অন্যান্য পদে দু’একজন থাকলেও তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে কাজ করাচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। এতে করে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামীণ জনপদের সাধারণ মানুষ। ওই সকল স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে ফেরত আসছে অসুস্থ্য গ্রামের সাধারন লোকজন।
সরেজমিনে গেলে পাথৈর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী স্থানীয় আমির হোসেন এ প্রতিনিধিকে বলেন- আগে এক সময় অসুস্থ্য হয়ে এ কেন্দ্রে ডাক্তার দেখিয়েছি, এখান থেকে কিছু ঔষুধও আমাদের দিয়েছিল। কিন্তু আজ ডাক্তার দেখাতে এসে শুনেছি গত ক’বছর এখানে ডাক্তার নেই। হাসপাতালটিতেও তালা ঝুলানো রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১০ সালে জাতীয় পর্যায়ে এডহক হিসেবে (ননক্যাডার) ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হলে উপজেলার ৪টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ৮টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয়। যেখানে ডাক্তাররা অন্তত: সপ্তাহে ৩ দিন বিভিন্ন গ্রাম থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করতেন, কিন্তু ডাক্তার নিয়োগের দু’বছর ক্রমে ক্রমে এর চিত্র পরিবর্তন হতে থাকে। একে একে সবগুলো স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাক্তররা অন্যত্র বদলী হয়ে চলে যায়। আর স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে তালা ঝুলতে থাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ ছালাহ উদ্দীন মাহমুদ বলেন- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রামীণ মানুষের দৌড় গোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে প্রতিটি উপজেলার ন্যায় কচুয়ায় ১২টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করেন। কিন্তু আমরা মানুষের দৌড় গোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্য পূরনে ব্যর্থ হচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, ডাক্তার নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলা ভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। সেই জেলা বা উপজেলার নিয়োগ প্রাপ্তরাই শুধু দায়িত্ব নিয়ে সেবা দিলে ডাক্তার স্বল্পতা থাকতো না।
এ কর্মকর্তা আক্ষেপ নিয়ে এ প্রতিনিধিকে উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে বলেন- কচুয়া উপজেলা থেকে নিয়োগ পাওয়া ডাক্তররা কোথায়? শুধুমাত্র এ উপজেলার নিয়োগ পাওয়া ডাক্তাররা নিজ এলাকায় কাজ করলে ডাক্তারের সমস্যাটা আর থাকতো না।
ডাক্তার সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন- সারাদেশেই ডাক্তার সংকট রয়েছে। সে ক্ষেত্রে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলিও ডাক্তার সংকটে ভুগছে। সেদিক বিবেচনা করে সরকার ৩৯ তম বিসিএসএ প্রায় ১০ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দিচ্ছে।
আশা করি আগামী দু’মাসের মধ্যে আমরা পর্যাপ্ত ডাক্তার পাবো। তখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার সংকট কাটিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়েও ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রতিবেদক:জিসান আহমেদ নান্নু
২৭ এপ্রিল ২০১৯