চাঁদপুরের কচুয়ায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে শহীদ স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ তলা ভবন নির্মাণ কাজে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভবনে নির্মাণ কাজে চালনি ছাড়াই বালু ও মাটি মিশ্রিত নিন্মমানের পাথর ব্যবহার, রড কম দেয়া, শিডিউল অনুযায়ী কাজ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশিরসহ স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন তারা।
এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার কচুয়া উপজেলা সদরে মানববন্ধন করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মানববন্ধনে তারা অবিলম্বে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও শিক্ষা প্রকৌশলের প্রকৌশলী নূর আলমের প্রত্যাহার দাবি জানিয়েছেন।
দুপুরে কচুয়া বিশ্বরোড এলাকার আকানিয়া বাাইপাস সড়কে সর্বস্থরের জনগনের আয়োজনে ব্যানারে এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি সাঈদ মোরশেদ পলাশ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক মো.মোফাচ্ছেল হোসেন খান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইব্রাহিম খলিল বাদল, যুবলীগ নেতা আবুল বাশার নবু, মোস্তফা কামাল, গাজী মনির হোসেন প্রমুখ।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারের যোগসাজসে স্কুল ভবনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণে এ ধরনের অনিয়ম মেনে নেয়া যায় না। আমরা ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই অনিয়ম দেখে আসছি। বিষয়টি সম্পর্কে ব্যবস্থা নিতে একাধিকবার উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করি। কিন্তু তাতেও কাজে অনিয়ম বন্ধ হয়নি। এতে করে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে স্থানীয়রা। সবশেষ স্থানীয়দের চাপে পড়ে ভবন নির্মাণে অনিয়ম বন্ধ করার আহবান জানান উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশির। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে স্থানীয় লোকজন। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় তার বিরুদ্ধে স্বড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা এই মিথ্যা মামলা থেকে উপজেলা চেয়ারম্যানের নিঃস্বর্থ মুক্তি চাই।
কচুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জি. ইব্রাহীম খলিল বলেন, এই স্কুল ভবনের কাজের গুণগত মান খুবই খারাপ। এখানে প্রচুর অনিয়ম হয়েছে। রাতের আধারে ঢালাই কাজ করা হয়। পাথর, বালু, রড নি¤œমানের। স্টিমিট অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না। এটি নিয়ে স্থানীয়রা বহুবার অভিযোগ জানিয়েছেন। যখন ইঞ্জিনিয়ার সাইট পরিদর্শনে আসেন তখন স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় উপজেলা চেয়ারম্যান তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নিলে আরও বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারতো। তাই আমরা দাবি করছি, স্কুল ভবন নির্মাণ কাজে অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করা হোক।
কচুয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো.কামাল হোসেন বলেন, স্কুল ভবনটি নির্মাণে অনিয়মের কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারকে বারবার বলা হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। এ কারণে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন স্থানীয় লোকজন। তিনি বলেন, জনরোষ থেকে উপসহকারী প্রকৌশলীকে বাচাতে উপজেলা চেয়ারম্যান তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছেন।
মানববন্ধনে অংশ নেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজালাল প্রধান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোফাচ্ছের খান, কচুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন সবুজসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা লীগের নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশলের উপসহকারী প্রকৌশলী নূর আলম বলেন, মাটি মিশ্রিত যে পাথরের অভিযোগ এসেছে তা আমরা দেখেছি। সেগুলো সাইটে আনার পর আমরা তা ব্যবহার না করার নির্দেশনা দিয়েছি। তাছাড়া যেসব অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ২৩ জুলাই ২০২০