পাইপ লাইন গ্যাস ও বিদ্যুৎ বর্তমানে কচুয়ার গ্রাহকদের গলার কাঁটা বা বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। কচুয়াবাসী পাইপ গ্যাস ব্যবহার করতে পারছে না, আবার ছাড়তেও পারছেন না। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গ্যাস বন্ধ থাকে। মাঝে-মধ্যে দুপুর ১টার দিকে কিছু সময়ের জন্য আসলেও গ্যাসের চাপ এত কম থাকে যে রান্নার কাজ চলে না। কচুয়ায় গ্যাসের সমস্যাটি ২০১৫ থেকে শুরু হয়ে ৫ বছর ধরে ঝুলে আছে। অতি প্রয়োজনীয় সময়ে গ্যাস বন্ধ থাকায় বেশিরভাগ গ্রাহক পাইপ গ্যাসের পাশাপাশি সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করছেন।
এতে কচুয়ার গ্রাহকদের প্রতিমাসে ৯৭৫ টাকা (ডাবল বার্নার গ্যাস বিল) জলে যাচ্ছে। মুখরোচক হলেও কথিত আছে গ্যাসের সমস্যাটি নাকি আকানিয়ার উত্তর পাশে নাই। লোকমুখে আলোচিত গুলবাহার হীমাগার গ্যাস দিয়ে পরিচালনার কারনে আকানিয়ার দঃ অংশে গ্যাসের চাপ কম।
২০১৭ সালে কচুয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচনের পর নির্বাচিত সভাপতি জাকির হোসেন বাটা ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ গ্যাস সমস্যা সমাধানে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেন। তারা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেন। শোনা যায় সেই থেকে কচুয়া বাজার পরিচালনা কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয। তারপর বিষয়টি আর এগোয়নি। সাংবাদিকরা সমস্যাটি নিয়ে প্রায়শই লিখে যাচ্ছেন। কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।
বাংলাদেশের ৫টি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর মধ্যে বাখরাবাদ একটি। পেট্রোবাংলার অধীনস্ত বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (বিজিডিসিএল) বৃহত্তর নোয়াখালী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর অঞ্চলে গ্যাস সঞ্চালন ও বিপণন করে থাকেন। এতদাঞ্চলে তাদের আবাসিক গ্রাহক ৪ লক্ষ ৮৮ হাজার ৭১৩ জন।
কচুয়ার গ্যাস সঞ্চালন লাইনটি এসেছে মেঘনা-বাখরাবাদ গ্যাস সঞ্চালন লাইন থেকে। লাইনটি বাঞ্ছারামপুর, হোমনা, তিতাস, গৌরিপুর হয়ে কচুয়া এসেছে। কচুয়ার গ্যাস গ্রাহকদের যাবতীয় কার্যক্রম গৌরিপুর অফিস থেকে সম্পন্ন হয়।
গৌরিপুর অফিস ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) জিয়াউল হকের সাথে কচুয়ার গ্যাস সমস্যার কথা বললে তিনি জানান, এ বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। কচুয়ায় গ্যাস সঞ্চালনের যে লাইনটি গৌরিপুর হয়ে গেছে তা ৪ ইঞ্চি ডায়ামিটার পাইপ। এ পাইপে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। পাইপ পরিবর্তনের বিষয়টি অনেক ব্যয়বহুল, প্লানিং ডিপার্টমেন্ট ও মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। তবে কালিয়াপাড়া থেকে একটি প্যারালাল লাইন নিয়েও সমস্যার সমাধান করা যায়। এ বিষয়টিও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সমাধান সম্ভব।
এদিকে বার বার কচুয়ার বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান জন্য গ্রহকরা দৌড় ঝাঁপ দিলেও ডিজিএম বাবু তর্ক বিতর্ক ১০০% বিদ্যুতায়ন আর বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয়ে পুরষ্কার পাওয়ার দান্ধয়। বিদ্যুতের ভেলকিবাজি, মিটারে অতিরিক্ত বিল, মিটার সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও বিল প্রদর্শন, সরজমিনে মিটার রিডার না গিয়ে আন্দাজে বিল তেরী, মিটার টেস্টে ফি রেখে মিটার টেস্টিং না করাসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে কচুয়া পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিস-১ এর। যেখানে আগে মিটারের নীট চার্জ ছিল ৫০-৭০টাকা সেখানে এখন কিনা মিটারে সার্ভিস চার্জ ৬০টাকা, মিটার ভাড়া ১০,ভ্যাট রিভ্যাট জরিমানা আরো কত কি?তার ৩০ টাকার পূন সংযোগ ফি ১২০০টাকা।
এ যেন টাকা চাহিবা মাত্র দিতে বাধ্য থাকিবে জোড় করে হলেও আপনাকে হাসতেই হবে। কচুয়া মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের ২১২৫ মিটারে করোনা মহামারীর আগে যখন দোকান চলমান ছিল ফেব্রুয়ারী মাসে বিল আসে ১২৭টাকা, মার্চ, এপ্রিল,মে,জুন লক ডাউনে দোকান বন্ধ অবস্থায় বিল আসে- মার্চ-৩৬০, এপ্রিল -৪৩০, মে-৫৬০ ও জুন মাসে ৪৬০টাকা। যেই মিটারে বিগত ২/৩বছরে ১৫০ টাকার উপরে বিলই আসে না।
ডিজিএম কচুয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,অভিযোগ করে যান আমরা খতিয়ে দেখব। অর্থাৎ গ্রাহক অভিযোগ করলেই পাচ্ছে ফ্রি উপদেশ বেশি করে আলু খান ভাতের ওপর চাপ কমান, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হন এনার্জি লাইট ব্যবহার করুন ইত্যাদি।
কচুয়ার উন্নয়নের রূপকার ড.মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপি মহোদয় (১৯৯৬-২০০০) আওয়ামী লীগের শাসনামলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। সে সময়ে তিনি কচুয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন। তার সময়ের সর্বশেষ কাজ ছিল কচুয়ায় গ্যাস সঞ্চালন লাইন সংযোজন। দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করে তিনি গ্যাস উদ্বোধন করেন। এ দিকে শত ভাগ কচুয়ার বিদ্যুৎ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমান সমস্যার সমাধানে কচুয়ার জনগণের শেষ ভরসাস্থলও তিনি।
কচুয়ার জনগণ মনে করেন এমপি মহোদয় উদ্যোগ নিলে গ্যাস ও বিদ্যুতের কোন সমস্যাই থাকবেনা সব সমস্যাই সমাধান সম্ভব।
করেসপন্ডেট,১৩ সেপেটম্বর ২০২০