কচুয়া

কচুয়ায় শিক্ষা বিস্তারে ‘আলো ছড়াচ্ছে বিএনডি ফোরাম’ স্কুল

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার বাঁচাইয়া-নয়াকান্দি ডেভেলপমেন্ট (বিএনডি) ফোরাম নামক সংগঠনটি এলাকার সুবিধা বঞ্চিত হত-দরিদ্র ছেলে মেয়েদের জ্ঞানের আলোয় মুখ ফেরাতে ‘বিএনডিএফ’ স্কুল প্রতিষ্ঠা করে তাদের পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছে।

২০০৬ সালে ১১নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনের মাধ্যমে নিরক্ষর ও জেলে অধ্যুষিত বাঁছাইয়া-নয়াকান্দি গ্রামের অন্তত ১’শ ৭০ জন শিক্ষার্থীকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে ‘বিএনডিএফ’ স্কুলের এ উদ্যোগ চলমান রয়েছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, এলাকার কৃতি সন্তান কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান দুলাল নন্দী, বিএনডি ফোরামের সভাপতি সুজন সরকারসহ একদল শিক্ষিত যুবক এ বিদ্যালয়টির কার্যক্রম এগিয়ে নিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

কচুয়া উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম, কচুয়া-সাচার আঞ্চলিক সড়কের পাশে অবস্থিত রাস্তার দু’ধারে দুটি গ্রামের নাম নয়াকান্দি ও বাঁচাইয়া। এ দু’গ্রামে প্রায় ৩ হাজার জনগোষ্ঠীর বসবাস।

কিন্তু উল্লেখিত গ্রাম দু’টির বেশির ভাগ লোকই অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত। এদের উপার্জনের তেমন কোন অবলম্বন নেই।

এসব জনগোষ্ঠীর সর্বোচ্চ ৩০ ভাগ লোক উচ্চ শিক্ষিত। এসব শিক্ষিত যুবকরা তাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় কোমল মতিদের শিক্ষা বিস্তারের চাহিদা মিটাতে সংগঠনের নামে এ বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন।

২০০৮ সালে প্লে থেকে ৪র্থ প্রাথমিক শাখা ও ২০১৫ সালে ৬ষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির মাধ্যমিক শাখার কার্যক্রম চালু করা হয়। শুরু থেকে প্লে গ্রুপ থেকে কেজি ওয়ান পর্যন্ত পড়াশোনা চালু করা হয়।

বর্তমানে এ অবস্থা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উত্তীর্ণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে এসএসসি পর্যন্ত উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। এছাড়া কেজি ওয়ান পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষরতা পাঠ্যজ্ঞান শেষ করে তাদের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভর্তি করনের দায়িত্ব নিয়েছে বিএনডি ফোরাম।

বাঁচাইয়া তালুকদার বাড়িতে অবস্থিত প্রথমে বাঁশের বেড়া ও টিনের ছাউনীর এ বিদ্যালয়টি ধীরে ধীরে আরো একটি টিনসেট ঘর উত্তোলনসহ স্থায়ী জায়গায় ভবন নির্মানের কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে।

বর্তমানে বিএনডি ফোরাম কিন্ডার গার্টেন শাখায় ১’শ ১২জন ও মাধ্যমিক শাখায় ৫১জনসহ ১’শ ৬৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আর তাদের পাঠদানের দায়িত্বে রয়েছেন ১৩জন উদীয়মান শিক্ষক।

এদের বেশির ভাগই উচ্চ মাধ্যমিক ও মাস্টার ডিগ্রি পাস। তারা এসব ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছেন।

এছাড়া বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শিক্ষার পাশাপাশি সরকারি বেসরকারি, জাতীয় ও বিভিন্ন কর্মসূচীগুলো যথাযথ ভাবে পালন করে আসছে। বিশেষ করে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য লাইব্রেরী স্থাপন, কম্পিউটার ক্লাব, ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, বৃক্ষরোপণ, মৎস্য অবমুক্তকরণ, স্বেচ্ছাসেবক, বোডিং, ব্লাড কালেকশন, দুর্নীতি প্রতিরোধ অভিযান, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন, গুণীজন সংবর্ধনা, অভিভাবক সমাবেশ, বিনামূল্যে বই বিতরণ, জন্মাষ্টমী পালন, ঈদ পূনর্মিলনী, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান, বালবিবাহ-মাদক প্রতিরোধ, বিতর্ক প্রতিযোগীতা, ফ্রি মেডিককেল ক্যাম্প, দেয়ালিখা প্রকাশসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিদ্যালয়টিতে প্রবেশ ধারে বেশ কয়েকটি সু-সজ্জিত সাটানো বিলবোর্ড মানুষকে মুগ্ধ করে তুলেছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মানিক চন্দ্র সরকার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘শিক্ষার্থীদের ক্লাসের পড়া ক্লাসেই শেষ করা হয়। ফলে উপজেলা কিন্ডার গার্টেন ও বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ট্যালেন্টপুল ও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়ে আসছে। বিশেষ করে আমাদের শিক্ষকরা পড়া লেখার বিষয়ে সব সময় আন্তরিক রয়েছি। শিক্ষকদের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

বিএনডি ফোরামের সভাপতি সুজন সরকার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘পৃথিবীর সৌন্দর্য তথা উন্নয়নে আমৃত্যু কাজ করে যাওয়ার জন্যই এ সংগঠনের সদস্যদের মূল অঙ্গীকার। অন্ধকার থেকে আলোর জগতে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে এ বিদ্যালয়টি অজো পাড়াগায়ে স্থাপন করা হয়েছে।’

বিদ্যালয়ের যাবতীয় কার্যক্রম ও ফলাফলে দ্বারা এগিয়ে নিতে তিনি প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন।

: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:০০ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ

About The Author

প্রতিবেদক- জিসান আহমেদ নান্নু, কচুয়া
Share